প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য! পৌরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যানের সুইসাইড নোটে তৃণমূল যুব নেতার নাম - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday 2 April 2023

প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য! পৌরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যানের সুইসাইড নোটে তৃণমূল যুব নেতার নাম


জলপাইগুড়ি পৌরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অপর্ণা ভট্টাচার্য এবং তাঁর স্বামী সুবোধ ভট্টাচার্যের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। মৃতদের ঘর থেকে উদ্ধার চার পাতার সুইসাইড নোট এবং তাতেই রয়েছে জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি সহ একাধিক তৃণমূল নেতার নাম, কোতয়ালি থানার দ্বারস্থ মৃত ব্যক্তির দিদি তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ী বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জী। অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূল নেতার।


জলপাইগুড়ি পুরসভার ১২ নং ওয়ার্ড, পান্ডা পাড়া জয়লেন এলাকায় শনিবার দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হয়েছিল, এটি কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ঘর থেকে উদ্ধার হয় সুইসাইড নোট। যাতে উঠে এসেছে জলপাইগুড়ির পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসে সভাপতি সৈকত চ্যাটার্জী এবং পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপ ঘোষ সহ আরও কয়েকজন তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা। পাশাপাশি ঐ সুইসাইড নোটে চাকরির নামে তোলা টাকা ফিরিয়ে দিতে চাপ দেওয়া এবং রাজনৈতিক নেতাদের চাপের কাছে অসম্মানিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও লেখা। 


উদ্ধার হওয়ার সুইসাইড নোটে লেখা, 'সৈকত চ্যাটার্জী ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চক্রান্ত করেছিলেন তার বিরুদ্ধে। আমার (অপর্ণা) কাছ থেকে আমার স্বাক্ষর করা ছয়টি খালি চেক, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ওপর চুক্তিপত্র সৈকত চ্যাটার্জী নিয়ে যান। আমি ও আমার স্বামী সমাজে অসম্মানিত, আমরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম।' সুইসাইড নোটে দম্পতির স্বাক্ষরও রয়েছে। 


এর ভিত্তিতে রবিবার জলপাইগুড়ি কোতয়ালি থানার দ্বারস্থ হন মৃত সুবোধ ভট্টাচার্যের দিদি তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ীর বিজেপি বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জী। থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। 


সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এদিন শিখা চ্যাটার্জী বলেন, 'এই সরকার থাকাকালীন এইসবই চলবে। আমার ভাই ও ভাইয়ের বৌ যারা সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত ছিল, তারা চলে গেল। যারা সব সময় মানুষের পাশে থেকেছে, তাদের ব্ল্যাকমেল করে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ব্ল্যাকমেইল করে তাদের দিয়ে ব্ল্যাংক চেক লিখে নেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের আচরণ একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষেই সম্ভব।'


তিনি আরও বলেন, '২০১৭ সালে শিশু চুরি কাণ্ডের হোতাদের ধরতে সাহায্য করেছিলেন সুবোধ ভট্টাচার্য। উল্লেখ্য, শিশু কল্যাণ কমিটির প্রাক্তন সদস্য ছিলেন সুবোধ ভট্টাচার্য। বিজেপি বিধায়কের অভিযোগ, তারপর থেকেই বারবার তার ওপর প্রেসার দেওয়া হচ্ছে।' শিখা চ্যাটার্জী বলেন, সেই সময় সবাইকে ধরা হয়নি। এদের মধ্যে প্রভাবশালী ছিলেন সৈকত চ্যাটার্জী। তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে যে কয়জন তার চামচা বেলচা ছিল তাদের সরিয়ে নিয়েছেন এবং নিজেও কোনও রকম ভাবে সাইড কেটে গেছেন।' তিনি জানান, তাঁর ভাই এই প্রেসারের কথা একাধিকবার তাঁকে জানিয়েছেন। এদিন দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী করেন তিনি। 


অপরদিকে, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সৈকত চ্যাটার্জী। তিনি এও বলেন, 'আমি যদি দোষী হই, তাহলে গ্রেফতার করবে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক ব্যানার্জীর সৈনিক। পাশাপাশি সুইসাইড নোট নিয়েও একাধিক প্রশ্ন তোলেন তিনি। 


সৈকত চ্যাটার্জী বলেন, 'সকাল সাড়ে ৫ টা নাগাদ অপর্ণা দেবী ও তার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। আর সুইসাইড নোট বাড়ির লোক খুঁজে পান সকাল ১১ টার সময়। তার কথায় প্রাথমিকভাবে প্রথম ৬ ঘন্টায় কোন সুইসাইড নোট খুঁজে হয়নি। এছাড়াও তারা যখন সুইসাইড কমিট করেন, সেটা ছিল এপ্রিলের এক তারিখ এবং সুইসাইড নোটে ৩১ শে মার্চের উল্লেখ রয়েছে। এমনকি এফআইআরেও ৩১ তারিখ লেখা হয়েছে। ময়নাতদন্তে রিপোর্ট আসলেই বোঝা যাবে বিষ খাওয়ার কতক্ষণের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এবং কোন তারিখে হয়েছে।'


সৈকত চ্যাটার্জীর অভিযোগ এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র এবং এর মূল পান্ডার নাম শিখা চ্যাটার্জী। পাল্টা অন্য একটি এফআইআর দেখিয়ে অপর্ণা ভট্টাচার্য ও সুবোধ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে চাকরির নামে টাকা তোলার অভিযোগ করেন তিনি। সেইসঙ্গেই এটাও উল্লেখ করেন শিখা চ্যাটার্জীকে দেখেই এই টাকা দেওয়া হয়েছিল এবং তখন তিনি তৃণমূলে ছিলেন।'


শিখা চ্যাটার্জীকে খোঁচা দিয়ে তৃণমূল নেতা বলেন, আজ উনি ওয়াশিং পাউডার নিরমা (বিজেপি)তে গিয়ে শুধু গেছেন। তৃণমূল নেতার দাবী তাকে গ্রেফতার করলে একই সঙ্গে শিখা চ্যাটার্জীকেও গ্ৰেফতার করতে হবে। 


প্রসঙ্গত, শনিবার, জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অপর্না ভট্টাচার্য ও তাঁর স্বামী সুবোধ ভট্টাচার্যের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। জলপাইগুড়ি পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের পান্ডা পাড়ার বাড়ি থেকে অসুস্থ অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাদের দুজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। 


২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন অপর্না ভট্টাচার্য। ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি, পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দেন। অপর্না ভট্টাচার্যর স্বামী সুবোধ ভট্টাচার্য একসময় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য ছিলেন। সুবোধ ভট্টাচার্য সম্পর্কে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চ্যাটার্জীর ভাই। ভাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন শিখা দেবী। পুলিশ জানায়, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। তবে ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই চাঞ্চল্যকর মোড় নিল এই মৃত্যুর ঘটনা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad