ফোম কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড! চার শ্রমিক জীবন্ত দগ্ধ, চলছে উদ্ধার কাজ - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday 11 May 2023

ফোম কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড! চার শ্রমিক জীবন্ত দগ্ধ, চলছে উদ্ধার কাজ

 


ফোম কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড! চার শ্রমিক জীবন্ত দগ্ধ, চলছে উদ্ধার কাজ 



প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ১১ মে : অশোকা পিইউ ফোম ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের একটি বিশাল বিস্ফোরণের পরে যে আগুন লেগেছিল তাতে চার কর্মচারী জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন।


 অনেকে দগ্ধ হয়েছেন।  এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর, যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  এক যুবক এখনও নিখোঁজ রয়েছে।


 বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদপুরের মেগিগালা গ্রামের রামপুরবাগের বাসিন্দা অশোক গয়ালের অশোকা পিইউ ফোম ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডে বিকট বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়।  দুর্ঘটনার সময় কারখানায় প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন এবং আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পদপিষ্ঠ হয়।  সেখানে রাখা ফেনা বারুদের মতো জ্বলতে থাকে এবং তা থেকে কয়েক ফুট উচ্চতার শিখা বের হতে থাকে।


 খবর পেয়ে সিএফও চন্দ্রমোহন শর্মা ফরিদপুর ও বেরেলির ১২টি দমকল কর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে শুরু করেন।  এ অগ্নিকাণ্ডে চারজন কর্মচারী জীবিত দগ্ধ এবং অনেকে ঝলসে গেছে।  মৃত দুজনের নাম হরিহরপুরের বাসিন্দা অরবিন্দ মিশ্র এবং সারকাদার রাকেশ।  নিহত অপর দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।  আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে করণপুরের বাসিন্দা বাবলু ও জিতেন্দ্র, জাদে ও দেশরাজের বাসিন্দা।  একইসঙ্গে ফরিদপুরের মহল্লা ফররাখপুরের বাসিন্দা অনুপ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।


 ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কারখানা, জেসিবি দিয়ে মৃতদেহ সরানো হচ্ছে

 অশোকা পিইউ ফোম ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের আগুনে পুরো কারখানাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।  কারখানার অ্যাঙ্গেল ও গার্ডার ভেঙে পড়ে এবং শ্রমিকরা তাদের নিচে চাপা পড়ে।  গ্যাস কাটার দিয়ে এঙ্গেল কেটে জেসিবি দিয়ে চারটি দেহ বের করা হয়।  আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে সেখান থেকে প্রায় ২০ ফুট উঁচু শিখা বেরিয়ে আসতে থাকে এবং কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে বহু কিলোমিটার পর্যন্ত।  গভীর রাতে ডিএম শিবকান্ত দ্বিবেদী এবং এসএসপি প্রভাকর চৌধুরীও ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।



প্রায় এক একর জমির উপর অশোক ফোম ফ্যাক্টরি অবস্থিত।  পুরো ক্যাম্পাসে টিনশেডের ভেতরেই চলছিল কারখানা।  আগুন লাগার পর ভারী লোহার অ্যাঙ্গেল নিচে পড়ে যায়।  এ কারণে দুই ঘণ্টার মধ্যে পুরো কারখানাটি ধসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।  প্রাণ বাঁচিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসা কর্মচারীরা জানান, যে চত্বরে আগুন লেগেছে, তা প্রায় দুই বিঘা এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।  রাত আটটা থেকে দ্বিতীয় শিফট শুরু হওয়ার কথা থাকায় ওই সময় সেখানে উপস্থিত প্রায় দেড় শতাধিক কর্মচারী বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।  কেউ কিছু বোঝার সুযোগ না পেয়ে যেখানেই পথ পেল, দৌড়ে গেল।


 এতে সেখানে পদদলিত ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।  কারখানাটি দুটি ভাগে বিভক্ত এবং কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে।  এতে ফায়ার ব্রিগেডের দুটি গাড়ি অন্য কারখানার দিকে ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয়।  আগুন লাগার খবর পেয়ে আশেপাশের গ্রামের দর্শকরা সেখানে পৌঁছান।  মহাসড়ক দিয়ে যাওয়া লোকজনও তাদের যানবাহন থামিয়ে আগুন দেখতে থাকে, যার কারণে সেখানে জ্যাম হয়।  ফরিদপুরের পরিদর্শক দয়াশঙ্কর ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিড় সরিয়ে জ্যাম খুলে দেন।  কারখানার কালো ধোঁয়া পূর্ব ফতেহগঞ্জ পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছে বলে জানান লোকজন।


 অশোক ফোম কারখানায় বহুবার আগুন লেগেছে

 সিএফও চন্দ্রমোহন শর্মা জানিয়েছেন, আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।  ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নিরূপণ করা হয়নি।  আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হবে।  ঘটনাস্থলে নিখোঁজ কর্মীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।


 অনেক রাজ্য থেকে কর্মচারী আছে

 কর্মচারীরা জানিয়েছেন, বিহার, উত্তরাখণ্ড সহ আশেপাশের অনেক রাজ্যের শ্রমিকরা কারখানায় কাজ করেন।  তাদের বের হওয়া বা আটকা পড়ার খবর দেওয়ার কেউ নেই।  এ কারণে আরও কয়েকজন কর্মচারীরও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।



দুর্ঘটনার পর কারখানার পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ায় নিখোঁজদের খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে।  এ নিয়ে গ্যাস কাটার দিয়ে লোহার অ্যাঙ্গেল ও চাদর কেটে লোকজনের খোঁজ শুরু হয়।  কিন্তু দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় জেসিবি ডেকে ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু করা হয়।  তখনই চারটি দেহ বের করা সম্ভব হয়।


 

 অশোক ফোম কারখানার আশেপাশে আরও কয়েকটি কারখানা রয়েছে, যার কারণে আগুন নেভানো পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা ছিল।  আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে সেখান থেকে প্রায় কুড়ি ফুট দূরে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের চালাটি গলে যায়।


 এই আশ্বাস দেন ডিএম ও এসএসপি

 ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডিএম শিবকান্ত দ্বিবেদী এবং এসএসপি প্রভাকর চৌধুরীকে কর্মচারী এবং তাদের আত্মীয়রা ঘিরে ফেলেন।  কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তাদের।  কারখানাটি গ্যাসে চলে এবং কেমিক্যাল দিয়ে ফোন তৈরির কাজ করা হলেও সেখানে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই।  তাদের অভিযোগ, বিকট বিস্ফোরণের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার সময় গেট বন্ধ করে দেয়, ফলে শ্রমিকরা সেখানে আটকা পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।  এই বিষয়ে, ডিএম এবং এসএসপি এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং তদন্তের আশ্বাস দেন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad