দীর্ঘদিন মাসিক না হলে বা দেরিতে হলে মাসিক চক্রে কি তার কোনও প্রভাব পড়ে? জেনে নিন কি বলছেন বিশেষজ্ঞ
প্রেসকার্ড নিউজ, হেল্থ ডেস্ক, ২৩ মে: সময়মত মাসিক হওয়া প্রতিটি মেয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রজনন স্বাস্থ্যের সুস্থতা নির্দেশ করে। মাসিক চক্রের যেকোনও বড়ো পরিবর্তন মাসিকের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় প্রতিটি ছোট ছোট জিনিসের যত্ন নেওয়া জরুরি। প্রতিটি মহিলার মাসিক চক্র ১০-১৫ বছর বয়স থেকে শুরু হয়ে ৪৫-৫০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। 'মেনার্চে' হল সেই পর্যায় যেখানে একজন মেয়ে প্রথমবার পিরিয়ড অনুভব করে। অন্যদিকে, যদি কোনও মেয়ের সঠিক বয়সে পিরিয়ড শুরু না হয়, তবে এই সমস্যাটিকে 'অ্যামেনোরিয়া' বলা হয়। এটি মহিলার প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। কিন্তু এই সমস্যা কি মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে? এই বিষয়ে বিজনরের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নীরজ শর্মা কি বলেছেন জেনে নিন।
প্রথমে জেনে নিন অ্যামেনোরিয়া কী ?
অ্যামেনোরিয়া একটি গুরুতর সমস্যা নয়, তবে একটি সাধারণ অবস্থা। যেখানে একজন মহিলার দীর্ঘ সময় ধরে পিরিয়ড হয় না বা সঠিক বয়সে পিরিয়ড শুরু হয় না। প্রথম থেকেই এই অবস্থার যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রজনন স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে।
অ্যামেনোরিয়ার প্রকারভেদ -
বিশেষজ্ঞদের মতে,অ্যামেনোরিয়া দুই ধরনের হতে পারে -
প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া :
১০ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি মেয়ের জন্য এটি প্রয়োজনীয়। কিন্তু যদি কোনও মেয়ের ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত পিরিয়ড না হয়, তাহলে তাকে প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া বলা হয়।
সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া :
সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়ার সমস্যা মানে টানা তিন মাস পিরিয়ড না হওয়া। এই সমস্যায় মহিলাদের পিরিয়ড দীর্ঘ সময় বন্ধ হয়ে যায়।
অ্যামেনোরিয়ার কারণ -
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি মহিলার অ্যামেনোরিয়ার কারণগুলি আলাদা হতে পারে। যার মধ্যে এই প্রধান কারণগুলিও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে -
হরমোনের পরিবর্তন :
হরমোন পুরো শরীরের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।যদি ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত কোনও মেয়ের পিরিয়ড শুরু না হয় বা হঠাৎ করে মাসিক অনেক মাস না হয়, তাহলে হরমোনের পরিবর্তন এর একটি বড় কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থা বা বুকের দুধ পান করানো -
গর্ভাবস্থা বা শিশুকে বুকের দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে পিরিয়ড দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হতে পারে।
জেনেটিক সমস্যা -
যদি সঠিক বয়স পর্যন্ত পিরিয়ড শুরু না হয়, তাহলে ডিম্বাশয়ের জেনেটিক সমস্যাও একটি বড়ো কারণ হতে পারে। এ ছাড়া ক্রোমোজোমালও এর প্রধান কারণ হতে পারে।
জীবনধারা এবং চাপ -
মানসিক চাপ আমাদের পুরো শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি আপনার মাসিক হঠাৎ করে কয়েক মাস না হয়ে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এর পেছনে একটি বড়ো কারণ হতে পারে। সেই সঙ্গে স্থূলতা, পুষ্টির অভাব, যেকোনও দুরারোগ্য রোগও এসব কারণে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
অ্যামেনোরিয়ার চিকিৎসা কী ?
একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন -
হঠাৎ করে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া বা দীর্ঘ সময় ধরে পিরিয়ড না হওয়া- দুটোই গুরুতর সমস্যায় জড়িত। আপনার সমস্যার কারণ বুঝুন এবং কোনও চিকিৎসা গ্রহণ করার আগে, ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
জীবনধারা পরিবর্তন করুন -
সুস্থ শরীরের জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা উভয়ই মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে। অতএব, আপনার খাদ্য এবং জীবনধারা সুস্থ রাখুন, যাতে শরীর সময়মত সমস্ত পুষ্টি পায়।
টানা তিন মাস পিরিয়ড না থাকা বা ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত পিরিয়ড না হওয়া কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যার সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে। অতএব, সঠিক নির্ণয়ের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
No comments:
Post a Comment