সালিশি সভায় গৃহবধূকে মারধর
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ০৩ মে: পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে সালিশি সভায় মহিলাকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল স্থানীয় বিজেপি নেতা সহ চার জনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আমডাঙায়। ঘটনায় এক মহিলা সহ তিনজন জখম হয়েছেন। এই নিয়ে আমডাঙা থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন আক্রান্ত মহিলা শিপ্রা পাল। যদিও অভিযোগ অস্বীকার এবং এর পেছনে তৃণমূলের চক্রান্ত দেখছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা।
অভিযোগ, এদিন সকালে সালিশি সভার নামে ওই মহিলা ও তার স্বামীর ওপর চড়াও হয় বিজেপি নেতা সঞ্জীব ওরাং। তিনি আমডাঙার মরিচা পঞ্চায়েত এলাকার পশ্চিম ধনিয়া গ্রামের নির্বাচিত গ্রাম সদস্য। এছাড়াও মারধর ও গালিগালাজের অভিযোগ উঠেছে মানিক সরকার, বিশ্বজিৎ পাল ও মালা পাল। সকলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্ত শিপ্রা পাল।
আক্রান্ত মহিলা শিপ্রা পাল বলেন, 'পারিবারিক সম্পত্তিগত বিবাদে সঞ্জীব ওরাং এসেছিলেন মীমাংসা করতে। কিন্তু মীমাংসার অযুহাতে গুণ্ডাবাহিনী নিয়ে এসে আমার ও আমার স্বামীর ওপর চড়াও হয় এবং আমার শ্লীলতাহানি করে।'
তিনি জানান, পাশের কারও সহায়তায় কোনও রকমে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। আক্রান্ত মহিলা বলেন, 'আমি চাই প্রশাসনিক দিক থেকে সঞ্জীব ওরাং এবং আমার ভাসুর বিশ্বজিৎ পালের সঠিক বিচার হোক।' তিনি জানান, সঞ্জীব ওরাং বিজেপির প্রতিনিধি, মরিচা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের।
এদিকে এই ঘটনায় তৃণমূলের ইন্ধন রয়েছে বলেই বিজেপির অভিযোগ। আমডাঙার বিজেপি নেতা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'যে ঘটনা ঘটেছে সেটা পুরোপুরি চক্রান্ত। এর সঙ্গে আমাদের মেম্বার সঞ্জীব ওরাংয়ের কোনও যোগাযোগ নেই। যে মহিলা অভিযোগ করেছেন, তার ভাসুর তাকে ডেকেছিলেন তার জায়গায় পাঁচিল দেওয়া সংক্রান্ত ব্যাপারে যেন তার ভাইকে বলে দেওয়া হয়। সেই জন্যই তিনি গিয়েছিলেন।'
তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সঞ্জীব ওরাংয়কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিক নিগ্ৰহ করা হয়েছে এবং তিনি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আদহাটা ওসিকে ফোন করে বিষয়টি জানান।' তিনি বলেন, "এগুলো সব মিথ্যা অভিযোগ, চক্রান্ত। হয়তো তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত আছে।"
এদিকে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। পাল্টা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিজেপিকে এক হাত নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা। আমডাঙা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মঈন বলেন, 'তৃণমূল এর সঙ্গে জড়িত নয়, বিজেপি যা অভিযোগ করছে সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সালিশি সভাকে কেন্দ্র করে বিজেপি মহিলাদের ওপর অত্যাচার করেছে মহিলার শ্লীলতাহানি করেছে এবং ওই মহিলা আমডাঙা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি প্রশাসনকে বলব সেই বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।'
বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে তৃণমূল নেতা বলেন, "এই কৃষ্টি-কালচার বাংলার বুকে কখনও চলবে না। এটা উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাট নয়, শান্তিপূর্ণ বাংলা। এখানে কোনও রকম সালিশি সভা চলে না। এখানে আইনের শাসন আছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ সজাগ আছে।"
তার দাবী, 'এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।' তিনি বলেন, 'বিজেপি যে কাজটা করেছে, একদম নিন্দনীয় কাজ এবং এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব।'
No comments:
Post a Comment