ভারতেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে মজবুত সেতু, নিজেকে নিজেই সারিয়ে নেয় - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, 23 May 2023

ভারতেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে মজবুত সেতু, নিজেকে নিজেই সারিয়ে নেয়


ভারতেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে মজবুত সেতু, নিজেকে নিজেই সারিয়ে নেয়



প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৩ মে: বিশ্বজুড়ে এমন অনেক বিশাল, চমৎকার এবং মজবুত সেতু রয়েছে, যেগুলোকে প্রকৌশলের অনন্য উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়। মুম্বাইয়ের সী-লিংক, সিডনির টাওয়ার ব্রিজ বা ভারতে বিশ্বের উচ্চতম চানাবের আর্ক ব্রিজ এমনই কিছু অনন্য সেতু, যেগুলো দেখে মানুষ প্রশংসার সেতু তৈরি করে। কিছু সেতু দুটি শহরকে সংযুক্ত করে, আবার কিছু একই শহরের দুটি অংশকে একত্রিত করে। পাশাপাশি, কয়েকটি সেতু রয়েছে যা দুটি দেশকে সংযুক্ত করেছে। কিন্তু, কখনও কী জীবন্ত গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি ব্রিজ দেখেছেন? এই সেতু রয়েছে আমাদেরই দেশ ভারতে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই সেতু সম্পর্কে।


জীবন্ত গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি ব্রিজটির বিশেষত্ব এই যে, এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে মজবুত সেতু বলে মনে করা হয়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ে নির্মিত এই সেতুর সামনে বিশ্বের অনেক সেতুই ফ্যাকাশে মনে হতে শুরু করবে। প্রায় ২০০ বছর আগে এই সেতুটি তৈরি হয়েছিল বলে জানা যায়। জীবন্ত গাছের শিকড়ে তৈরি এই অনন্য সেতুটি নির্মাণের সময় যেমন ছিল তেমনই দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের জীবন্ত শিকড়কে সুতোর মতো বেঁধে এই সেতুটি তৈরি করা হয়েছে।



কেউ যদি মনে করেন যে, বড় প্রকৌশলী এবং উদ্ভিদবিদরা এই অনন্য সেতুটি তৈরিতে তাদের মস্তিষ্ক প্রয়োগ করেছেন, তবে তারা ভুল করছেন। মেঘালয়ে কয়েক শতাব্দী ধরে বসবাসরত খাসি ও জৈন্তিয়া উপজাতির মানুষ জীবন্ত গাছের শিকড় থেকে সেতু তৈরিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত হয়। কথিত আছে যে, খাসি ও জৈন্তিয়া উপজাতির লোকেরা কয়েকশ বছর আগে লিভিং রুট ব্রিজ বা জীবন্ত গাছের শিকড়ের সেতু তৈরি করেছিলেন। এই ব্রিজে একসাথে ৫০ জন মানুষ চলাচল করতে পারেন। মেঘালয়ের ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি নদীর উপর এই সেতুটি তৈরি করা হয়েছে।


লিভিং রুট ব্রিজ জীবন্ত গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি। এটি সুতোর মতো একটি অপরটির সাথে বুননের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। একটানা জলে থাকার কারণে এর কিছু অংশ পচে বা গলে যায়, তারপর সেই জায়গায় নতুন শিকড় আসে, যে কারণে ২০০ বছর পরেও এই সেতুটি কোথাও দুর্বল হয়নি। এই সেতুটি রাবার গাছের শিকড় থেকে তৈরি, যাকে বলা হয় ফিকাস ইলাস্টিকা গাছ। এই সেতুর কিছু শিকড়ের দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট পর্যন্ত। তাদের সঠিক আকার নিতে ১৫ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। যখন এই শিকড়গুলি সম্পূর্ণরূপে বৃদ্ধি পায়, সেগুলো ৫০০ বছর পর্যন্ত মজবুতির সঙ্গে থাকতে পারে।


মেঘালয়ে এরকম অনেক সেতু আছে। এর মধ্যে গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি চেরাপুঞ্জির ডাবল ডেকার ব্রিজটি সবচেয়ে বিশেষ। এতে একটির ওপরে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুগুলো ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জীবন্ত গাছের জীবন্ত শিকড় দিয়ে তৈরি এই সেতুগুলোকে লোহার সেতুর চেয়েও শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। লোহা বা ইস্পাতের ব্রিজগুলি সময়ে সময়ে মেরামতের প্রয়োজন হয়৷ অথচ এসব সেতু নিজেরাই নিজেকে মেরামত করে নেয়। এসব সেতু নির্মাণের ফলে বনাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের নদী পারাপার খুবই সহজ হয়ে যায়।


খাসিয়া ও জৈন্তিয়া জনজাতির লোকেরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ফুট ব্রিজ নির্মাণে নিয়োজিত রয়েছেন। এসব মানুষের জন্য এখন গাছের জীবন্ত শিকড় দিয়ে তৈরি এসব বিশেষ সেতুও হয়ে উঠেছে শক্তিশালী আয়ের উৎস। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলিতে যুক্ত হওয়ার পরে, সারা বিশ্বের মানুষ এগুলো দেখতে মেঘালয়ের জঙ্গলে পৌঁছাতে শুরু করেছে। যদিও এর আগেও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে পর্যটকরা এই সেতুগুলো দেখতে ছুটে যেতেন। এখন স্থানীয় লোকজন তাদের বাড়িগুলোকে হোম স্টেতে রূপান্তর করতে শুরু করেছেন। এ কারণে এখানে আগত মানুষদের থাকার ব্যবস্থা করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং এর বিনিময়ে স্থানীয় লোকজনও ভালো আয় পান।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad