পিরিয়ডের রক্ত দেখে সম্পর্ক সন্দেহ! বোনকে নৃশংস খুন দাদার, গলদ কোথায়?
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ০৯ মে: বোনকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠল দাদার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি যতটা চাঞ্চল্যকর, তার থেকেও বেশি চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার পেছনে থাকা কারণ; বোনের প্রথম পিরিয়ডের রক্তের দাগ দেখে দাদার মনে হয় বোন কারও সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল। আর এ থেকেই এই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের থানেতে। আর এই ঘটনাটি শুধু ভাই-বোনের সম্পর্ক নিয়েই প্রশ্ন তোলে না বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকেও উত্থাপন করে যা ভারতে সর্বদা উপেক্ষা করা হয়। সেটা হল মাসিক ও যৌন সচেতনতার বিষয়।
মেয়েটির প্রথম পিরিয়ড হওয়ায়, স্বাভাবিকভাবেই সে এ বিষয়ে বেশি কিছু জানত না, কিন্তু যে অভিযুক্ত, তা র বয়স ৩০ বছর।
থানে জেলার উলহাসনগর শহরে ৩০ বছর বয়সী নিরাপত্তারক্ষী তার ১২ বছর বয়সী বোনকে খুন করেছে বলে অভিযোগ। উলহাসনগর থানার সিনিয়র ইন্সপেক্টর মধুরকর কাডের টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ওই নাবালিক তার দাদা-বৌদির সাথে থাকত। কিছুদিন আগে মেয়েটির মাসিক হয়। তার দাদা তার জামা-কাপড়ে পিরিয়ডের রক্ত দেখেন এবং ভাবেন যে, বোন কারও সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। নাবালিকা এই বিষয়ে কিছুই জানত না, তাই সে তার দাদার প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেনি।
অভিযোগ, উত্তর না পেয়ে দাদা তার বোনের ওপর নির্যাতন শুরু করেন। শরীরের বিভিন্ন স্থান চিমটে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তাকে অনেক নির্যাতন করা হয়। তিন দিন ধরে তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। অবশেষে এসব সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই নাবালিকা। এ ঘটনার পর দাদা নিজেই তাকে কেন্দ্রীয় জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে আঘাত ও পোড়ার চিহ্ন রয়েছে, চিকিৎসকরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে দাদাকে গ্রেফতার করা হয়।
অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নাবালিকার বৌদিই, তার দাদার মনে সন্দেহ তৈরি করেছিল যে তার বোনের কারও সাথে সম্পর্ক রয়েছে। মেয়েটির মুখে, ঘাড়ে এবং পিঠে অনেক চিহ্ন ছিল যা তার সাথে কী ঘটেছে তা নির্দেশ করে।
যেটাই হোক, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। তবে, এই ঘটনার পর অনেক প্রশ্ন মাথায় আসে। যেমন- বৌদি কি নাবালিকার দাদাকে পিরিয়ডের কথা বলতে পারতেন না? নাবালিকা কি আগে তার মাসিক সম্পর্কে সচেতন ছিল না? দাদা কি আদৌ জানতেন না এই বয়সে বোনের পিরিয়ড হতে পারে? তারও কি কোন প্রকার ঋতুস্রাব বা যৌন সচেতনতা ছিল না?
এমন অনেক প্রশ্ন আছে, কিন্তু উত্তর একটাই। মাসিক ও যৌন সচেতনতা সম্পর্কে দাদা-বোন সচেতন হলে এই ঘটনা ঘটত না।
ক্লাউডনাইন গ্রুপ অফ হসপিটালসের প্রিন্সিপাল কনসালটেন্ট- গাইনোকোলজিস্ট এবং প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাঃ শালিনী আগরওয়াল এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “অনেক মেয়েই পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতেও ভয় পায়। তাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ট্যাবু রয়েছে। নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। মেয়েরা এটা নিয়ে কথা বলতে খুব লজ্জা পায়।"
"এই নিষেধাজ্ঞার কারণে, মেয়েরা সঠিক মাসিক স্বাস্থ্যবিধি পণ্যগুলিতে অ্যাক্সেস পায় না। দুর্বল মাসিক পরিচ্ছন্নতা সমস্যার দিকে পরিচালিত করে। শারীরিক, সামাজিক, আর্থিক সমস্যা মেয়েদের ঘিরে থাকে।"
"শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে একজন মেয়ে বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। শুধু প্রাথমিক পর্যায়েই নয়, সামনের বছরগুলোতেও সমস্যা হতে পারে।"
ডাঃ শালিনী বলেন যে, "আমরা শুধুমাত্র মানুষের সাথে কথা বলে সচেতনতা বাড়াতে পারি। পিরিয়ডের আগে মেয়েদের এটা জানা উচিৎ। তাদের বিভিন্ন ধরণের মেয়েলি স্বাস্থ্যবিধি পণ্য সম্পর্কেও সচেতন হওয়া উচিৎ।"
একইভাবে যৌন সচেতনতার অভাবও আমাদের নানান সমস্যায় ফেলতে পারে। M.B.BS, MD (Obgyn) ডঃ আমেনা খালিদ এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যৌন সচেতনতা সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেন যে, এটিই সবচেয়ে বড় ট্যাবু যে, প্রথমবার সহবাস করলে রক্তপাত হবে। ভারতে এই বিষয়টি নিয়ে কতটা বিতর্ক হয়েছে জানি না। প্রথমবার যৌনমিলনের সময় যে রক্তপাত হয়, তাকে কুমারীত্বের প্রতীক বলে মনে করা হয়।
এখানে কেউ সেই মেয়েটির কথা ভাবতে পারে যে তার জীবনযাপনের সুযোগ পায়নি। তার মনে নিশ্চয়ই অনেক প্রশ্ন, এত ইচ্ছা, জীবনের অনেক প্রত্যাশা, কিন্তু সেগুলি এক ধাক্কায় ধ্বংস হয়ে গেল। জ্ঞানের অভাবে সংঘটিত এই অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর। যেখানে ঋতুস্রাব এবং শারীরিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হয়, সেখানে এ ধরনের ঘটনার জন্য কাকে দায়ী করা হবে? সচেতনতার অভাব ও অজ্ঞতা, নাকি মানুষের স্বভাব?"
No comments:
Post a Comment