'রাজ্য বিজেপির কথায় টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র': শোভনদেব
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ০২ মে: কেন্দ্রীয় সরকার টাকা আটকে রেখেছে এবং এর জন্য রাজ্যের বিজেপি নেতাদেরই দায়ী করলেন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা খড়দার বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি ডিএ নিয়ে নিজের কথায় অনড় মন্ত্রী। সোমবার মে দিবস উপলক্ষে মধ্যমগ্ৰামে তৃণমূলের পার্টি অফিসে আসেন মন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ ও টাকা না পাওয়ার বিষয়ে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় সরকারকেই কাঠগড়ায় তোলেন মন্ত্রী শোভনদেব। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছিলেন যে এখন সব ঠিক আছে, কিন্তু এখানকার যারা বিজেপির লোক তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নেতাদের পায়ে ধরেছে গিয়ে যে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যেন টাকাটা কোনভাবেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে না দেয়।'
তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় সরকার তো পুরো টাকাটাই আটকে রেখে দিয়েছে। রানিং টাকাটাও দিচ্ছে না। এটাতো কেন্দ্রীয় সরকারের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। আমাদের টাকা নিয়ে গিয়ে আমাদের দেয়। সেখানে যদি পার্টিকুলার কোন একটা কেসে ত্রুটি থেকে থাকে, তাহলে সেই জায়গাটা আটকানো যায় কিন্তু তার পরবর্তী টাকাগুলো আটকে রেখেছে কেন? রাজ্যের বিজেপিরাই তো দিল্লীতে গিয়ে বলছেন টাকা দেব না। টাকা পাবে না। এখানেও ওদের নেতারাই চিৎকার করে এটা বলছেন।' মন্ত্রী বলেন, 'এটা তো ভয়ঙ্কর, মানুষকে ভাতে মারার চেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে একটা সরকার দিনের পর দিন টাকা আটকে রেখেছে। আমরা এর জন্য দায়ী না।'
তাঁর কথায়, যেখানে ক্লিয়ারেন্স হয়ে গেল, কিছু ভুল ছিল, তা শুধরেও দেওয়া হল। ওদের লোকেরা অবজারভেশনে এসে বলল সব ঠিক হয়ে গেছে। তারপরেও টাকা দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, 'এই ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। একটা সমাজে ভালো, খারাপ সব ধরণের লোক আছে। আলো, অন্ধকার সবই আছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "টাকা আটকে রাখা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী বারো হাজার কোটি টাকার পথশ্রী প্রকল্প নিয়েছেন, যাতে করে এই লোকগুলো কাজ পায় এবং আরও টাকা এলোটমেন্ট করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের প্রত্যেক মন্ত্রীকে বলেছেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের যত কাজ আছে সেই কাজ জব কার্ড হোল্ডারদের দিতে হবে, আমরা দিচ্ছি।"
এদিন ডিএ নিয়েও সেই প্রায়োরিটি তত্ত্ব উঠে আসে শোভনদেবের গলায়। তিনি বলেন, "৪০-৪৫ বছর ধরে ট্রেড ইউনিয়ন করছি, আমি একই কথা বলে যাব। আমি পেনশনও পাই, ডিএ পাই। আমি যেভাবে আমার জীবনযাপন করতে পারি একজন প্রান্তিক মানুষ সারা মাসে এক বার মাছ খাওয়ার কথা ভাবতে পারেন না।' তিনি বলেন, 'সরকার যে চালাবে তার কাছে প্রায়োরিটি কোনটা; সে কোনটাকে আগে গুরুত্ব দেবে।'
শোভনদেব বলেন, 'একজন সরকারি কর্মচারী মাইনে পায়, ডিএ পায়, ছুটি পায়, আবার বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার টাকা পায়। আর একবারে গ্রামের একজন মানুষ সেই মানুষটা কি পেল না পেল সেটা দেখব না আমরা! সেই মানুষগুলো পাক।' যদি ডিএ যে একটা অধিকার সে নিয়ে তার কোনও দ্বিমত নেই বলেও তিনি জানান।
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বামেদেরও টেনে আনেন রাজ্যের মন্ত্রী। তিনি বলেন, '২০০৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার একটা বই বার করেছিল বইটা আছে আমার কাছে। তাতে লিখছে তারা রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ এবং মহার্ঘ্য ভাতা দিতে গিয়ে কেন্দ্রের মতো করে, আজকে রাজ্য সরকারের ঋণ ডবল হয়ে গেল। ব্যয় বেড়ে গেল।'
ডিএ আন্দোলনকারীরা কী তবে অন্যায্য দাবী করছেন?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমি ন্যায্য-অন্যায্যর প্রশ্নতেই যাব না। আমি যাব প্রায়োরিটি কোনটা আমার। দরিদ্র মানুষ যারা জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য থেকে অনেক দূরে রয়েছে। সেই মানুষটাকে আমি নানা প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল তো করব। যে মানুষটা অলরেডি সচ্ছলতার মুখ একটু দেখেছে তাকে এই মুহূর্তে নাই বা দিলাম!"
তিনি বলেন, "একটা আনন্দকে ভাগ করে নেওয়া যায় সকলে মিলে করতে পারলে। একটা পাড়াতে কিছু লোক আনন্দ করছে আর কিছু লোক বসে আছে, নতুন জামা কেনার মত অবস্থা নেই। আমার দায়িত্ব যার জামা কেনার ক্ষমতা নেই, তাকে একটা জামা কেনার ব্যবস্থা করে দেওয়া।"
এর পাশাপাশি দলবদলুরা কি আসন্ন পঞ্চায়েতে টিকিট পাবেন? সেই নিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'একটা পদ্ধতি চালু হয়েছে, যেটাকে লিড করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পদ্ধতি গণতান্ত্রিক দেশে অর্থবহ। এই পদ্ধতির এক্সপেরিমেন্ট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছেন দেশের মধ্যে প্রথম। দেখা যাক কি হয়। তবে মানুষ যেটা বলবে সেটাই হবে।'
No comments:
Post a Comment