সারা দুনিয়া বালিশে মাথা দেওয়া মাত্রই নিদ্রাদেবীর নিশ্চিন্ত আশ্রয় পায়, কেবল আপনারই চোখে ঘুম নামে না? এ যে কত বড়ো অশান্তি, তা যাঁরা এর ভুক্তভোগী তাঁরা ভালোমতো জানেন। এক-আধদিন রাত জাগা এক ব্যাপার, আর দিনের পর দিন এই সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকাটা আর এক যন্ত্রণা। বিশেষ করে যাঁরা জানেন যে পরদিন সকালে উঠেই কাজে বেরোতে হবে এবং পারফরম্যান্সে কোনওরকম ঘাটতি এলে কর্মক্ষেত্রে কেউ আপনার ইনসমনিয়ার সমস্যার কথা শুনবেন না।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরনোর জন্য অনেকেই ঘুমের ওষুধের সাহায্য নেয়, এবং এটাও খুব সত্যি যে ইচ্ছে আর উপায় থাকলে ঘুমের ওষুধের গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। তবে যাঁরা বহুদিন ধরে সিডেটিভ খাচ্ছেন, তাঁরা এটাও মনে রাখবেন যে ঘুমের ওষুধ কিন্তু অ্যাডিকটিভ এবং আপনার নেশাটা চট করে ছাড়বে না। ক্ষেত্রবিশেষে উইথড্রয়াল হতে পারে, আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে হয়তো। কিন্তু তার আগে কতগুলো ঘরোয়া সমাধান ট্রাই করে দেখুন।
মনে রাখবেন, মানুষ নিশাচর প্রাণী নয়। তাই আপনি যতই মাঝরাত পর্যন্ত জেগে দরকারি কাজকর্ম সারার অভ্যেস তৈরি করুন না কেন, তা একদিন শোধ তুলবেই! আপনার শরীরের ঘড়ি কার্যকর হয় সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ঝিমিয়ে পড়ার কথা। তাই বেশি রাত করে শোওয়ার অভ্যেসটা আগে বদলান। যাঁরা নাইট শিফটে কাজ করেন, তাঁদের সত্যি কিছু করার নেই, বাকিরা কিন্তু প্রতি রাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে শুতে যাওয়ার অভ্যেস তৈরি করতেই পারেন।
ইদানীং যেহেতু মোবাইল ফোনই বিনোদনের মুখ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে, তাই বিছানায় আধশোয়া হয়ে রাতের পর রাত সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ়ের একটার পর একটা এপিয়োড দেখাটাও মানুষের নিত্যদিনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। সে সব কিছু না থাকলে আছে সোশ্যাল মিডিয়া চেক করা বা পরিচিতদের সঙ্গে চ্যাট করার অভ্যেস। এর প্রত্যেকটিই কিন্তু আপনার ঘুমের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যে সমস্ত ডিভাইস থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয়, তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘণ্টা আগে থেকে।
ডিনার সারুন ঘুমের জন্য নির্ধারিত সময়ের অন্তত দু’ ঘণ্টা আগে। তার পর খানিকটা পায়চারি করলে খাবার হজম হবে তাড়াতাড়ি। অনেক সময় অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণেও ঘুমের অসুবিধে হতে পারে। সামান্য ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে হালকা উষ্ণ জলে স্নান করতে পারেন, পান করতে পারেন ক্যামোমাইল চা। খুব নিচু ভলিউমে শুনতে পারেন পছন্দের মিউজ়িক। এগুলি ঘুমের আমেজ ঘনিয়ে আনে। নির্দিষ্ট সময়ে আলো নিভিয়ে ঘুমের চেষ্টা করতেই হবে। প্রথমদিকে অসুবিধে হলেও হাল ছাড়বেন না, মাসখানেকের মধ্যেই আপনার শরীর এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এই পর্যায়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ধীরে ধীরে ঘুমের ওষুধের ডোজ় কমানোর চেষ্টাও শুরু করুন।
ঘুমের ওষুধ রাতারাতি বন্ধ করলে নানা ধরনের উইথড্রয়াল হয়। হয়তো রাতের পর রাত ঘুম আসবে না, শরীরে অস্থির ভাব দেখা দেবে, মাথা ঘুরবে, ক্লান্তির চাপে কাহিল লাগবে। যাই হোক না কেন, হাল ছাড়লে চলবেন না। এই পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না, এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ থাকুন। তবে সব সময়েই প্রশিক্ষিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলাটা ভালো। ক্ষেত্র বিশেষে সাইকায়াট্রিস্টের পরামর্শও কাজে দেয়।
No comments:
Post a Comment