তৃণমূল নেতার দাদাগিরি! নিজের বাড়িতেই আগুন, রাতভর তাণ্ডব

দরজা আটকে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে নিজের স্ত্রী-মেয়েকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। ভয়ে এগিয়ে এলেন না এলাকাবাসীরাও। রাতভর চলল নেতার তাণ্ডব। ঘটনাটি ঘটেছে, নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার রাধা গোবিন্দ পাড়া এলাকায়। 

জানা গিয়েছে, রাধা গোবিন্দ এলাকার বাসিন্দা পিন্টু ওরফে অনির্বাণ সেন, এলাকায় দাপুটে তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ, শাসকদলের কথা বলে এলাকার মানুষদের বিভিন্ন বিষয়ে হুমকি দেয়। শুধু এলাকার মানুষ নয়, মদ্যপ অবস্থায় এসে নিজের স্ত্রী-মেয়ের ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করত। বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ মদ্যপ অবস্থায় এসে স্ত্রীকে মারধর শুরু করে। এরপর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দরজা আটকে দেওয়ার আগেই কোনও রকম ভাবে দরজা খুলে পালিয়ে যায় তার স্ত্রী ও মেয়ে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে গোটা বাড়িতে। 

আরও অভিযোগ, এরপর শুরু হয় স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজে তল্লাশি, সারা গ্রাম দাপিয়ে বেড়ায়। এমনকি ভয়ে বাড়িতে কেউ আগুন নেভাতেও এগিয়ে আসেনি। যদিও কোনও ক্রমে গ্রামবাসীদের সাহায্যে স্ত্রী ও কন্যা প্রাণে বেঁচে যায়। পরিবারের দাবী, এই প্রথম নয়, এর আগেও এমনকি বিয়ের পর থেকেই সে অত্যাচার চালাতো একইভাবে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার স্ত্রী সোমা সেন জানান, বিয়ের পর থেকে একই ভাবে অত্যাচার চালাতেন অভিযুক্ত পিন্টু সেন। তিনি বলেন, 'ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও তার অত্যাচার একই রকম।' তার এবং তার মেয়ের যাতে কোন ক্ষতি না হয়,সেই ব্যবস্থাই করুক প্রশাসন, এমনই আর্জি সোমা সেনের। 

স্থানীয় বিজেপি নেতা শিবনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এটা খুব নিন্দনীয় ঘটনা। মূলত শাসকদলের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলেই তার এই বারবাড়ন্ত। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা পিন্টু সেন যে ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা প্রশাসনকে দাবী জানাচ্ছি, অবিলম্বে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।'

এ বিষয়ে সিপিএম নেতা জয়দেব হাওলাদার বলেন, 'এখন তৃণমূলের কালচার এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিন মদ্যপান করে থাকবে আর শাসকদলের ক্ষমতা দেখিয়ে নিজের বউ-বাচ্চাদের ওপরে অত্যাচার চালাবে। গতকাল রাতে যদি গ্রামবাসীরা না বাঁচাতো তাহলে তার স্ত্রী ও কন্যা দুজনেই জ্যান্ত আগুনে পুড়ে মারা যেত।'

এদিকে বিরোধীদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে কৃষ্ণগঞ্জ তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি প্রণব বিশ্বাস। তিনি বলেন, 'পিন্টু সেন আমাদের কোন প্রথম বা দ্বিতীয় সারির কোনও নেতা নয়। সাধারণ একজন দলের কর্মী বা সমর্থক হতে পারে। তিনি যে ঘটনা কাল ঘটিয়েছেন আমরা তার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আমরাও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব যাতে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।'

এ বিষয়ে অভিযুক্ত পিন্টু সেনের পরিবারের তরফ থেকে কৃষ্ণগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত পিন্টু সেন পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ।