লোনের টাকা ফেরতের নামে অবৈধভাবে টাকা চাওয়া এবং দিতে অস্বীকার করলে শিক্ষক সহ পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকিকর অভিযোগ। ঘটনায় গ্ৰেফতার ৪। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের বাসিন্দা অনিমেষ সরকারের গুরুতর অসুস্থ বাবার চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল। এ কারণে পেশায় শিক্ষক ওই ব্যক্তি, পরিচিত একজনের কাছ থেকে টাকা ধার নেন। কিন্তু তা পরিশোধের পরেও মহাজন সুদের হার বাড়াতেই থাকেন এবং টাকা না দিলে পুরো পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকি এই চাপে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন ওই শিক্ষক, তবে বরাত জোরে বেঁচে যান। এই নিয়ে রবিবার অনিমেষ থানায়, মহাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম পীযূষকান্তি দে, সন্দীপ কোনার, চঞ্চলকুমার দে এবং মৃণালকান্তি দে। কাটোয়ার এসডিপিও কৌশিক বসাক জানিয়েছেন, মোট নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনিমেষ, পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক, বুড়ো প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০১৯ সালে পাঁচ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। তিন বছর পরে, সেই ৫ লক্ষ টাকার লোন বিশাল সুদে ১০ লক্ষ টাকা হয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, এত টাকার সুদ শোধ করতে তাকে অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে বেশি সুদে ঋণ নিতে হয়েছে।
পুলিশ জানায়, কাটোয়া শহর সহ পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় এত চড়া সুদে ঋণ দেওয়ার চক্র চলছে। তিন বছর ধরে এমন চক্রে আটকে ছিলেন অনিমেষ। সেই গ্যাং থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় না দেখে কাটোয়া থানার দরজায় কড়া নাড়েন তিনি। তিনি একটি চিঠিতে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিত লিখে পুলিশকে জানান।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এটি একটি বড় কেলেঙ্কারি। এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নামে ঋণের পরিবর্তে বেশি সুদ দিতে বাধ্য করে। পরে, মূল পরিমাণ চক্রবৃদ্ধির সাথে সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ঋণগ্রহীতারা দুই-তিন বছরে মূল ও সুদসহ মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তাদের সম্পত্তি জোরপূর্বক তাদের নামে রেজিস্ট্রি করা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়।
গত মাসে ব্যবসায়ীদের হাতে এক সরকারি কর্মচারী হামলার শিকার হন। সুদ পরিশোধের জন্য তাকে তুলে রেললাইনের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়। রেল দুর্ঘটনায় ওই সরকারি কর্মচারীর একটি পা কেটে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, এই মহাজনদের হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের ভয়ে অনেক ঋণগ্রহীতা আত্মহত্যাও করেছে।
No comments:
Post a Comment