জাহাজ বাড়ি বানিয়ে লোন মেটাননি! তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানকে নোটিশ ব্যাঙ্কের
নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, ২০ এপ্রিল: বাড়ি তৈরির জন্যে ঋণ নিয়েছিলেন, লোন করিয়ে দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা, সময়ে লোন পরিশোধ না করায় নন্দীগ্রামের নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি শেখ সুফিয়ানকে ঋণ খেলাপি নোটিস ধরাল ব্যাঙ্ক, শুভেন্দুকে গিয়ে বলুন, বিস্ফোরক সুফিয়ান।
জাহাজের আদলে তৈরি বাড়ি। এক কথায় অট্টালিকা। বাড়িটির মালিক তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। এক সময় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর কাড়ে এই বাড়িটি।
নিয়োগ দুর্নীতি কিংবা পাচার তদন্ত নেমে একের পর এক তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি এই আবহেই নন্দীগ্রামের দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানকে ঋণ খেলাপি নোটিশ ধরালো ব্যাংক। সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে জাহাজ বাড়ি তৈরির জন্য ২৫ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন এবং ২০২০ সালে একটি ট্রলার কেনার জন্য ২৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলেন সুফিয়ান। জাহাজ বাড়ির বেশির ভাগ টাকা পরিশোধ করলেও এখনও প্রায় সাত লক্ষ টাকার কাছাকাছি ঋণ মেটানো বাকি রয়েছে এবং ট্রলারের ঋণের কোনও টাকা এখন অবধি দেননি। যার কারণেই কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক শেখ সুফিয়ান এবং তার লোনের গেরেন্টারদের নোটিশ পাঠায়।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ, এখনও প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা ঋণ পরিশোধ করেনি শেখ সুফিয়ান। যদিও, গোটা বিষয়টিকে চক্রান্ত বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। তিনি বলেন, 'ব্যাঙ্ক কোনও নোটিশ দেয়নি, নোটিশ দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই, কারণ টাকা আমি পরিশোধ করছি।' তিনি বলেন, '২০১৪ সালে হাউজ বিল্ডিং লোন নিয়ে জাহাজ বাড়িটা করেছিলাম। আমার ফিক্সড ডিপোজিট আছে, আর অল্প কিছু টাকা দিলে লোনটা শোধ হয়ে যাবে। আমি চেয়েছিলাম কিছু ইন্টারেস্ট মুকুব করতে, ওরা করেনি, সেই ব্যাপারে ব্যাঙ্ক টাকা পাবে।'
তিনি আরও বলেন, :আর একটা ট্রলার নিয়েছিলাম ২০২০ সালে ২৭ লক্ষ টাকা ঋণে। সেই ট্রলার আমাকে ২০২২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্ক হ্যান্ডওভার করেছে। আমার কথা, তাহলে আমি কেন ২০২০ সাল থেকে সুদ দেব! ২০২২ এ ২রা ফেব্রুয়ারি যখন দিয়েছে, ঐ সময় থেকে আমার ইন্টারেস্ট সহ টাকা পেমেন্ট করানো হোক। কিন্তু ব্যাঙ্ক সেটা করেনি, তাই টাকাটা পরে আছে। অতএব ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে আমি এফআইআর করব, লোক আদালতে যাব ব্যাঙ্ক আমার সঙ্গে দ্বিচারিতা করেছে, চিটিংবাজি করেছে; আমাকে সময়ে ট্রলার না দিয়ে ২ বছর পর দিয়েছে।' তিনি এও বলেন, ব্যাঙ্ক ওটা করলে নিশ্চিতভাবেই তিনি টাকা দিয়ে দেবেন।
এদিকে এই লোন প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা প্রলয় পাল কটাক্ষের সুরে বলেন, “১০০দিনের কাজ, আবাস যোজনার বাড়ি সহ একাধিক চুরির থেকে বাঁচাতে এই লোন দেখানো হয়েছে।সমগ্র ঘটনা শুধুই আইওয়াশ মাত্র। মানুষ বুঝবে যে হিরু ডাকাতের বংশধর সুফিয়ান লোন করে বাড়ি করেছে।”
সিপিএম নেতা পরিতোষ পট্টনায়ক বলেন, ”হলদি নদীর পাড়ে জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। যা দেখতে স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কোলে বসা ব্যবসায়ীরা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। আর দিদির স্নেহধন্য সুফিয়ান বাবুও সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন। আখেরে ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের।”
তবে, বিরোধীদের কটাক্ষকে পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, "আমি কেন বিরোধীদের কথায় কান দেব! আমি ব্যবসা করব, আমি বাড়ি করব।' ২০১৪ সালে বিজেপির তো কোনও পাত্তাই ছিল না। আমি কি বিরোধীকে দেখে লোন নিয়েছিলাম?'
তিনি বলেন, 'তখন তো শুভেন্দু অধিকারী ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন, আমাকে লোন করিয়ে দিয়েছিলেন। এখন শুভেন্দু অধিকারীকে বলুক গিয়ে যে কেন লোন দিয়েছিলেন! এসব বিরোধীদের কথায় কান ভারি করতে আমি নারাজ।'
No comments:
Post a Comment