আর্থিক তছরুপের অভিযোগে কলকাতা সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় অভিযান চালাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি)। শুক্রবার সকালের দিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরের তিনটি জায়গায় অভিযান চালায় ইডি’আধিকধািরিকরা। অশোকনগরের যে তিন জায়গায় অভিযান চালানো হয় এবং যাদের সন্ধানে ইডির এই অভিযান- তাদের মধ্যে অন্যতম হল মৎস ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধা, প্রণব কুমার হালদার এবং স্বপন মিত্র। অশোকনগরের পাশাপাশি কলকাতাতেও এই তিন জনের বিভিন্ন ঠিকানায় অভিযান চালায় ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাতে বেশ কিছু নথিও উদ্ধার করে তারা।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর এই তিনজনই বাংলাদেশের পলাতক রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার)-এর পরিচিত ও সহযোগী। ইতিমধ্যেই পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার সহ একাধিক মামলাও দায়ের করা হয়েছে বাংলাদেশে। এবার তার ও সহযোগীদের আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির খোঁজে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাদের সন্দেহ বাংলাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে পি.কে.হালদারের জালিয়াতের জাল বিস্তৃত এই রাজ্যেও।
এদিন সাত সকালে একাধিক জায়গায় ইডি’র অভিযান চালাতেই বেআইনি আর্থিক লেনদেন, ব্যাঙ্ক জালিয়াতি, অবৈধ পাচারের ঘটনাটি সামনে আসে। এদিন ওই তিনজনের বাড়ি থেকেই ইডি আধিকারকরা বেশ কিছু নথি সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে স্বপন মিত্র নামে এক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এবং তাকে সাথে নিয়ে ইডির আধিকারিকরা আরও বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে এই স্বপন মিত্রই পি কে হালদারের হাওলার অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। কিভাবে হাওলার মাধ্যমে এদেশে টাকা আসতো, কোন কোন ব্যবসায় অর্থ খাটানো হতো-এই সব বিষয়গুলিই মূলত জানার চেষ্টা চালাচ্ছে ইডি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী বলে পরিচিত মৎস্য ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধা। মৎস্য ব্যবসার আড়ালেই হাওলার মাধ্যমে এই দেশে অর্থ নিয়ে আসতেন এবং সেই অর্থ লাগানো হত জমি কেনার কাজে। হাওলার মাধ্যমেই কোটি কোটি অর্থ বাংলাদেশ ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে খাটাতো সুকুমার। অন্তত প্রাথমিক তদন্তে এমনই জানতে পেরেছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। অশোকনগরে তার নামে ও বেনামে একাধিক বাড়ি-দোকান রয়েছে বলে জানা গেছে। আদতে বাংলাদেশি সুকুমার মৃধার ব্যবসায়ে অনেক প্রভাশালী ব্যক্তিরাই অর্থ খাটাতেন। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার এক মন্ত্রীর সাথেও তার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল জানা গেছে।
এদিন সকালে অশোকনগর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুকুমারের বাড়ি ইডির আধিকারিকরা পৌঁছলেও তার খোঁজ মেলেনি। এদিন তার বাড়ির ফটক খুলে দেন সুকুমারেরই আত্মীয় সঞ্জীব হাওলাদার। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি জানান, ‘মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে অশোকনরের বাড়িতে আসতেন সুকুমার। শেষবার তিন বছর আগে ওই বাড়িতে এসেছিলেন। বাড়ির চাবি সঞ্জীবের কাছেই রেখে গিয়েছিলেন সুকমার। এদিন তার খোঁজেই ইডির আধিকারিকরা এসে বাড়ি খুলতে বলেন এবং সেই মতো সঞ্জীব দরজা খুলে দেন। যদিও সঞ্জীবের দাবী, বাড়ি থেকে সন্দেহজনক কিছুই পান নি তদন্তকারী অফিসারেরা। তবে বাংলাদেশে সুকুমারের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে আরেক অভিযুক্ত পি.কে. হালদারের আত্মীয় প্রণব হালদারের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। অশোকনগরের নবজীবন পল্লীতে প্রণবের প্রাসাদসম বাড়িতে অভিযান চালালে কার্যত হতবাক হয়ে যান অদন্তকারী অফিসারেরা। প্রণবের দুই পুত্রকেও দীর্ঘক্ষণ জেরা করছে ইডি। নিজে প্রাক্তন সরকারি কর্মী এবং এক ছেলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত, দ্বিতীয়জন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। এমন এক পরিবারের চার বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এই প্রাসাদ সমান বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি, রাজ্যে আন্তর্জাতিক হাওলা চক্র অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিষয়টি বাংলাদেশের তরফে ভারত সরকারকেও জানানো হয়। এরপরই সক্রিয় হয়ে ওঠে ইডি। সেক্ষেত্রে আর্থিক তছরুপের মামলায় জড়িত সন্দেহে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তাদের সহযোগীরা এই রাজ্যেই আত্মগোপন করে থাকার সম্ভাবনা থাকায়, সেই সব সম্ভাব্য স্থানগুলিতেই ইডি’র এই অভিযান। এদিন বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এই অভিযান চালানো হয়।
No comments:
Post a Comment