'বিরাট চক্রান্ত', জলপাইগুড়িতে জোড়া আত্মহত্যা মামলায় বিস্ফোরক দিলীপ
নিজস্ব সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি, ২৩ এপ্রিল: 'এটা একটা বিরাট চক্রান্ত এবং তৃণমূলের লোকেরাই এর সঙ্গে যুক্ত', জলপাইগুড়ি জোড়া আত্মহত্যা মামলায় এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের ১ তারিখ কীটনাশক পান করে আত্মঘাতী হন জলপাইগুড়ির পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারপারসন অপর্ণা ভট্টাচার্য ও তার স্বামী সুবোধ ভট্টাচার্য। এই জোড়া আত্মহত্যার ঘটনায় সরগরম জলপাইগুড়ির রাজনীতি। মৃত দম্পতির ঘর থেকে উদ্ধার সুইসাইড নোটে জলপাইগুড়ির পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি সৈকত চ্যাটার্জী ও আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম রয়েছে।
দোষীদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে মৃত সুবোধ ভট্টাচার্যের দিদি তথা বিজেপি বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জী কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত একজনকেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। রবিবার ওই মৃত দম্পতির একমাত্র কন্যা তানিয়া ভট্টাচার্য ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। দোষীদের গ্রেফতারের দাবী জানানোর পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই ঘটনা নিয়ে সরব হন এবং রাজ্যের শাসক দলকে এক হাত নেন তিনি।
তিনি বলেন বলেন, "খুবই মর্মান্তিক এই আত্মহত্যার ঘটনা। এটা একটা বিরাট বড় চক্রান্ত। দেড় দু'বছর আগে থেকে তাদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল এবং যারা দিচ্ছিল তারা খুব প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই ঘটনার পেছনে যারা মূল অভিযুক্ত এই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান এবং এখানকার তৃণমূলের যুব নেতা তিনি এক নম্বর আসামি এবং তার চ্যালা-চামুণ্ডা তারাও আসামি হিসেবে আছেন। তাই আজ পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। আমাদের ধারণা পুলিশ পুরোপুরি তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।"
দিলীপ ঘোষের দাবী, এদের হাত অনেক দূর। তিনি বলেন, 'যে মুখ্য নেতা, তিনি খালি এই ব্যাপারে নন, কয়েক বছর আগে আমাদের কিছু নেতাকর্মীকে শিশু পাচারের চক্রান্তে জড়ানো হয়েছিল, তার পেছনে ওনার হাত ছিল।' তার আরও অভিযোগ, 'যে বিরাট শিক্ষা দুর্নীতি চলছে তার মধ্যে যারা কলাকুশলী; কুন্তল, শান্তনুর মত তাদের সঙ্গেও এনার সম্পর্ক আছে এবং ছিল। এমনকি শান্তনু একসময় এসে ওনার বাড়িতেও থেকেছে, এমন জানা যায়।'
বিজেপি সাংসদ বলেন, 'টাকা পয়সার লেনদেন এবং অনেক অসামাজিক কাজের সঙ্গে তার যোগ আছে, এটা খালি আমি বলছি না, তার দলের লোকেরাও বলে। কিন্তু পয়সা এবং ক্ষমতা থাকার জন্য তার গায়ে পুলিশ হাত দিতে পারছে না।' খোঁচা দিয়ে বলেন, 'তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও চেয়ে আর আলো করে বসে থাকেন, স্বাভাবিকভাবেই তার গায়ে হাত দেওয়া মুশকিল। এই ধরণের যারা ব্যক্তি রাজনীতিক ক্ষমতা নিয়ে বসে আছেন, কিন্তু অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত, আর তারা খুনও করতে পিছপা হচ্ছে না। তার ফলে এই ধরণের একটা পরিবার শেষ হয়ে গেল।'
তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের দল থেকে পুরো চাপ দিচ্ছি, এর বিরোধিতাও করেছি এবং পুলিশের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। এমনকি সুইসাইড নোট, যা এই কেসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নথি, আমাদের যতদূর জানা আছে, এখনও পর্যন্ত সেটা কোর্টে জমা হয়নি।' তাঁর প্রশ্ন, 'কার স্বার্থে পুলিশ এই অপকীর্তি করছে?'
তিনি অভিযোগ করেন, তথ্যকে লুকানোর চেষ্টা করছে, যাতে দোষীরা ধরা না পড়ে এবং সেই নেতাকে বাঁচিয়ে বাকিদের যাতে গ্ৰেফতার করা যায়, এও পুলিশ করছে। 'কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এই পরিবারের সঙ্গে আছি', বলেন বিজেপির সহ-সভাপতি।
রাজ্যের শাসক দলকে নিশানা করে তিনি বলেন, 'এই ধরণের অপকীর্তি দিন প্রতিদিন বাড়ছে। কালিয়াগঞ্জের ঘটনাও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে না, সাজা দিতে পারে না, আর ঘটনা ঘটলেই বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। তিলজলাতেও এই ঘটনা ঘটেছিল; সাত বছরের মেয়েকে রেপ ও হত্যা করা হয়েছে।'
দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, কোনও সাজা কেউ পায় না। তিনি বলেন, 'অ্যারেস্ট হয় না, এফআইআর, চার্জশিট হয় না, সাজা তো দূরের কথা। ফলে প্রতিনিয়ত এই ধরণের অসামাজিক ক্রিয়া-কলাপ বাড়ছে, সমাজের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ। আর সেই লোকগুলোই কোনও না কোনও ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে, এর সঙ্গে যুক্ত।"
অপরদিকে, মৃত ব্যক্তির দিদি তথা বিজেপি বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জী বলেন, 'এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের আজ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হল না।' গ্ৰেফতার না হলে পরবর্তীতে যেখানে যেতে হয় যাব, বলেও কার্যত হুঁশিয়ারি দেন শিখা চ্যাটার্জী। দল যেভাবে বলবে, সেটা মেনেই চলবেন বলেও তিনি জানান।
No comments:
Post a Comment