সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার! টাকার লোভে ৪০০ শিশুকে খুন করেছিলেন ব্রিটিশ মহিলা। এই ঘটনাটি ভিক্টোরিয়ান যুগের। যে সময়ে প্রচলিত ছিল বেবি ফার্মিং রীতি। ভিক্টোরিয়ান যুগে, লোকেরা তাদের শিশুদের যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু অর্থের বিনিময়ে তাদের বেবি ফার্মারের কাছে ছেড়ে যেতেন।
বেবি ফার্মার দুই ধরণের ছিল; এক যারা টাকা নেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিশুদের ফিরিয়ে দিতেন এবং এক তারা, যারা টাকা নেওয়ার পর শিশুদের চিরকাল নিজেদের কাছেই রাখতেন এবং অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দিতেন। এটি ছিল একপ্রকার 'শিশুদের ব্যবসা'। অ্যামেলিয়া ডায়ার এমনই একজন বেবি ফার্মার ছিলেন যিনি অর্থের লোভে ৪০০ শিশুকে নির্মমভাবে খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ।
অ্যামেলিয়া পুলিশকে যে কাহিনী শুনিয়েছিলেন, সেই অনুসারে- তিনি ১৮৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট। মায়ের মানসিক অবস্থা ভালো না থাকায় তার শৈশব ভালো যায়নি।
২৪ বছর বয়সে অ্যামেলিয়া, জর্জ টমাস নামে ৫৯ বছর বয়সী একজনকে বিয়ে করেছিলেন। তবে বিয়ের সার্টিফিকেটে ভুলভাবে বয়স লেখান দুজনেই অর্থাৎ অ্যামেলিয়া তার বয়স বেশি দেখান আর জর্জের কম।
বিয়ের পরে, অ্যামেলিয়া একটি নার্সিং চাকরি পান, যার জন্য তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের জন্মের পর তার দেখাশোনার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন অ্যামেলিয়া। ১৮৬৯ সালে স্বামী জর্জ টমাসের মৃত্যুর পর, অ্যামেলিয়ার আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে, যার কারণে তিনি বেবি ফার্মিং শুরু করেন। অ্যামেলিয়া টাকা নিয়ে শিশুদের দেখাশোনা করতেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর তাদের আবার ফিরিয়ে দিতেন।
১৮৭২ সালে তিনি উইলিয়াম ডায়ারকে বিয়ে করেন। উইলিয়াম মদ তৈরির শ্রমিক ছিলেন। তাদের দুটি সন্তান ছিল কিন্তু বিয়ে বেশিদিন টেকেনি এবং বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর পর আবারও আর্থিক সমস্যায় পড়েন অ্যামেলিয়া। তিন সন্তান লালন-পালন করা তার জন্য কঠিন হয়ে উঠছিল।
এরপর অ্যামেলিয়া তার কাছে রেখে যাওয়া শিশুদের দেখাশোনায় অবহেলা শুরু করেন। তিনি শিশুদের খাবার দিতেন না, যার কারণে শিশুরা অনাহারে মারা যেতে থাকে। এই প্রক্রিয়া কয়েক দিন চলে। সন্দেহ নেই যে, তিনি আরও অনেক অনুরূপ মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিলেন-সম্ভবত ৪০০ বা তারও বেশি, যা তাকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সিরিয়াল কিলার করে তোলে।
কিন্তু এক সন্তানের মৃত্যুর পরে যখন তাদের বাবা-মা তদন্ত করে, তখন অ্যামেলিয়ার গোপন এই কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসে। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অ্যামেলিয়ার গাফিলতির কারণে বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হয়। যার ফলে তাকে অবহেলা এবং ছয় মাসের কঠোর পরিশ্রমে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।তারপরে তিনি শিশুদের সরাসরি খুন করতে শুরু করেন, তাদের মধ্যে অন্তত কিছুকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন এবং মনোযোগ এড়াতে মৃতদেহ ফেলে দেন।
অ্যামেলিয়া ডায়ারের পতন ঘটেছিল যখন টেমস নদীতে একটি শিশুর বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ১৮৯৬ সালের ৪ এপ্রিল তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভিক্টোরিয়ান আমলের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর পরীক্ষণের একটিতে, তিনি শিশু ডরিস মারমনকে খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং ১৯ জুন ১৮৯৬-এ ফাঁসিতে ঝুলানো হয়।
No comments:
Post a Comment