হাওড়া: হাওড়ার আমতা থানা এলাকার ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজ্য রাজনীতি। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর, ডিআইডি সিআইডি জ্ঞানবন্ত সিংয়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল তদন্ত শুরু করেছে। যদিও আনিসের বাড়িতেই ঢুকতে পারেননি সিটের সদস্যরা।
জানা গিয়েছে, সোমবার রাত ১১ টা নাগাদ হাওড়ার আমতা থানায় উপস্থিত হন সিটের সদস্যরা, এরপরই দীর্ঘ সময় তারা সেখানে বিশ্রাম নিয়ে গভীর রাতে আনিস খানের বাড়িতে যাওয়া সিদ্ধান্ত নেন। যদিও ইতিমধ্যে খবর আসে আনিসের বাড়িতে তার পরিবারের লোকেরা ঘরের দরজা তালা দিয়ে দিয়েছে এবং গ্রামের মানুষ তারাও রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। তাদের একটাই বক্তব্য মিডিয়া এবং সিআইডি ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেবেন না। অতএব বাধ্য হয়েই রাত ২ টো নাগাদ। সিটের সদস্যরা কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
আনিস খানের পরিবার তাঁর মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দায়ী করেছে। সিবিআই তদন্তের দাবী জানিয়েছেন আনিসের বাবা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনিসের বাবার সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এবং আত্মীয়দের চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর বাবা সালেম খান চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং অসুস্থতার কারণে রাজ্য সচিবালয়েও যাননি।
আনিসের বাবা জানান, তারা বিচার চায়। তিনি বলেন, 'প্রশাসনে আমার আস্থা নেই, তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর আস্থা আছে। আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পাব।' পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায় মুখ্যমন্ত্রীর দূত হিসাবে আমতা পৌঁছেছিলেন, কিন্তু স্থানীয় জনগণের বিরোধিতার মুখোমুখিও হন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা খুনিদের গ্রেফতারের দাবী জানায়।
এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায় বলেন, 'ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা পরিবারের সাথে আছি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তার সঙ্গে আছেন। সময় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করতে চান।
উল্লেখ্য, সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকার সুষ্ঠু তদন্ত করবে। আমি আগেই কথা বলেছি। ডিজির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ইতিমধ্যে ফরেনসিক রিপোর্ট তলব করেছে। ঘটনাটি দুঃখজনক। কোনও মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়।"
এদিকে এমন খবরও সামনে এসেছে,,পকসো আইনে আনিসের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। হাওড়া গ্রামীণ পুলিশ সুপার সৌম্য রায় দাবী করেছেন যে, আনিসের বিরুদ্ধে আমতা এবং বাগনান থানায় বহু মামলা রয়েছে। তার নামে চারটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশের দাবী। এর মধ্যে আমতা থানায় তিনটি ও বাগনান থানায় একটি।
প্রসঙ্গত, ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যুর পরে, বাংলার রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এবং বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস ক্রমাগত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও আসামী গ্রেফতার হয়নি। উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা লোক ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে আনিসকে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ। তারপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্যের রাজনীতি। দোষীদের শাস্তির দাবীতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে। মঙ্গলবারও আনিস মৃত্যু নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
No comments:
Post a Comment