হেমু বিক্রমাদিত্য মুঘলদের পরাজিত করে দিল্লি দখল করেছিলেন। অল্প সময়ের জন্য হলেও ভারতবিরোধী মুসলিম শাসকদের মধ্যে হিন্দু শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
হরিয়ানার রেওয়ারির বাসিন্দা হেমু তার জীবনে মোট ২২টি যুদ্ধে জিতেছিলেন। এই কারণেই কিছু ঐতিহাসিক তাকে 'সমুদ্র গুপ্ত' এবং 'মধ্যযুগের নেপোলিয়ন' বলে অভিহিত করেছেন।
সম্রাট হেমু একজন দক্ষ শাসক এবং সেই সঙ্গে একজন চমৎকার যোদ্ধা ছিলেন। হেমুর জন্ম হরিয়ানার রেওয়ারির একটি ছোট গ্রাম কুতাবপুরে।
শের শাহের পুত্র ইসলাম শাহ, তিনি হেমুকে ডাক বিভাগের প্রধান করেন। কিন্তু হেমুর যুদ্ধের দক্ষতা দেখে তিনি তাকে সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেন। শুধু তাই নয়, রাজবংশের প্রথম শাসক মোহাম্মদ আদিল শাহ তার শাসনামলে তাকে 'ওয়াকিল-ই-আলা' অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। আদিল যখন খবর পান যে হুমায়ুন ফিরে এসেছেন এবং দিল্লির সিংহাসন দখল করেছেন, তখন তিনি হেমুকে ভারত থেকে মুঘলদের তাড়ানোর দায়িত্ব অর্পণ করেন। যদিও এর পর তিনি সেই যুদ্ধে যেতেন আর মহারাজা বিক্রমাদিত্য উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর নামে মুদ্রা তৈরি করা হয়েছিল।
হেমু তথ্য পেয়েছিলেন যে মুঘলরা তার উপর পাল্টা আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে, তাই তিনি তার কামানগুলিকে পানিপথের দিকে পাঠান। তারপর বৈরাম খান ও হেমুর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
এরপর যুদ্ধের সময় হাতিতে বসে থাকা হেমুর চোখে তীর বিদ্ধ হয়। আবুল ফজল আকবরনামায় লিখেছেন যে হেমু যুদ্ধের সময় বর্ম পরেননি, ঘোড়ায় চড়তেও জানতেন না। এটাই ছিল তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এক সময় তিনি অজ্ঞান হয়ে হাতির ওপর থেকে পড়ে যান। পোর্টার শৈবানি সেই সুযোগে হেমুকে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলে।
ঘটনাস্থলে আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন বৈরাম খানকে হেমুকে হত্যা করার জন্য প্ররোচনা দেয় এবং বৈরাম খান তার তলোয়ার দিয়ে হেমুর শিরচ্ছেদ করেন। ইতিহাসবিদরা বলছেন, তিনি আরও কয়েক বছর বেঁচে থাকলে ভারতে মুঘলদের জায়গায় হিন্দু শাসনের ভিত্তি রচিত হতো।
No comments:
Post a Comment