কিভাবে নেবেন নবজাতকের যত্ন
প্রেসকার্ড নিউজ, হেল্থ ডেস্ক, ৩ মে: শিশুর স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রতিটি পিতামাতার দায়িত্ব। আর একটি নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়া খুব বড়ো দায়িত্ব এবং সতর্কতার বিষয়। কীভাবে আপনি আপনার নবজাতকের আরও ভালোভাবে যত্ন নিতে পারেন তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। আপনিও যদি আপনার সন্তানের সুস্থ জীবন চান, তাহলে এই বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ যত্ন নিন।
নবজাতক শিশুকে কীভাবে সামলাবেন -
নবজাতক শিশুরা খুব কোমল এবং নরম হয়। তাই তাদের দেখাশোনা করা খুব সতর্কতার সঙ্গে এবং সঠিক উপায়ে হওয়া উচিৎ। এর জন্য নবজাতককে কোলে তোলার আগে অ্যান্টি-সেপটিক স্যানিটাইজার দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন, যাতে শিশুর কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যত্ন নেওয়াও জরুরি। কারণ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দুর্বল থাকে।
শিশুদের হাড়ও খুব ভঙ্গুর হয়, তাই তাকে তোলার সময় তার মাথা ও ঘাড়কে সঠিকভাবে ধরে রাখুন।
নবজাতক তাদের শরীরের অনেক কাজই নিজেরা পরিচালনা করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সমর্থন প্রয়োজন। তাই যতক্ষণ শিশু আপনার কোলে থাকে, ততক্ষণ তার নড়াচড়ার প্রতি গভীর মনোযোগ দিন এবং সেই অনুযায়ী অবস্থান পরিবর্তন করুন।
নবজাতককে যেকোনও ধরনের ধাক্কা লাগা থেকে রক্ষা করুন -
নবজাতককে কখনোই জোরে নাড়াবেন না বা ঝাঁকাবেন না। এটি একটি গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে এটি করা শিশুদের উপর SIDS (সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম)-এর ঝুঁকি বাড়ায়। এর কারণে শিশুর মাথায় রক্ত জমতে শুরু করে এবং এতে মৃত্যুও হতে পারে। আবার আপনি যদি শিশুকে ঘুম থেকে জাগাতে চান, তাহলে তার পায়ে হালকা নাড়া দেওয়াই উত্তম উপায়।
বুকের দুধ পান করানোর পদ্ধতি -
শুধুমাত্র মায়ের দুধই নবজাতকের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার। প্রসবের পরপরই, মায়ের দুধ হলদে এবং ঘন হয় এবং এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বুকের দুধ পান করানোর জন্য শিশু এবং মায়ের সঠিক অবস্থানে থাকা প্রয়োজন। শিশুকে মা দুই হাতে নিয়ে তার পুরো শরীরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিন। তারপর বুকের দুধ পান করান। এই সময় একটা জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। শিশুকে বুকে খুব বেশি শক্ত করে ধরবেন না। এমনটা করলে তার দমবন্ধ হতে পারে। মুখ বন্ধ থাকায় শিশুটি বুকের দুধ পান করার সময় নাক দিয়ে শ্বাস নেয় এবং শ্বাস ছাড়ে। এমন অবস্থায় তার নাক বন্ধ করা উচিৎ নয়, অন্যথায় তার শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে।
বোতলে দুধ পান করানোর পদ্ধতি -
আপনি যদি আপনার শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে না পারেন, তাহলে তাকে বেবিফুড বা গুঁড়ো দুধ বোতলে ভরে পান করান। এক্ষেত্রেও আপনাকে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুকে সঠিক পরিমাণে গুঁড়ো দুধ দেওয়া জরুরি। দুধের বাক্সে লেখা নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ুন এবং সেই অনুযায়ী দুধ দিন। এছাড়া খাওয়ানোর আগে দুধের বোতল (ফিডার) ফুটানো জল দিয়ে ধুয়ে নিন। একটি বোতল যা ফুটানো জল দিয়ে পরিষ্কার করা হয়নি বা ভুল পরিমাণে গুঁড়ো দুধ যোগ করা আপনার শিশুকে অসুস্থ করে তুলতে পারে।
