এক সন্ধ্যার আগে যারা প্রিয়জনের সাথে সুখে দিন কাটিয়ে ঘুমিয়েছিলেন তারা পরের দিন জীবন শুরু করতে পারেননি। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প একই রকম দৃশ্য উপস্থাপন করেছে। বিল্ডিংগুলি মাটিতে ধসে গেছে এবং পুরো জনবসতি জনশূন্য হয়ে পড়েছে। চারিদিকে মৃত্যুর বেলেল্লাপনা। তুরস্ক ও সিরিয়ায় রবিবার রাতে এক মিনিট স্থায়ী ভূমিকম্পে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ভূমিকম্পটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সাইপ্রাস, লেবানন এবং মিশরের মতো পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে এর কম্পন অনুভূত হয়। এখন পর্যন্ত ৭৬০ মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে।
শুধু তাই নয়, এই ভূমিকম্পের কারণে ইতালিতেও সুনামির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। বর্তমানে তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধারকাজ চলছে এবং ধ্বংসাবশেষ থেকে মৃতদেহ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ভয়ের অনুভূতি এমন ছিল যে, সমস্ত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকে যাতে আর কোনও ভূমিকম্প আবার মৃত্যুর কারণ না হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শতাধিক দেহ চাপা পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভবনগুলো যেভাবে ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে, তাতে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম। সিরিয়ার সীমান্ত থেকে ৬০ মাইল দূরে তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরের কাছে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল বলে জানা গেছে। এ কারণে সিরিয়াতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
এই ভূমিকম্প গাজিয়ানটেপকে ধ্বংস করেছে। এ কারণে সিরিয়া থেকে সেই শরণার্থীদের আবার উচ্ছেদ করতে হয়েছে, যারা দুবেলা রুটি ও মাথা লুকানোর জায়গার জন্য এখানে থেকেছেন। তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ বলছে, এই ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তুরস্কের মোট ৭টি প্রদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ পর্যন্ত ২৮৪ জনের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২ হাজার ৩২৩ জন। সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ২৩৭ জন নিহত হয়েছে এবং আহত ৬৩৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সিরিয়ার আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামার মতো শহরে ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে। এই ভূমিকম্প কতটা তীব্র ছিল, তা থেকেও অনুমান করা যায় যে, একবার মৃত্যুর দৃশ্য উপস্থাপনের পরও পৃথিবী কেঁপেছে ৬ বার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ আরদোয়ান বলেছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষদের সরিয়ে নেওয়াই আমাদের অগ্রাধিকার। আহতদের চিকিৎসা দিতে হবে। আমরা জনগণকে অনুরোধ করছি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে না যাওয়ার জন্য।
No comments:
Post a Comment