ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত, ভীত বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তাঁর আশঙ্কা সুযোগ পেলে তাকেও মৌলবাদীরা হত্যা করতে পারে।
শুক্রবার আমেরিকার পশ্চিম নিউইয়র্কের একটি প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মঞ্চে আক্রান্ত হন রুশদি। চৌতাকুয়া ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় আচমকা মঞ্চে উঠে রুশদিকে ছুরিকাঘাত করে এক ব্যক্তি। গুরুতর আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন 'স্যাটানিক ভার্সেস' এর লেখক। এর পরেই তাকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য 'স্যাটানিক ভার্সেস' বইটির কারণেই ১৯৮০ দশক থেকে ঘরে বাইরে প্রাণ নাশের হুমকি পেয়েছেন ৭৫ বছর এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক। এমনকি সরকারিভাবে ইরান সরকারের তরফে রুশদির ওপর মৃত্যুর হুমকি রয়েছে বলে জানা যায়।
ঠিক একই পরিস্থিতি তসলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রেও। ১৯৯৩ সালের 'লজ্জা' প্রকাশিত হওয়ার পরেই ইসলামপন্থীদের রোষানালে পড়েন তসলিমা। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাড়া হয় তিনি। এরপরই কখনও সুইডেন, কখনও যুক্তরাষ্ট্র, কখনও ভারত-এই ছিল তার ঠিকানা। বর্তমানে দিল্লীতে একটি অজানা ঠিকানায় বসবাস করছেন তিনি।
সেই প্রশ্নের উত্তরেই একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম (ইন্ডিয়া টুডে) সাক্ষাৎকারে তসলিমা জানান, "বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যে নির্যাতন নেমে এসেছিল, সেই ঘটনা আমি আমার বইতে তুলে ধরেছিলাম। ১৯৯৩ সালে আমার "লজ্জা" বইটি প্রকাশ পায়। সেই বইটি কখনও ইসলামের বিরুদ্ধে ছিল না। কিন্তু মুসলিম মৌলবাদীরা আমার ওপরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল এবং আমার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিল। ৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে আমি মৌলবাদীদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়ালাম। বাংলাদেশের বহু ব্লগার, মুক্তমনা লেখকদের মৌলবাদীদের হামলা শিকার হতে হয়েছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এটা নয় যে, অনেক বছর আগে আমার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা হয়েছিল বলে মৌলবাদীরা সেটা ভুলে গেছে। আসলে তারা কখনও এটা ভুলতে পারে না। তারা যদি কখনও সুযোগ পায়, তাহলেই আমাকে হত্যা করবে।"
রুশদির উপর হামলার ঘটনায় শুক্রবার ট্যুইটও করেন তসলিমা। সেখানে তিনি জানান, "নিউইয়র্কের রুশদির ওপর হামলার ঘটনা জেনেছি। আমি সত্যিই শকড। আমি কখনই ভাবতে পারিনি যে, এরকম ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। বেশ কিছু অনেকদিন ধরেই তিনি পশ্চিমার দেশে বসবাস করছেন এবং ১৯৮৯ সাল থেকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে ছিলেন। তাই তিনি যদি হামলার শিকার হন, তাহলে যে কারও ওপরেই হামলা হতে পারে। আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন।"
No comments:
Post a Comment