একুশের নির্বাচনের সময় থেকে যেই উত্তরবঙ্গ পদ্ম শিবিরের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিতি লাভ করেছিল, সেই মাটিই কী আজ নড়বড়ে? আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের জোড়া ফুলে যোগদানের পর থেকেই এই নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। যদিও বিজেপির দাবী এতে দলে কোনও প্রভাব পড়বে না। পাশাপাশি দল বিরোধী আইনে সুমন কাঞ্জিলালের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে বলেও জানান উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। অপরদিকে তৃণমূল সাংসদের দাবী দলত্যাগ বিরোধী আইনের ভয় দেখিয়ে কাউকে জোর করে ধরে রাখা যায় না।
সোমবার বিধানসভায় স্পিকারের ডাকা ওরিয়েন্টশন কোর্সে যোগ দিতে আসেন বিজেপি বিধায়করা। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। এদিন সুমন কাঞ্জিলালের ফুল বদল থেকে শুরু করে বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ এবং শাসক শিবিরকে নিশানা সহ একাধিক বিষয়ে কথা বলেন বিধায়ক। পাশাপাশি অভিষেকেও খোঁচা দিতে ছাড়েননি তিনি।
সুমনের দলবদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দল ওনাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছিল। প্রথমবার টিকিট দিয়ে পদ্মফুল প্রতীকে ওনাকে জিতিয়ে বিধানসভায় পাঠানো হয়েছিল। ওনার মনের মধ্যে কী ছিল বা ছিল না, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, অভিযোগ যাই ছিল, উনি যদি আমাদের দলের মধ্যে প্রকাশ্যে বলতেন তাহলে আমরা সেই রাস্তা বের করতাম। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে এভাবে চলে যাবেন আমরাও বিশ্বাস করতে পারিনি। আমরা কেউই জানতাম না যে উনি এই ধরনের পদক্ষেপ করতে পারেন। পরে আমরা ট্যুইটের মাধ্যমে জানলাম উনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।'
তাঁর কথায়, 'দলে লোক আসবে-যাবে। আমাদের প্রথম সারির নেতা না থাকা সত্ত্বেও মানুষের আস্থা বিজেপির ওপর ছিল, এটা আগেও আমরা দেখেছি, তাই ২০১৪ সালে বিজেপি কেন্দ্রে আবার ক্ষমতায় আসে এবং এই প্রথম কোনও অ-কংগ্ৰেস এত বেশি মেজোরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসে। তাই কেউ চলে গেলেও দূর-দূর পর্যন্ত দলের কোনও অসুবিধা নেই।' তবে যারা ভোট দিয়ে বিধায়ককে জিতিয়েছেন, তারা প্রশ্ন তুলতেই পারে এক্ষেত্রে, বলেন বিধায়ক।
সুমন কাঞ্জিলাল তৃণমূলে যোগদানের কথা এবং সাংসদ রাজু বিস্তার বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকজন বিধায়ক অভিযোগ করলেও তা সমাধান করা হচ্ছে না। এতে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ রয়েছে - এই প্রসঙ্গে বিধায়ক বলেন, 'একটা পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, সন্তানদের মধ্যে টানাটানি থাকে, কিন্তু সেটা বসে সমাধান করতে হবে, এভাবে বাড়ি ছেড়ে গেলে সমস্যার সমাধান হবে না।'
পাশাপাশি অভিষেককে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, 'যেহেতু অ্যান্টি ডিফেকশন ল, খুব ডিপ্লোমাটিক্যালি আমরা বলতে পারি, পতাকা না নিয়ে উত্তরীয় পরিয়ে ওনাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক, যাতে কোনও অ্যান্টি ডিফেকশন ল ওনার বিরুদ্ধে প্রযোজ্য না হয়, খুব বুদ্ধি প্রয়োগ করে যোগদান করানো হয়েছে।'
আরও ৮ জন ক্যামাক স্ট্রিটের দরজায় রয়েছে বলে তৃণমূলের দাবী- এই নিয়ে বিজেপি বিধায়ক বলেন, ওনাদের বক্তব্য ওনারা বলতেই পারেন, আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তিনি বলেন, আজকে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকেন, ভারতবর্ষ তো দূর, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বলে কিছু থাকবে না। কিন্তু আমাদের মধ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ী নেই, মুরলী মনোহর যোশী নেই, লাল কৃষ্ণ আদবানি বয়স হয়ে গেছেন বসে আছেন, তাও বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে এবং আগামী চব্বিশেও আসবে। বিজেপি রেজিমেন্ট ও ক্যাডার বেস পার্টি, সুতরাং কেউ চলে গেলে দলের ক্ষতি হবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না।'
বিজেপিতে যে নেতৃত্ব আছে তা তৃণমূলের থেকে যোগ্য, তাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, বলেও শাসক দলকে খোঁচা দেন মনোজ। তিনি বলেন, 'আমাদের নতুন বিধায়করা বিধানসভায় যেভাবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তাতে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীর আতঙ্কিত। তাই বিধানসভার ভেতরে বিজেপিকে কোণঠাসা করার জন্য একটা প্রচেষ্টা চলছে, এতে তারা কখনই সফল হবে না।' এর পাশাপাশি দল বিরোধী আইনে সুমন কাঞ্জিলালের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে বলেও জানান বিজেপি বিধায়ক।
অপরদিকে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, দলত্যাগ বিরোধী আইনে কী হবে? সে চলে এসছে, থাকতে চায় না। জোর করে তো ধরে রাখা যায় না, দলত্যাগ বিরোধী আইনের ভয় দেখিয়ে। শুভেন্দুরা নিজেদের দল সামলান। নীতির কথা বলে লাভ নেই। আমাদের দলে যোগদান করতে চায়, আমারও বলেছি হ্যাঁ যোগদান করো,তারপর দেখা যাবে। ডিফেকশনের আইন সংশোধন করলে কেন্দ্রীয় সরকার করবে।' সাংসদ এও বলেন, 'উত্তরে বিজেপি ব্যাপক জমি হারাচ্ছে। আরও লোক চলে আসবে।'
No comments:
Post a Comment