দূর-দূরান্ত থেকে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বাইক অ্যাম্বুলেন্স চালু করেন পদ্মশ্রী করিমুল হক। এবার তার দেখানো পথের মানুষের পাশাপাশি বিপথগামী পশুদের চিকিৎসার জন্য বাইক অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ফালাকাটায় পশুর চিকিৎসার জন্য প্রথমবারের মতো চালু হলো বাইক অ্যাম্বুলেন্স। সাধারণ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে যা পাওয়া যায় তাও এখানে পাওয়া যায়। এটি অসুস্থ পশু-পাখিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে।
ফালাকাটা ব্লক প্রশাসন, পৌরসভা এবং শহরের আরও অনেক প্রাণী প্রেমিক ক্লাবের আর্থিক সহায়তায় পিপল ফর অ্যানিম্যালস ফালাকাটা ইউনিটের নেতৃত্বে অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স চালু হয়েছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধী ভার্চুয়াল মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার উদ্বোধন করেছিলেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাইকটিতে একটি বড় বক্স লাগানো আছে। বাক্সটি মোটা অ্যালুমিনিয়াম এবং ধাতব পাত দিয়ে তৈরি। বাক্সে চাকা লাগানো আছে। বাক্সটি সাইকেলের সাথে লোহার চাদর দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। বক্সের ভিতরে স্টেনটার, বেল্ট, স্যালাইন সিস্টেম। এছাড়া অক্সিজেন ব্যবস্থাও রয়েছে। রাস্তার পশুদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সমস্ত ওষুধ সহ কমপক্ষে দুটি পশু ভিতরে রাখা হবে। এই বগি থেকে পাখি উদ্ধার ও চিকিৎসার সুবিধাও পাওয়া যাবে।
PF-এর ফালাকাটা ইউনিটের সভাপতি শুভদীপ নাগ বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন ধরে বিপথগামী পশু-পাখি নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু আহত ও অসুস্থ পশুদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, কিন্তু পদ্মশ্রী করিমুল হকের অ্যাম্বুলেন্স দেখে আমার মনে হয়েছিল। বিপথগামী প্রাণীদের জন্যও এমন একটি অ্যাম্বুলেন্স চালু করা। এক বছর ধরে ফালাকাটা ব্লক প্রশাসন, পৌরসভা, অনেক ভালো মানুষের সহযোগিতায় অবশেষে আমরা একটি অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করতে পেরেছি। আমরা বিনা মূল্যে পশু-পাখিদের ২৪ ঘন্টা নার্সিং পরিষেবা প্রদান করব।'
ফালাকাটা বিডিও সুপ্রতীক মজুমদার বলেন, পিএফএর ফালাকাটা ইউনিট পশু-পাখি নিয়ে ভালো কাজ করছে, তাই তারা বাইক অ্যাম্বুলেন্সের কথা বললে আমরা আর্থিকভাবে সাহায্য করতে রাজি হয়েছি। সম্ভবত রাজ্যের পশু-পাখির চিকিৎসার জন্য ফালকাতায় প্রথম বাইক অ্যাম্বুলেন্স চালু হয়েছে। আগামী দিনেও ব্লক প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে। PFA-এর ফালাকাটা ইউনিটের মতে, বাইক অ্যাম্বুলেন্সের জন্য প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য প্রায় ৫০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছিল একটি পুরনো বাইক। এ ছাড়া বাকি টাকা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরি করতে বাইকসহ একটি বক্স তৈরিতে ব্যয় করা হয়েছে। এই অর্থ সাহায্য করেছে ফলকাটা ব্লক প্রশাসন, পুরসভা, কিছু ক্লাব এবং পশুপ্রেমীরা।
জানা গেছে, বাইক অ্যাম্বুলেন্সটি সাদা রং করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে লাল অক্ষরে লেখা আছে। বসানো হয়েছে হুটার। এছাড়াও বাক্সের ওপর বসানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লাইট, যাতে রাতে হাঁটতে কোনো সমস্যা না হয়। রাস্তায় বাইক অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য আরটিও, জেলা প্রশাসন, ব্লক সহ অনেক জায়গা থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এমনকি সংগঠনের সদস্য রোহন রায়, দেবাশীষ তালুকদার, রাহুল সাহা, সৌরিক সরকারকে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সংস্থার সদস্য রোহন রায় বলেন, “আমরা বিপথগামী কুকুর, গরু, বিড়াল এবং অসুস্থ পাখিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেব। এর জন্য আমরা কিছু হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছি। কোনও অসুস্থ পশু পাখির খোঁজ পেলে বা কেউ খবর দিলে আমরা গিয়ে চিকিৎসা করব। প্রয়োজনে অসুস্থ প্রাণীটিকেও চিকিৎসার জন্য বাইক অ্যাম্বুলেন্সে করে পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।"
No comments:
Post a Comment