শিশুদের টাইফয়েড হলে তাদের কি খাওয়ানো উচিৎ বা উচিৎ নয় জেনে নিন - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, 9 April 2023

শিশুদের টাইফয়েড হলে তাদের কি খাওয়ানো উচিৎ বা উচিৎ নয় জেনে নিন


প্রতি বছর আমাদের দেশে অনেক সংক্রামক রোগ দেখা দেয়, যার মধ্যে একটি সংক্রামক রোগ হল টাইফয়েড। যেটি ইন্টারমিটেন্ট ফিভার বা মতিঝার জ্বর নামেও পরিচিত। এই জ্বর যদি অন্ত্রকে বেশি প্রভাবিত করে, তবে তাকে অভ্যন্তরীণ জ্বরও বলা হয়।

এই সংক্রামক রোগটি লিভারের সাথে সম্পর্কিত যা সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ছড়ায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই রোগে শিশুরা প্রায়শই যে কোনও কিছু খাওয়ার পরে বমি করে। তাই টাইফয়েড হলে শিশুদের খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।

এই জ্বর ২ বছর থেকে শুরু করে বয়স্কদেরও হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই জ্বরকে বিপজ্জনক রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই জ্বর দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক টাইফয়েডের সময় শিশুদের খাদ্য কী হওয়া উচিৎ। কারণ এই জ্বরের সময় যত্ন ও খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

টাইফয়েডের সময় শিশুদের  ডায়েট প্ল্যান -

টাইফয়েডের কারণে ঘাম, বমি, ডায়রিয়ার কারণে শিশুদের  শরীরে তরল পদার্থের অভাব দেখা দেয়। তাই তাদের  বেশি করে তরল, যেমন- ফলের রস, সবজির স্যুপ ইত্যাদি দিতে হবে।  আধা ঘন্টা পরপর শিশুকে কিছু তরল খাবার দিতে থাকুন।  ডাক্তার ওআরএস সলিউশন দেওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন যাতে শিশুর শরীরে জলের অভাব পূরণ করা যায়।

টাইফয়েড জ্বর হলে শিশুদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি হয়, যার কারণে তারা কিছু খেতে চায় না।  এমতাবস্থায় শিশুর এনার্জি লেভেল ঠিক রাখতে এবং তাদের ভালো রাখার জন্য তাদের খাবার ও পানীয়ের সম্পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে। তাদের মাঝে মাঝে কিছু খেতে দিতে হবে, যাতে তারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়।

টাইফয়েডের কারণে শিশুদের শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেয়।  তাই পালং শাকের স্যুপ বা জুস বানিয়ে বাচ্চাদের দিন। পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতা সম্পূর্ণ হয়।  এই রোগে তাজা সবুজ শাকসবজি খাওয়া উপকারী।  শিশুকে তাজা ফল, যেমন- আপেল, কমলা ইত্যাদি দিতে হবে। শিশু ছোট হলে জুস বা পিউরি বানিয়ে তাকে দিতে পারেন।

জল দেওয়ার সময় মনে রাখবেন যে জল ফিল্টার করে নিতে হবে এবং তারপরে এটি ঠাণ্ডা করার পরেই শিশুকে দিতে হবে। কারণ এই রোগটি জলের মাধ্যমেই বেশি ছড়ায়। তাই এই জিনিসটির যত্ন নিন। জলে মিশিয়ে গ্লুকোজও দেওয়া যেতে পারে।

হালকা গরম জলে এক চা চামচ মধু মিশিয়েও শিশুদের দিতে পারেন।

মুগ ডাল দ্রুত হজম হয় এবং টাইফয়েড হলে শিশুদের এমন খাবার দেওয়া উচিৎ যা দ্রুত হজম হয়। সেজন্য মুগ ডালের খিচুড়ি বানিয়ে নিতে পারেন।

টাইফয়েড হলে আপনার বাচ্চাদের নারকেলের জল দিতে হবে।

যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তবে যতবার সম্ভব বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ। এটি আপনার শিশুকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি দেবে।

শিশুদের ঘরে তৈরি, পরিষ্কার, গরম ও পুষ্টিকর খাবার দিন।  টাইফয়েড হলে শিশুদের বাইরের বাসি ও খোলা খাবার খেতে দেওয়া উচিৎ নয়। পাশাপাশি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পূর্ণ যত্ন নিন। বাচ্চাদের খাওয়ানোর আগে ভালো করে হাত ধুয়ে তারপরই খাওয়ান।

বাচ্চাদের অবশ্যই ডালিয়া, উপমা, পোহা, মুগ ডাল, সাবুর খিচুড়ি, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি দিতে হবে।

এই সময়ে শিশুকে ভাজা এবং মশলাদার খাবার খাওয়াবেন না।

শিশুকে অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদনকারী খাবার দেবেন না।

দানা জাতীয় খাবার,যেমন- ভুট্টা ইত্যাদি বাচ্চাদের দেবেন না।  এমনকি তাদের পেঁপে এবং মিষ্টি আলুও দেবেন না।

টাইফয়েড হলে কখনোই শিশুদের ভারী খাবার বা বাসি খাবার দেবেন না।

টাইফয়েড সাধারণত দূষিত জল এবং খাবারের মাধ্যমে ছড়ায় এবং শিশুদের মধ্যে এর লক্ষণ শনাক্ত করা কঠিন। সাত থেকে আট দিন পর এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। টাইফয়েড একটি হালকা জ্বর দিয়ে শুরু হয় যা ধীরে ধীরে উচ্চ জ্বরে পরিণত হয়। এই জ্বর সকালে কম থাকে  এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে জ্বরও বাড়তে থাকে।

যেখানে দূষিত জল থাকে এবং নোংরা থাকে সেখানে টাইফয়েড পাওয়া যায়। শিশুর মল ত্যাগের সময় ব্যাকটেরিয়া জলে মিশে যায় এবং তখন তাদের ওপর বসে থাকা মাছি রোগ ছড়াতে সাহায্য করে। টাইফয়েড জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দুই ধরনের টিকা দেওয়া হয়, যার মধ্যে প্রথম ধরনের টিকা ইনজেকশন আকারে দেওয়া হয় এবং তা নয় থেকে বারো মাস বয়সী শিশুকে দেওয়া হয়।  এর পরে, দুই বছর এবং চার বছর থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুকে দুটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।  এর সাথে, এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং শিশুদের খাবার ও পানীয়ের সম্পূর্ণ যত্ন নিতে হবে।

ছয় মাসের কম বয়সী শিশুর টাইফয়েড -

এখানে উল্লেখ্য যে, শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো বাধ্যতামূলক। ছয় মাসের কম শিশুদের টাইফয়েড হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। টাইফয়েড প্রায়ই ছয় দিনের জ্বরের পর ধরা পড়ে, তাই আপনার শিশুর যদি ছয় দিনের বেশি জ্বর থাকে, তাহলে টাইফয়েডের বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বি.দ্র: এখানে দেওয়া তথ্য সাধারণ জ্ঞান ও ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে দেওয়া। প্রেসকার্ড নিউজ এটি নিশ্চিত করে না। কোনও নতুন কিছু শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞর পরামর্শ অবশ্যই নিন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad