ভোট মরসুমে বোমা-বারুদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আমডাঙা - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday 2 April 2023

ভোট মরসুমে বোমা-বারুদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আমডাঙা


উত্তর ২৪ পরগনা: ভোট এলেই বোমা, গুলি, তীর ধনুক ও কোপাকুপিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আমডাঙা। ৭৮- এ প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই শুরু হামলা-মারধর। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ও বোর্ড গঠন ঘিরে হিংসায় মৃত্যু সংখ্যা চার। বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও উদ্ধার হয়েছিল এক হাজারের বেশি বোমা। এত বোমা ফেটেছিল যে পিচ রাস্তা ঢেকেছিল বোমার সুতুলিতে। বাগানে ঝোপে রাস্তার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বোমা। 


বিধানসভা হিসাবে আমাডাঙা জন্ম নেওয়ার পর শুরুতেই ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির মীরা দত্তকে পরাজিত করেন সিপিএমের হাশিম আব্দুল হালিম। টানা ২৫ বছর বিরোধীদের হারিয়ে লাল দূর্গে পরিণত করেছিল সিপিএম। এলাকার প্রবীন নাগরিকদের দাবি, ৭৮ সালের প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস ও জনতা পার্টির প্রার্থীদের হারাতে মারধর করে সিপিএম। রক্তচক্ষু ও মারামারি করেই আমডাঙা ব্লক বিরোধী শূণ্য করে তারা। পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু ২০০১ সাল থেকে। তৃণমূল জন্মের পর থেকে শক্তি বৃদ্ধি করে তারা। সেই সাথে বাড়তে থাকে হিংসা। অভিযোগ, সিপিএম জাকির ভল্লুকের নেতৃত্বে আমডাঙায় ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে। 


পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাকির ভল্লুকের ডেরা থেকে আমডাঙা থানার পুলিশ এক লপ্তে ২০০ তাজা বোমা উদ্ধার করে। তিনটে আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার হয় ওই দিন। এই ঘটনার আগে তারাবেড়িয়া, বোদাই ও মরিচা গ্রামপঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বহিচগাছি। ২৮ আগষ্ট রাতে শুরু হয় বোমবাজি। এত বোমা ছোঁড়া হয় যে, বিস্ফোরণের পর বোমার সুতুলিতে ঢেকেছিল পিচ রাস্তা। ভেঙেছিল পুলিশের সাতটি গাড়ি। 


পুলিশ জানিয়েছে, গণ্ডগোলের দিন আমডাঙায় বিভিন্ন ধরনের বন্দুক ছাড়াও পেটো বোমা, কৌটো বোমা, সকেট বোমা, পিন বোমা-সহ হ্যান্ড গ্রেনেডের মতো দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি মারাত্মক শক্তিশালী বোমাও ব্যবহার হয়েছিল। আমডাঙায় ওই বোমা ও অস্ত্র মজুতের পিছনে জাকির ভল্লুকের সরাসরি হাত ছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। 


২০১৮ সালের ১৪ মে পঞ্চায়েত ভোটের দিন সকালে আমডাঙা থানার সন্তোষপুর মোড় সংলগ্ন এক পরিত্যক্ত কারখানা থেকে ৪০ টা তাজা বোমা ও বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার হয়। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বইছগাছার ঘোষপাড়া মাঠ থেকে ১০০ ড্রাম বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।


ওই সময়ের এক পুলিশ কর্তার কথায় সিপিএম নেতা জাকির ভল্লুকের অস্ত্রভান্ডার ছিল ঘোষপাড়া মাঠ। মাটি খুঁড়তেই শিউরে উঠি আমরা। সারি সারি ড্রাম মাটির নিচে। তার মধ্যেই ছিল তাজা বোমা। পরে ১৯ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে আমডাঙার বর্তির বিল থেকে উদ্ধার হয় বিপুল বোমা। ২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে জন্ম নেয় নতুন দল আইএসএফ। সিপিএম, কংগ্রস ও তৃণমূলের একটা অংশ নতুন দলে ভিড় করে। 


ওই বছরের ২৬ এপ্রিল খেলিয়া গ্রামের একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার হয়েছিল ২ ড্রাম তাজা বোমা এবং ১ ড্রাম বোমা বাঁধার মশলা। পুলিশের দাবি, ওই ড্রামের মধ্যে ২২টি তাজা বোমা ছিল। এই বিপুল পরিমাণ বোমা উদ্ধার ঘিরে তৃণমূল এবং আইএসএফ একে অন্যের ওপর দোষ চাপায়। 


আগের তুলনায় আরও বদলেছে আমডাঙা। সিপিএম ভেঙে শক্তিশালী হয়েছে নতুন দল আইএসএফ। তৃণমূলের একটা অংশ যোগ দিয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। সব মিলিয়ে ভোটের আগে ফের মজুত হচ্ছে বোমার মশলা। পুলিশের কাছে আসছে সেই খবর।বারাসত পুলিশ জেলার এসডিপিও হাবড়া রোহিত শেখ বলেন, "আমরা সর্তক আছি। নজরদারি চলছে। কে কি করছে তার খোঁজ খবর নিচ্ছি। অশান্তি এড়াতে যা যা করার দরকার সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad