মুখে কালি, রক্তে লেখা চিঠি! এভাবেই চলছে শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ
নিজস্ব প্রতিবেদন, ২৩ মে, কলকাতা : বাংলার শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে বঞ্চিত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা টানা ৮০০ দিন ধরে রাজপথে রয়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত আন্দোলন করে যাচ্ছে, কিন্তু সমাধান এখনও আসেনি। আদালতের দরজায় কড়া নাড়লেও রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন কোনও সহযোগিতা করেনি। আন্দোলনের ৮০০তম দিনে চাকরিপ্রার্থীদের রক্ত দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন তারা। মুখে কালি লাগিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিক্ষোভকারীরা।
SLST ২০১৬-এর চাকরিপ্রত্যাশীরা মঙ্গলবার কালীঘাটে প্রার্থনা করার পর ফেরার সময় গান্ধী মূর্তির কাছে 'চাকরি চাই'-এর পোস্টার বহন করে ধর্নায় বসেছিলেন। হাতে ব্যানারের সাথে পাউরুটি লাগানো ছিল। তাদের দাবী একই, ৮০০ দিন পার হয়ে গেছে। এখন অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর তাদের নিয়োগ নিয়ে ভাবা উচিৎ।
২০১৬ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল। মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা যে প্যানেলে তার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল সেই প্যানেলে চাকরি পেয়েছেন। এই আন্দোলনকারীরা প্যানেলের চাকরিপ্রার্থী। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ পাওয়া যায়নি, যার পেছনে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি।
রক্তে চিঠি লিখলেন শিক্ষক পদ বঞ্চিত প্রার্থীরা
গত ৮০০ দিন ধরে তারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমেছে নিয়োগের দাবীতে। কখনও প্রেসক্লাবের সামনে, কখনও গান্ধীমূর্তির সামনে আবার কখনও বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন। এদিন তাঁরা কালীঘাটে দেবী কালীর প্রার্থনা করেন। আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
পূজার পর চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, "আমরা যোগ্য চাকরিপ্রার্থী। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও দুর্নীতির কারণে নিয়োগ পেতে পারেননি। এখন আমরা আইনের যাত্রায় পিষছি। সমস্যার সমাধান এবং তাড়াতাড়ি অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার আশায় আমি কালীঘাটে প্রার্থনা করেছি।”
সেখান থেকে ফিরে তিনি আবার গান্ধীমূর্তির পায়ের কাছে বসলেন। হাতে থাকা পোস্টার-ব্যানারে লেখা ছিল, 'খাদ্য দরকার', 'কর্মসংস্থান প্রয়োজন', 'কর্মসংস্থান প্রয়োজন', 'জীবনের অধিকার প্রয়োজন'। ব্যানারে রুটি আটকে আছে, এক গ্লাস জল আছে।
আন্দোলনকারীদের দাবী, এভাবে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। মুখে কালি মেখে প্রতিবাদে বসেছে তারা। মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে রক্ত দিয়ে চিঠিও লেখেন তারা।
বঞ্চিত প্রার্থীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ন্যায়বিচারের আবেদন জানিয়েছেন
এক প্রতিবাদী চাকরিপ্রার্থী বলেন, “এটাই আমাদের শেষ প্রতিবাদ। আমরা চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ করছি, আমাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই। রক্তই আমাদের আশা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়ার জন্য এটি একটি আবেদন।"
আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, 'আমরা শিগগিরই নিয়োগ চাই। আর কতক্ষণ এখানে বসে থাকব? রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে চাই। রাজ্য সরকার সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিলেও কোনও সমাধান মেলেনি। এসএসসি চেয়ারম্যান ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেও কোনও সুরাহা হয়নি।'
রাজ্যের শাসক দলের দুই নম্বর নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকও প্রায় নিষ্পত্তিহীন বলে জানিয়েছেন তিনি। সরকার সুপারনিউমারারি পদে তাদের নিয়োগ দিলে রাষ্ট্র হাইকোর্টে যায়। এখন তাদের ভবিষ্যৎ সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের হাতে।
No comments:
Post a Comment