কারখানার দূষণে বেহাল দশা, ক্ষোভে ফুঁসছেন একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday 3 November 2022

কারখানার দূষণে বেহাল দশা, ক্ষোভে ফুঁসছেন একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা


কারখানার দূষণে নাজেহাল একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা। নানান ধরণের চর্ম রোগ থেকে মরণ ব্যাধিও বাসা বাঁধছে এলাকার বাসিন্দাদের শরীরে। পরিস্থিতি এমনই ভয়ানক যে, দিন দশেক আগে কারখানার পাশেই এক পরিবারের আট মাসের কন্যা সন্তানের শ্বাসকষ্টে মৃত্যুও হয় বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। ঘটনা হাওড়ার ধুলাগড়ি এলাকার। 


এখানেই রয়েছে এই অভিযুক্ত সিমেন্ট কারখানা। আর এই কারখানার বর্জ্য‌ পদার্থ মিশছে এলাকার পরিবেশে। ফলত চরম সমস্যায় পড়েছেন হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের তিনটি গ্রাম মহিষগোট, চতুর্ভূজকাটি আর ভগবতীপুরের বাসিন্দারা। এই দূষণ থেকে মুক্তির পথ খুঁজছেন তারা। আন্দোলন-বিক্ষোভের পরেও সেভাবে কাজ হয়নি বলেই অভিযোগ। এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনিক ও পরিবেশ আদালতে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


সম্প্রতি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, গ্রামের বাতাসে দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। এমনকি দূষণের মাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে ২০১৯ সালের দিল্লী শহরের দূষণের মাত্রাকেও। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতে, এরূপ মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ঘটানোর জন্য এই কারখানার জরিমানা হওয়া উচিৎ ৬ কোটি ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ১২৫ টাকা। তা সত্ত্বেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। রমরমিয়ে চলছে কারখানার কাজ, বাড়ছে দূষণ। গ্রামের ঘরে ঘরে বাড়ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। জমিতে ফলছে না ফসল। ভুগছে পশুপাখিরা। এর এই সমস্যার কথা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে বারবার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


ভারতীয় সংবিধানের ২১নং ধারা অনুযায়ী প্রত্যেকের বেঁচে থাকার অধিকার সর্বজনস্বীকৃত। আর সেই অধিকারে বাঁধ সাধলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আর এই মৌলিক অধিকার হরণের দায়েই অভিযুক্ত কারখানা। বৃহস্পতিবার পরিবেশ আদালত থেকে স্থানীয় এলাকাতে গণ শুনানি ডাকা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই শুনানিতে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয় নি। কোম্পানি, বাইরে থেকে বাসে করে লোক এনে এলাকার বাসিন্দা সাজিয়ে পরিবেশ আদালতের অধিকারিকদের সামনে পেশ করছে। যারা যারা আজকে এই শুনানিতে বক্তব্য রেখেছে তাঁরা এখানকার বাসিন্দাই নয়। তাঁরা শুনানিতে ঢুকতে গেলে তাঁদের ভেতরে বসার জায়গা নেই বলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এই ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের সমস্যার কথা শুনানিতে জানাতে পারলেন না। ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তারা। পরিস্থিতি সামলাতে ছুটে আসে পুলিশ। 


স্থানীয় বাসিন্দা ছবি আড়ি অভিযোগ করেন, শরীরে চাকা চাকা দাগ ও চুলকানির মতো সমস্যা হচ্ছে এই কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়াতে। কিছুতেই সারছে না চর্ম রোগ। নিঃশ্বাস নিতেও সমস্যা হচ্ছে তাঁদের। এছাড়াও তাঁর পরিবারের আট মাসের কন্যা সন্তান হাঁপানি রোগে মারা গেছে দশ দিন আগে, বলেই অভিযোগ করেন তিনি। আর এজন্য, কারখানার দূষণকেই দায়ী করেন তিনি। তাঁর দাবী, অবিলম্বে এই কারখানা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।


এই প্রসঙ্গে, কাঁদুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অলোক কুমার জেটি জানান, আজকে পরিবেশ আদালতের অধিকারিকদের সামনে কোম্পানির ও গ্রামবাসীদের তরফ থেকে বক্তব্য রাখা হয়েছে। সেটা শোনার পরে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও জানান, এই এলাকা শিল্প তালুক হিসাবে গড়ে উঠেছে। এখানে শুধু একটা নয়, অনেকগুলো কারখানা রয়েছে। এলাকার খালগুলোকে সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আগাগোড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বাসিন্দাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলে। যদিও এই প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি সিমেন্ট কোম্পানি কর্তৃপক্ষের তরফে। 


এদিকে, উৎপাদন আরও বেড়ে গেলে এলাকার পরিবেশ আরও বেশি দূষিত হবে এবং তাতে সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর থেকে রক্ষা করতে, কীভাবে পরিবেশ দফতর কাজ করবে সেদিকেই তাকিয়ে আছে অসহায় দূষণের শিকার গ্রামবাসীরা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad