ঔষধি গাছের মধ্যে কালমেঘের গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে কালমেঘের উদ্ভিদকে বলা হয় ঐশ্বরিক শক্তিশালী ঔষধি উদ্ভিদ, এটি কদু চরায়তা এবং ভুনিম নামে পরিচিত। এটি অনেক আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিক এবং অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি লিভারের ব্যাধি দূর করতে এবং ম্যালেরিয়া দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি রক্ত পরিশোধন, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর এবং বিভিন্ন চর্মরোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এর ঔষধি গুণের কারণে কৃষকরা এর চাষ থেকে ভালো আয় করতে পারে।
অনুকূল জলবায়ু-
গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু চাষের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। ভারতে খরিফ ফসলের সাথে কালমেঘের ফসল কাটা হয়। কালমেঘ গাছ বর্ষায় ভালো জন্মে। ফসলের জন্য বার্ষিক ১১০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। গ্রীষ্ম ঋতুতে সহজেই গাছের বিকাশ ঘটে কিন্তু শীতের হিম গাছের জন্য ক্ষতিকর। ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গাছের অঙ্কুরোদগম ভালো হয় এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রা উদ্ভিদের বিকাশের জন্য উপযোগী। উদ্ভিদ সহজেই সর্বোচ্চ ৩৫-৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
উপযুক্ত মাটি-
কালমেঘ চাষের জন্য উপযুক্ত নিষ্কাশন সহ বেলে দো-আঁশ মাটি প্রয়োজন। শক্ত, মসৃণ ও জলাবদ্ধ জমিতে চাষাবাদ করা উচিৎ নয়। জমির পিএইচ মানও স্বাভাবিক থাকলে ফলন ভালো হয়।
ক্ষেত প্রস্তুতকরণ-
কালমেঘ ফসলের জন্য ক্ষেত মাটির পালা লাঙল দিয়ে চাষ করতে হবে, তারপর পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার সার হিসেবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর কালমেঘের ক্ষেতে জল দিয়ে লাঙল দিতে হবে। এর পরে, জমিতে আগাছা বের হয়, তারপর ক্ষেতের ২-৩ টি তির্যক লাঙ্গল করুন। চাষের পর জমি বেঁধে সমতল করতে হবে।
চারা রোপণ-
জুন থেকে জুলাই মাস কালমেঘের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় কারণ জুন মাস থেকে বর্ষাকাল শুরু হয় এবং গাছপালা অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পায়। এই সময় গাছপালা সেচ প্রয়োজন হয় না। কালমেঘের চারা রোপণ শৈলশিরা ও সমতল উভয় স্থানেই করা যায়। সমতল ভূমিতে ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে গাছ লাগাতে হবে এবং শিলাগুলিতে ৪০-২০ সেমি দূরত্বে গাছ লাগাতে হবে।
গাছের সেচ-
কালমেঘ চাষের সময় সময়মতো বৃষ্টি না হলে এবং প্রয়োজনে ২-৩টি সেচ দিতে হবে। যদি কালমেঘের চাষ বহু বছরের ভিত্তিতে করা হয়, তবে প্রয়োজন অনুসারে গাছগুলিতে বছরে ৬-৮ বার জল দিতে হবে।
ফলন ও উপকারিতা-
যদি ভালো যত্নে কালমেঘের চাষ করা হয়, তাহলে এক হেক্টর থেকে ২-৪ টন শুকনো ডাল ও ৪ কুইন্টাল বীজ পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি প্রায় ১৫-৫০ টাকা। সে অনুযায়ী কালমেঘ চাষ করে কৃষকরা সহজেই বছরে এক লাখের বেশি আয় করতে পারে।
No comments:
Post a Comment