প্রতি তিন ঘন্টা বা ক্ষুধার্ত অবস্থায় শিশুকে বোতলের দুধ পান করান। ভুল করেও বোতলে ফেলে রাখা দুধ ফ্রিজে রাখবেন না এবং একই দুধ আবার খাওয়াবেন না। প্রতিবার শিশুকে শুধুমাত্র তাজা তৈরি দুধ দিন। বোতল সর্বদা ৪৫ ডিগ্রি কোণে রেখে শিশুকে খাওয়ান। খেয়াল রাখবেন বোতল খালি থাকা অবস্থায় শিশু যেন বাতাস চুষে না থাকে।
খাদ্য ও পানীয় -
নবজাতকের মা যদি স্তন্যপান না করাতে পারেন তবে শিশুকে বেবিফুড খাওয়াতে হবে। তবে কোনও অবস্থাতেই ভুল করেও কোনও শক্ত খাবার শিশুর মুখে দেবেন না। এমনকি শিশুর ৬ মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাকে জলও দেবেন না। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শক্ত খাবার বা জল দিলে শিশুর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে, যা তার জীবনকেও বিপদে ফেলতে পারে। এ ছাড়া মা যদি নবজাতককে বুকের দুধ পান করান, তাহলে মাকে তার নিজের খাবারের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মা যা খান, নবজাতক তা পায় বুকের দুধের মাধ্যমে। এক গবেষণায় জানা গেছে, মা যদি খাবারে করলা খান, তাহলে তার সন্তান বুকের দুধ পান করার সময় দুধ তেতো মনে হতে পারে। আপনি যদি বুকের দুধ পান করান, তবে উল্টোপাল্টা কিছু খাবেন না। ডাল বেশি খাবেন এবং পুষ্টিকর খাবার খাবেন।
ঘুম পাড়ানোর সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন -
নবজাতককে নরম ও গরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। এতে শিশু খুব নিরাপদ বোধ করে এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ নবজাতক শিশুরা বেশি ঠান্ডা অনুভব করে। শিশুকে ০-২ মাস পর্যন্ত কাপড়ে মুড়ে রাখুন। তবে এটিও মনে রাখবেন যে তাকে খুব বেশি কাপড় পরাবেন না। এর কারণে সে বেশি গরম অনুভব করবে যা তার মস্তিষ্কেও পৌঁছাতে পারে এবং তার জীবনকে বিপদে ফেলতে পারে। নবজাতক ১৬ থেকে ২০ ঘন্টা শুধুমাত্র ঘুমিয়েই বিশ্রাম নেয়। শিশুর বৃদ্ধির জন্য, তার সঠিক ঘুম হওয়া খুবই জরুরি। এ ছাড়া শিশুকে বালিশ ছাড়া ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন। তবে আপনি যদি তার মাথার নিচে বালিশ রাখেন তবে এটি খুব হালকা এবং নরম হওয়া উচিৎ। এছাড়াও, শিশুর মাথা দীর্ঘ সময় বালিশের এক জায়গায় থাকা উচিৎ নয়। এ ছাড়া কিছু শিশু সারা রাত জেগে থাকে এবং সারাদিন ঘুমায়। এমন অবস্থায় শিশুকে রাতে ঘুমানোর জন্য ঘরটিকে সম্পূর্ণ অন্ধকার করে দিন।
কোন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন -
আপনার শিশু যদি দীর্ঘ সময় ধরে বুকের দুধ খায়, তবে সে দিনে ৬ থেকে ৮ বার ডায়াপার নোংরা করতে পারে এবং এর কারণ পেটের কোনও সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কোন সময়ে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে তা জানা জরুরি। যদি শিশু ডায়াপার চারবারের বেশি ভিজিয়ে দেয় তবে তাকে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। এ ছাড়া নবজাতক নিউমোনিয়ার মতো রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়। আপনি যদি শিশুটিকে একটি নির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে কাঁদতে দেখেন, অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
বি.দ্র: এখানে দেওয়া তথ্য সাধারণ জ্ঞান ও ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে দেওয়া। প্রেসকার্ড নিউজ এটি নিশ্চিত করে না। কোনও নতুন কিছু শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞর পরামর্শ অবশ্যই নিন।
No comments:
Post a Comment