'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা পেতে চলেছে বিশ্বকবির শান্তিনিকেতন - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, 10 May 2023

'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা পেতে চলেছে বিশ্বকবির শান্তিনিকেতন


'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা পেতে চলেছে বিশ্বকবির শান্তিনিকেতন 



নিজস্ব প্রতিবেদন, ১০ মে, কলকাতা: ইউনেস্কোর (UNESCO) "ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ" এর তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হতে চলেছে বীরভূম জেলায় অবস্থিত বিশ্ব কবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শান্তিনিকেতন।  


ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে শান্তিনিকেতনকে নথিভুক্ত করতে সুপারিশ করেছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের উপদেষ্টা সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস এন্ড সাইটস' (ICOMOS)। ইংরেজিতে ট্যুইট করে মঙ্গলবার রাতে একথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি। বুধবার দিন ফের বাংলায় ও হিন্দি- দুই ভাষায় তা ট্যুইট করেন। সেক্ষেত্রে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরবে হতে চলা এক অনুষ্ঠান থেকে এটিকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করা হবে।


ট্যুইট করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লেখেন 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে দেশের জন্য ভালো খবর। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন(যেখানে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন)-কে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে লিপিবদ্ধ করতে UNESCO-এর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের উপদেষ্টা সংস্থা ICOMOS এর তরফে সুপারিশ করা হয়েছে।' 


তিনি আরও লেখেন '২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।' প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদৃষ্টিতার কারণে বিশ্বব্যাপী আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী। 


প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তরফে শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল ইউনেস্কোর কাছে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর ICOMOS-এর ৭ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখে যায়। সেসময় তারা বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থান- শান্তিনিকেতন গৃহ, উপাসনা গৃহ, ঘন্টা তলা, কলাভবন, সঙ্গীত ভবন, রবীন্দ্রভবন, তালধ্বজ, ছাতিমতলা, গৌরপ্রাঙ্গণ প্রভৃতি ঘুরে দেখেন৷ প্রকৃতপক্ষে তাদের মতামতের ওপরেই নির্ভর করে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় কার নাম থাকবে।  


ইতিমধ্যেই দেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তরফেও বিশ্বভারতীকে মৌখিকভাবে একথা জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি বলেন, 'আমাদের জানা মতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম কোন লিভিং বিশ্ববিদ্যালয় (সচল রয়েছে এমন কোন বিশ্ববিদ্যালয়) ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেতে চলেছে৷ কারণ সাধারণত কোন মনুমেন্ট বা সৌধকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা খুশি।' 


তিনি আরও জানান, 'কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শতবার্ষিকীতে এইরকম একটি খবর পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের কাছে গর্বের বিষয়।' 


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, 'বিশ্বভারতীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রতিটি মানুষ তথা এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে এটি একটি অত্যন্ত ভালো খবর এবং গর্বের বিষয়।' 


এদিকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা পাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হওয়ার খবরে শান্তিনিকেতন জুড়ে খুশির হাওয়া।    বিশ্বভারতীর শিক্ষক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, "এটা আমাদের কাছে গর্বের৷ এই প্রথম লিভিং একটি বিশ্ববিদ্যালয় এই তকমা পেল। ধন্যবাদ জানাই সব পক্ষকে।"


বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থী শুভ নাথ ও ঐন্দ্রিলা মল্লিক বলেন, "বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের যে, গুরুদেবের যে প্রতিষ্ঠানে আমরা শিক্ষা লাভ করছি, সেটা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হবে।" যদিও তাদের অভিযোগ বিশ্বভারতীতে শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে৷ এই বিষয়টিও যত্ন সহকারে দেখার জন্য উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাছে আর্জি রেখেছেন তারা। 


ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের ওয়েবসাইটে বিশ্বভারতী সম্পর্কে উল্লেখ করা হয় '১৯২১ সালে এশিয়ার প্রথম নোবেল পদক জয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। বিশ্বভারতীর অর্থ গোটা বিশ্বের সাথে ভারতের যোগাযোগ গড়ে তোলা। স্বাধীনতার আগে এটি একটি কলেজ ছিল। ১৯৫১ সালে এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণত হয়। বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দ্বিতীয় উপাচার্য ছিলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের দাদু ক্ষীতিমোহন সেন। 


এই বিশ্ববিদ্যালয় 'পরিদর্শক' দেশের রাষ্ট্রপতি, 'আচার্য' হলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং 'প্রধান' (রেক্টর)-এর পদ অলঙ্কৃত করে থাকেন রাজ্যের রাজ্যপাল। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে হিউম্যানিটি, সোশ্যাল সায়েন্স, সায়েন্স, পারফর্মিং আর্টস, ফাইন আর্টস, মিউজিক, এডুকেশন, এগ্রিকালচারাল সায়েন্স, রুরাল কন্সট্রাকশন সহ একাধিক বিষয়ে পাঠদান করা হয়। 


দেশবিদেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করতে আসেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রাক্তধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অস্কারবিজয়ী চিত্র-পরিচালক সত্যজিৎ রায়, জয়পুরের রানী তথা কোচবিহারের রাজকন্যা গায়েত্রী দেবী, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad