ইতিহাসে অন্যতম সাক্ষী রাজস্থানের বিখ্যাত গ্যাগরন ফোর্ট
পিঙ্কি রায়,২৪ মে : শত্রুদের এড়াতে দেশে নির্মিত বিশাল দুর্গগুলোর সারা বিশ্বে অনেক খ্যাতি পেয়েছে। এই দুর্গের দিকে তাকালে মনে হয় দেশের ইতিহাস আজও নিঃশ্বাস ফেলে। কত রহস্য, কত গল্প জড়িয়ে রয়েছে এই দুর্গগুলিতে ? তাই যদি প্রাচীন শিল্প এবং ঐতিহ্য দেখতে শৌখিন হন, তাহলে ভ্রমণ তালিকায় রাজস্থানের গ্যাগরন ফোর্ট যেতে পারেন।
গ্যাগরন দুর্গ রাজপুত স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শন। এটি রাজস্থানের ঝালাওয়ার জেলায় অবস্থিত এবং এটি রাজস্থানের অন্যতম বিখ্যাত একটি দুর্গ। এই দুর্গটি তার গৌরবময় ইতিহাসের জন্যও পরিচিত। কথিত আছে, বহু বছর আগে শাসক অচলদাস খিনকি মালওয়ার শাসকের কাছে পরাজিত হন তো চলুন জেনে নেই এই দুর্গ সম্পর্কে-
গ্যাগরন ফোর্ট ২০১৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন। এটি ইতিহাসবিদদের কাছে রাজস্থানে দেখার জন্য সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি।
গ্যাগরন দুর্গটি ১২ শতকে রাজা বিসালদেব তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে, এখানে ১৪ জন যোদ্ধা ও দুজন জওহর স্থান পেয়েছে। উত্তর ভারতের এটাই একমাত্র দুর্গ, যেটি চারদিক থেকে জলে ঘেরা। এ কারণে এটি জলদুর্গ নামেও পরিচিত।
এটি এমন একটি দুর্গ, যা এখনও ভিত ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। মুকুন্দরা পাহাড়ে দুর্গের দেয়াল ও টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। এই পাহাড় নিজেই দুর্গের ভিত্তি প্রদান করে। কিংবদন্তি অনুসারে, যে স্থানে দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল সেটি গালকানগিরি নামে পরিচিত ছিল। ঋষি গর্গ ঋষি এখানে জ্ঞানলাভ করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
রাজা অচলদাস খেনি ছিলেন মালওয়ার বিখ্যাত গাগরন গড়ের শেষ প্রতাপশালী রাজা। ১৪৪০ খ্রিস্টাব্দে, মান্ডুর সুলতান হোশাংশাহ ৩০ হাজার অশ্বারোহী, পদাতিক এবং রাজাদের নিয়ে এই দুর্গটিকে ঘিরে ফেলেন। এই যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়। তারপর দুর্গের শত শত রাজপুত মহিলা শত্রুদের হাতে বন্দী হওয়া এড়াতে জওহরের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং জীবিত অবস্থায় নিয়ে যায়।
একটা সময় ছিল যখন দুর্গের ভেতরে ৯২টি মন্দির ছিল। আজ এই মন্দির সংখ্যা কমই দেখা যায়। ১০০ বছরের পঞ্জিকাও এখানে তৈরি হয়েছিল। গ্যাগরন দুর্গ বর্তমান দুর্গ থেকে আলাদা। এখানে তিনটি প্রাচীর রয়েছে, যেখানে রাজস্থানের অন্যান্য দুর্গগুলিতে মাত্র দুটি প্রাচীর রয়েছে।
কীভাবে যাবেন?
ফ্লাইটে: ঝালাওয়ারের নিকটতম বিমানবন্দরটি কোটায়। এটি ঝালাওয়ার থেকে মাত্র ৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কোটা বিমানবন্দর থেকে ঝালাওয়ার পর্যন্ত ক্যাব, ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন। রাজস্থান রোডওয়েজের বাসও এখান থেকে পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে ঝালাওয়ার পৌঁছতে পারেন।
ট্রেনে: যদি ট্রেনে গাগরন ফোর্টে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাহলে ঝালাওয়ারের নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল রামগঞ্জ মান্ডি। এই জংশনটি ঝালাওয়ার থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জংশন থেকে এই ফোর্টে ট্যাক্সি, ক্যাব বা স্থানীয় পরিবহন নিতে পারেন।
বাস বা গাড়িতে: যদি বাসে করে ঝালাওয়ার পৌঁছতে চান তবে এই রুটে অনেক সরকারি ও বেসরকারি বাস চলাচল করে। এখান থেকে গাড়ি বা ট্যাক্সি করে এই ফোর্টে যেতে পারেন।
No comments:
Post a Comment