ঝাঁ চকচকে থিমের বাহার, লক্ষ্মী গ্রামের লক্ষ্মী পুজোয় আজও অটুট ঐতিহ্য - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday 10 October 2022

ঝাঁ চকচকে থিমের বাহার, লক্ষ্মী গ্রামের লক্ষ্মী পুজোয় আজও অটুট ঐতিহ্য


কোজাগরী পূর্ণিমাতেই শুধু  নয়, দেবী দশভূজার মতোই তিন দিন ধরে চলে লক্ষ্মী পুজো চলে হাওড়ার খালনা গ্রামে। গ্রাম জুড়ে সাড়ম্বরে ধনদেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন সকলে। গ্রামীণ হাওড়ার 'লক্ষ্মী গ্রাম' খালনা। লক্ষ্মী পুজোর রাতে আলোয় ঝলমল করে ওঠে হাওড়ার লক্ষ্মী গ্রাম।


এই গ্রামে দুর্গা পুজো নয়, লক্ষ্মী পুজোই মূল উত্‍সব। বছরভর লক্ষ্মী পুজোর দিকেই তাকিয়ে থাকেন গ্রামবাসীরা। লক্ষ্মী পুজোতেও তাই থিম। বিষয় ভাবনায় অভিনবত্বের ছোঁয়া এই খালনা গ্রামে। প্রায় তিনদিন ধরে চলে এই পুজো। রাজ্যে কয়েকটি স্থানে বিশেষ বিশেষ পুজোর রোশনাই সেরা। যেমন চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা কিংবা বাঁশবেড়িয়ার কার্তিক পূজো অথবা বারাসতের কালী পুজো। এদের যেমন নাম, ঠিক একইভাবে রাজ্যে প্রসিদ্ধ হাওড়ার জয়পুর‌ থানা এলাকার খালনা গ্রামের লক্ষ্মী পুজো।


এখানে দুর্গোৎসবের সময় থেকেই সাজো সাজো রব পড়ে যায়। আর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর পূর্ণিমাতে চন্দ্রালোকিত রাতে ঝলমলিয়ে ওঠে এই লক্ষ্মী গ্রাম। পুজোর জৌলুস অনায়াসে টেক্কা দেবে কলকাতার যেকোনও বারোয়ারি দুর্গা পূজাকে। এখানে বাঙালীর প্রিয় দুর্গা পূজার মতোই দেবী লক্ষ্মী স্বমহিমাতে বিরাজমান। তাই দুর্গা প্রতিমার নিরঞ্জন পর্বের পর রাজ্যের অন্য যেকোনও পূজা প্যান্ডেলে নমো নমো করে সারা হয় লক্ষ্মী পূজো। এটাই রীতি সর্বত্র। কিন্তু এ গ্রামের লক্ষ্মী আরাধনা সারা বাংলায় স্বতন্ত্র। সেই কারণেই  এই গ্রামকে গসকলে এক নামে 'লক্ষ্মী-গ্রাম' নামেই চেনে। হাওড়ার জয়পুরের খালনায় বিজয়া দশমী কাটলেই শুরু হয় শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। লক্ষ্মী উৎসব ঘিরে ছোট বড় সকলেরই  উন্মাদনা তুঙ্গে ওঠে। এই গ্রামে দুর্গা পূজা হয় না যে তা নয়। তবে এখানে গ্রামের কুল দেবী রূপে  বিরাজমান মা লক্ষ্মী।


প্রায় তিনশো বছরের সুপ্রাচীন লক্ষ্মী পুজোগুলো এখন ঐতিহ্যের স্মারক হওয়ার সাথে সাথে ক্রমেই হয়ে উঠেছে থিম নির্ভর। এখানে বিভিন্ন থিমের পূজাতে ভিন্ন বিষয় ভাবনায় স্বতন্ত্র চোখে পড়ার মতো। এই গ্রামের চারুময়ী, লক্ষ্মীতলা, কৃষ্ণরায়তলা, ক্ষুদিরায়তলার, পুজো সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্য মন্ডিত। সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার স্পর্শ লেগে এখন নতুন অভিনবত্ব নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে পুজো উদ্যোক্তারাও। এই গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্যশালী পূজো মণ্ডপগুলিকে থিম ভিত্তিক ভাবনায় রীতিমতো প্রতিযোগিতার মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় নতুন পুজো মণ্ডপগুলি। 


প্রতি বছর বন্যায় সর্বস্বান্ত হওয়া কৃষকরা লক্ষ্মীদেবীর কৃপার আশায় আজ থেকে প্রায় আড়াই-তিনশ বছর আগে পশ্চিম খালনা এলাকায় চারুময়ী লক্ষ্মী পুজো করেন। এরপর থেকেই এই গ্রামে লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয় বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। সময়ের বিবর্তনে এখানেও শুরু হয় থিমের পূজো। গত কয়েক দশকে এই থিম পুজোর প্রসার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার মানুষও কৃষি কাজ ছেড়ে স্বর্ণ, লৌহ ও অন্যান্য ব্যবসায় মনোনিবেশ করছেন। আর তার মধ্যে দিয়েই পৌঁছেছেন উন্নতির শিখরে।তাঁদের আরও বিশ্বাস, লক্ষ্মী দেবীর কৃপাতেই কৃষিকাজে ভরাডুবির পর তাঁরা ব্যবসায় সমৃদ্ধি লাভ করেছেন।


এই উৎসবমুখর লক্ষ্মী পুজো দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ও জেলা থেকে ভিড় করে লক্ষ লক্ষ মানুষ কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে। আর এই সময়ে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে তাঁদের নিকট আত্মীয় পরিজনের সমারোহ দেখা যায়। দূরদুরান্তের দর্শনার্থীদের সমাগমে পরিপূর্ণ হয় গ্রামের সমস্ত পুজোমণ্ডপ। সারা রাত ব্যাপী দর্শনার্থীদের জনসমুদ্র কলকাতার দুর্গা পূজাকে মনে করিয়ে দেয়। গ্রাম জুড়ে তৈরি হয় এক উৎসবের আবহ। টানা তিনদিন ধরে জমজমাট মেলা-পরিবেশ এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। লক্ষ্ম‌ী পূজোর দিন থেকেই লক্ষ্মী গ্রামে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও স্থানে স্থানে প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad