প্রতিবন্ধকতাতে জয় করে মাধ্যমিকে সফল যমজ দুই বোন
নিজস্ব সংবাদদাতা, নদিয়া, ২২ মে: ছোট থেকেই না হাঁটতে পারে, না কথা বলতে পারে। সেই বাধা অতিক্রম করেই মাধ্যমিকে সাফল্য যমজ দুই বোনের, আর এতেই উৎসাহিত গোটা এলাকা। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অদম্য চেষ্টা ও বাবা মায়ের হাড়ভাঙা পরিশ্রমে আজ স্বপ্ন পূরণ পেশায় টোটো চালক শ্যামল মল্লিকের পরিবারের।
বড় মেয়ে রুমা মল্লিক তার প্রাপ্ত নম্বর ৩২৪, ছোট মেয়ে ঝুমা মল্লিক তার প্রাপ্ত নম্বর ৩২১, দুজনেই জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। একজন কোনও রকম চলাফেরা করতে পারলেও, আরেকজন বিকলাঙ্গ। কানে যেমন শুনতে পারে না, বলতে পারে না কথাও। মা রেখা মল্লিক সংসার সামলানোর পাশাপাশি দুই প্রতিবন্ধী মেয়েকে কীভাবে পড়াশোনা করাবেন এই নিয়ে সব সময় থাকতেন দুশ্চিন্তায়। পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানোর সময় অনেকটাই ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের, কারণ দুজনেই তো প্রতিবন্ধী, কীভাবে বিদ্যালয়ে যাবে এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষক এবং শিক্ষিকারা। যদিও অনেক টানাপোড়নের পর মেয়েদের ভর্তি করান বাগআঁচড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। তারপর থেকেই নিয়মিত বিদ্যালয়ে পঠন পাঠনের জন্য যেত দুই মেয়েই।
পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে শিক্ষকরাও তাদের ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শুরু করেন। অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে বেশি নজর দিতেন শিক্ষকরা, যদিও দুজনেরই স্মৃতিশক্তি অনেকটাই কম, তাই বাড়তি পরিশ্রম করতে হতো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
মা রেখা মল্লিক জানিয়েছেন, মেয়েদের ভর্তি করানোর সময় একটু সমস্যায় পড়তে হলেও আজ যদি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাশে না থাকতেন, হয়তো মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়েরা সাফল্য পেত না।' বাবা শ্যামল মল্লিক টোটো গাড়ি চালিয়ে কোনও রকম সংসার চালান। মেয়েদের পড়াশোনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা জোগাড় করতেই হিমশিম খেয়ে যেতে হয়, তবুও হাল ছাড়েননি তারা।
শ্যামল মল্লিক আক্ষেপের সুরে বলেন, তাদের দুরবস্থার কথা কে না জানে। মেয়েরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করলেও আজ পর্যন্ত কেউই পাশে দাড়ায়নি, না বাড়িতে এসেছে কোনও জনপ্রতিনিধি, না খোঁজ নিয়েছে প্রশাসন। সরকার যদি একটু আর্থিক সহায়তা করত, তাহলে আগামী দিনে মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হতো। তবে হাজার কষ্ট করে হলেও মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন মা-বাবা দুজনেই।
No comments:
Post a Comment