'তৃণমূলের সঙ্গে থাকলে ভবিষ্যৎ অত্যন্ত বিপজ্জনক', এভাবেই রাজ্যপালকে নিশানা করলেন বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। শনিবার বারাসতে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র নিশানা করেন বিজেপি নেতা।
রাজ্যপাল বদল প্রসঙ্গে শমীক বলেন, 'আমরা কেন বদল করব! বিজেপি কী রাজ্যপালের ভরসায় রাজনীতি করতে নেমেছে নাকি! কে রাজ্যপাল থাকবেন, কে আসবেন, চলে যাবেন, তাঁর পদ সাংবিধানিক পদ। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সাংবিধানিক অধিকারগুলো লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা, সংবিধান মোতাবেক রাজ্য পরিচালনা হচ্ছে কিনা না, যে আইন বিধানসভায় প্রণয়ন হচ্ছে সেই আইন ভারতবর্ষের সংবিধানের মূল দর্শনের পরিপন্থী কিনা সেটা দেখবার দায়িত্ব তাঁর। এর বাইরে রাজ্যপাল রাজ্যপালের কাজ করবেন।'
পাশাপাশি তিনি বলেন, 'প্রথাগতভাবে প্রয়োজন হলে আমরা রাজ্যপালের কাছে গিয়ে জানাবো ভুল-ত্রুটি, আমাদের কাজ আমরা করব। রাজ্যপালের দিকে তাকিয়ে বিজেপি রাজনীতি করতে আসেনি। এই যে সংখ্যালঘু ছেলে মহম্মদ আলী মারা গেল, এই বারাসতের বুকে এক সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে মেরে দিল, ওই ছেলেটা কি হাতে বিজেপির পতাকা নিয়েছিল এই রাজ্যপালকে দেখে!'
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় যেভাবে প্রশাসনিক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতেন উনি কি তেমন করছেন না বলে মনে হচ্ছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে বিজেপি নেতার পাল্টা প্রশ্ন, রাজ্যপাল প্রশাসনিক দক্ষ বলে আপনি মনে করেন? তিনি বলেন, 'এটাই যদি আপনি বলেন হয়তো আপনি কাল আক্রান্ত হয়ে যাবেন। আপনি যদি আপনার টিভি চ্যানেলে প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে বলেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় অত্যন্ত দক্ষ প্রশাসক হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করেছিলেন, তার পরের দিনই আপনার বাড়িতে কিংবা হাসপাতালে আপনাকে দেখতে আমার আসতে হবে।'
তিনি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এখন এরকম আছে। জগদীপ ধনখড় কী করেছেন, কী পরিস্থিতিতে কী বলেছেন আর উনি কী পরিস্থিতিতে বলবেন সেটা এক। আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি, আমাদের সঙ্গে রাজ্যপালের কোথাও কোনও বিরোধ নেই। আমাদের দলের পক্ষ থেকে শুভেন্দু অধিকারী দিলীপ ঘোষ, স্বপন দাশগুপ্ত যা যা মন্তব্য করেছেন, সেটা সম্পূর্ণ তারা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিকতা, মানুষকে কীভাবে বিষয়টা দেখছেন, তা নিয়ে বলেছেন।'
শমীকের কথায়, 'রাজ্যপালের হাতে খড়ি নিয়ে আমাদের কোনও উৎসাহ নেই। রাজ্যপালের যদি কেউ মুখে ভাত দেন, তা নিয়েও আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।' আমি এটা বুঝেছি যে পশ্চিমবঙ্গে বাংলা শিখতে চেয়েছিল যারা, বাংলার মাস্টার মশাই যারা চেয়েছিল, তারা দাড়িভিটে দুটি ছেলে গুলি খেয়েছিল। সেখানে রাজ্যপাল যেখানে হাতে খড়ি করছেন, সে তো বাংলায় অ-আ, ক-খ লিখবে, তা বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎটা কী সেটা তাঁর জানা উচিৎ। তিনি অবশ্যই তখন বাংলা লিখতে শুরু করবেন, তিনি রংধনু লিখবেন, এখনকার বাংলা।'
হাতে খড়ির নিন্দা করছেন? এ প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, 'কেন নিন্দা করতে যাব, এত সুন্দর আনন্দঘন একটা মুহূর্ত। তাও ভালো যে, ক্লাস থ্রি পাস করা, পয়সা দিয়ে হওয়া কোনও মাস্টারমশাইয়ের থেকে হাতে খড়ি নেননি। আর তৃণমূলের সঙ্গে থাকলে, এই ধরণের অনুষ্ঠানে বেশি থাকলে ভবিষ্যৎ অত্যন্ত বিপজ্জনক।'
বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে এদিন ধৃতরাষ্ট্র বলে কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতা। তিনি বলেন, 'রাজ্যের স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এ যুগের ধৃতরাষ্ট্র। তিনি রাজ্যপালের মুখে ভাত না হাতে খড়ি কি সব হচ্ছে, ওগুলো দেখতে পারছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করতে পারছেন, কিন্তু আপনার এই জেলায় অভিনব ঘটনা; বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিজেপির প্রতীকে নির্বাচিত, বিমান বাবু দেখতে পাচ্ছেন না।'
শমীক বলেন, 'আজকে এই মুহূর্তে এই রাজ্যের গণতন্ত্র বাঁচাতে গেলে রাজ্যপাল যিনি সদ্য হাতে খড়ি নিয়েছেন, ওনার উচিৎ একটা সঞ্জয়কে দিয়ে দেওয়া, যিনি বিমান বাবুকে ঠিকঠাক দেখিয়ে দিতে পারবেন, কার হাতে বিজেপি আর কার হাতে তৃণমূলের পতাকা আছে। আর যদি রাজ্যপাল না পারেন, তাহলে তাঁর উচিৎ, তিনি দক্ষিণ ভারতের মানুষ, শুনেছি ওখানকার চিকিৎসা ভালো, ট্রেন ভর্তি করে-করে লোক যায়, উনি ওখানে ওনাকে নিয়ে গিয়ে একটু চোখের চিকিৎসা করিয়ে নেবেন।'
এর পাশাপাশি এদিন বিশ্বভারতীতে জমি বিতর্কের মাঝেই মুখ্যমন্ত্রীর বোলপুর সফর নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী তো জান সব সময়, উনি তো এমনিই রবীন্দ্রনাথের কাছাকাছির লোক। উনিও কবি, রবীন্দ্রনাথও কবি। উনি বোলপুর যাবেন না তো কে যাবেন!'
তিনি বলেন, 'অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্ক নিয়ে আমরা উৎসাহী না, এটা আমাদের কাছে, সমাজের কাছে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, অমর্ত্য সেনের মতন একজন রাজনৈতিক নন, সামাজিক উচ্চতার মানুষ, এত বড় একটা অ্যাকাডেমিক ফিল্ডে যান, তিনি ডমিনেট করেন, সামান্য কয়েক ডেসিমেল জমি নিয়ে রোজ রোজ বিতর্ক তৈরি হবে, তিনি হয় আইনের সাহায্য নিন, নয় তিনি বিবৃতি দিন নয় উপাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে বসুন, বিষয়টা মেটান। এতে তো সার্বিক ভাবে বাংলার ফেস লস হচ্ছে।'
কেন্দ্রের টাকা বরাদ্দ বলা হচ্ছে তৃণমূলের জয়- এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতার কটাক্ষ, 'মৃগনাভিযুক্ত হরিণের কথা শুনেছেন তো, যখন ঐ গন্ধটা বেরোয়, তখন হরিণ চারিদিকে ঘুরতে থাকে, পাগল হয়ে যায়। ওটাই তাদের মৃত্যুর কারণ। তৃণমূলও স্বাভাবিক মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।'
No comments:
Post a Comment