পাঙাশ চাষের জন্য পুকুর তৈরির পদ্ধতি
রিয়া ঘোষ, ০৬ মে : অনেকেই পাঙাশ মাছ পছন্দ করেন। আবার অনেকেই করে না। কারণ এই মাছের গন্ধ অনেকেরই সহ্য হয় না। তবে দেশের প্রায় সব বাজারেই এর ব্যাপক উপস্থিতি দৃশ্যমান। এ ছাড়া জেলেদের মধ্যে এই মাছ খুবই জনপ্রিয়। কারণ, এই মাছে কাঁটা কম থাকে। সহজ খাদ্যের চাহিদা মেটাতে অনেকেই এই মাছ চাষে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন।
এই মাছ চাষের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, চাষের পদ্ধতি পুকুর বা জলাশয়ের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। এই বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ। এর পাশাপাশি পরিবেশের অবস্থার কথা মাথায় রেখে জল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, মূলধন, মানসম্পন্ন চারা সংগ্রহ, বাজার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজ শুরু করতে হবে।
অবস্থান নির্বাচন
পাঙাশ চাষের জন্য অবস্থানের পছন্দ গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি পুকুর বা জলাশয় বেছে নিন যা সূর্যের আলো পায় এবং বায়ু চলাচলে কোনই অসুবিধা হয় না। দোআঁশ মাটির পুকুর পাঙাশ চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত জল পাওয়া যায় এমন ব্যবস্থা থাকতে হবে। মানে জলের প্রবাহের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পুকুর প্রস্তুতি
পুকুর তৈরির মূল উদ্দেশ্য মাছের বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করা। নির্বাচনের পরের ধাপ হল পুকুরটি সঠিকভাবে প্রস্তুত করা। পুকুরটি কয়েকটি ধাপে প্রস্তুত করা যেতে পারে:
পাঙাশ চাষের জন্য পুকুর আয়তাকার হলে ভালো হয়। তাই এটি আয়তাকার করুন। পুকুরের তলদেশ ভালো করে সমান করতে হবে। সম্ভব হলে মাটির নিচে চাষ করা যেতে পারে। জলের গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার রাখা প্রয়োজন।
বর্ষা বা অতিরিক্ত বৃষ্টির সময় পুকুর যাতে ভেঙ্গে না যায় সেজন্য আগেই বাঁধের ব্যবস্থা করতে হবে।
পুকুরে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত জলজ আগাছা অপসারণ করতে হবে।
পাঙাশ চাষের পুকুর থেকে অপ্রয়োজনীয় ও রাক্ষসী মাছ যেমন শোল, বোয়াল, গজার, টাক্কি, মালা, ঢেলা ইত্যাদি অপসারণ করতে হবে।
পুকুরকে মাছ চাষের উপযোগী ও টেকসই করতে চুনের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারের আগে যদি চুনের গুঁড়ো করা হয় তবে এর প্রভাব বহুগুণ বেড়ে যায়।
পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত চুনের পাঁচ দিন পর সার প্রয়োগ করা হয়। নতুন ও বেলে মাটির পুকুরে বেশি জৈব পদার্থ দিতে হবে। তবে, পুরানো কর্দমাক্ত পুকুরে রাসায়নিক নিষেকের হার বেশি থাকবে। পুকুর তৈরির সময় গোবর বা মুরগির বিষ্ঠা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। সারের কার্যকারিতা বাড়াতে টিএসপি জৈব সারে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ব্যবহারের আগে মিশ্রণটি ইউরিয়ার সঙ্গে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। নিষিক্ত হওয়ার চার থেকে পাঁচ দিন পর পুকুরের জলের রং সবুজ বা বাদামি হলে তা সাধারণত মজুদের উপযোগী হয়।
No comments:
Post a Comment