এ এক অন্য কাহিনী! দুধের শিশুকে বুকে বেঁধেই টোটো চালাচ্ছেন বাবা
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২২ এপ্রিল: 'বাবা', শব্দটি উচ্চারণেই মাথার ওপর একটি বড় ছাদের অনুভূতি। সারা জীবন সব কষ্ট দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে এবং শত বাঁধা পার করেও সন্তানকে সুষ্ঠু ভাবে প্রতিপালন করতে দিন-রাত এক করে দিতেও দুবার ভাবেন না বাবা-রা। এমনই এক বাবার কাহিনী বর্তমানে সংবাদ শিরোনামে। এ যেন এক অন্য কাহিনী, সন্তানকে প্রতিপালনের এক অনন্য সংগ্ৰাম, যা প্রতিদিন করে চলেছেন উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার বাসিন্দা, পেশায় টোটো চালক (ই-রিক্সা ড্রাইভার) কমলেশ।
জেলার ডকটি থানার অন্তর্গত চিরঞ্জি ছাপরা গ্রামের কমলেশ ভার্মা, বয়স ৪০ বছর। কমলেশের স্ত্রী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। রেখে গিয়েছেন সোয়া এক বছর বয়সী এক দুধের শিশু কন্যাকে। কমলেশের মা অসুস্থ, তার ওপর আবার চোখের অপারেশন হয়েছে। ফলত এক রত্তি মেয়ের দেখাশোনার দায়িত্ব কেবলই তাঁর ওপর। অথচ পেট ও সংসারও চালাতে হবে। তাই ওই এক রত্তি মেয়েকে বুকে বেঁধেই টোটো চালাতে বেরিয়ে পড়েন কমলেশ। সঙ্গে রাখেন মেয়ের দুধের বোতল, ক্ষিদে কাঁতরালে মেয়েকে দুধ পান করিয়ে চুপ করান। প্রখর রোদে এভাবেই সংগ্ৰাম চালিয়ে যাচ্ছেন এক বাবা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি কমলেশের কাহিনী বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। কমলেশ 'পিটিআই-ভাষা' কে জানিয়েছেন যে গত মার্চ মাসে তাঁর মায়ের চোখের অপারেশন হয়েছিল এবং ছয় মাস আগে ট্রেন থেকে পড়ে তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন, তাই সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য পরিবারে আর কেউ নেই। তিনি ফেব্রুয়ারি থেকে তার মেয়েকে বুকে বেঁধে ই-রিকশা চালাচ্ছেন।
কমলেশ জানান, তিনি প্রতিদিন ভোর ছয়টায় ই-রিকশা নিয়ে চলে যান এবং মেয়ের জন্য দুধ সঙ্গে রাখেন। তিনি বলেন, “আমি আমার মেয়ের মা এবং বাবা উভয়ই। শিশুটি যদি মাঝে মাঝে কান্নাকাটি শুরু করে তবে তাকে শান্ত করতে আমার কোনও সমস্যা হয় না।" তবে, হ্যাঁ! শুরুতে সমস্যা ছিল। একথাও জানিয়েছেন তিনি।
তাঁর এই প্রতিদিনের সংগ্ৰামের কাহিনী জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছালে, কমলেশকে সমস্ত সম্ভাব্য সাহায্য এবং সরকারি প্রকল্পের সুবিধার আশ্বাস দেওয়া হয়। কমলেশের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন জনপ্রতিনিধি ও সমাজকর্মীরাও।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রবীন্দ্র কুমার 'পিটিআই-ভাষা' কে জানিয়েছেন যে বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁর নজরে এসেছে। তিনি বলেন, “প্রশাসনের তরফে কমলেশকে সবরকম সাহায্য করা হবে। আমি নিশ্চিত করব যে কমলেশ পেনশন এবং রেশন কার্ড এবং সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে কমলেশের সাথে কথা বলব এবং তাঁর শিশুর ভালো লালন-পালন এবং পরিবারের সাহায্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।”
স্থানীয় বিধায়ক জয়প্রকাশ আঁচল বলেন, শিশু কন্যাকে সাথে নিয়ে কমলেশের মই-রিকশা চালানোর ছবি এবং ভিডিও দেখে তার হৃদয় সিক্ত হয়। তিনি জানান, তিনি তার পর্যায় থেকে কমলেশকে আর্থিক সহায়তা দেবেন এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করবেন। স্থানীয় সাংসদ বীরেন্দ্র সিং মাস্টের একান্ত সচিব আমন সিং বলেন, তিনি কমলেশকে একটি বাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
আমন সিং বলেন, 'কমলেশ ভাড়ার ই-রিকশা চালান। আমি চেষ্টা করব কমলেশকে ব্যাঙ্ক থেকে লোন পাইয়ে দেওয়ার, যাতে সে নিজে একটা ই-রিকশা কিনতে পারেন। এটি তাকে স্বাবলম্বী করে তুলবে।' সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মনীশ সিং জানান, কমলেশকে সাহায্য করতে তিনি সমাজের সচেতন মানুষের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করবেন।
No comments:
Post a Comment