'তদন্ত থেকে রেহাই পেতে চান, লাটের বাট!' আক্রমণ সুজনের
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ১২ মে: রাজ্যে দ্রুত পঞ্চায়েত ভোটের দাবীতে সুর চড়ালেন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী। পাশাপাশি তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লাটের বাট বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে জেলা পার্টি অফিসে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এছাড়াও রাজ্যের শাসক দল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এক হাত নেন বাম নেতা।
তিনি বলেন, "পঞ্চায়েতে ভোট সময় মত হোক এটা আমাদের দাবী। রাজ্য সরকার পঞ্চায়েতের ভোট করতে সাহস পাচ্ছে না। রাজত্ব দেখছে পশ্চিমবাংলার কি হাল তা দেখছে এবং দেখছে আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাচ্ছিল বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসছিল। অন্য দল থেকে উন্নয়নের জোয়ারে নাকি সব তৃণমূলে আসছিল। এখন দেখতে পাচ্ছে তৃণমূল বা বিজেপি ভেঙে মানুষ বলছে একটাই ভরসার জায়গা লাল ঝাণ্ডা।"
বাম নেতা বলেন, "লাল ঝাণ্ডার শক্তিটা বাড়ছে এবং আমাদের স্লোগান খুব পরিষ্কার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করতে হবে। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, চ্যালেঞ্জ নাও। পঞ্চায়েত ভোটের দিন দাও।" নাম না নিয়েই তৃণমূলকে লুটেরা ও বিজেপিকে বিভাজনের শক্তি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, "তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। লুটেরা ও বিভাজনের শক্তিকে হটাও। লুটেরা এবং বিভাজনের শক্তির বিরুদ্ধে বাকি সবাইকে এক জোট করতে পারাটা আমাদের কাজ। এটা ধারাবাহিক ভাবে চলছে। সেই কাজটা বাড়বে।"
নিয়োগ মামলায় হাইকোর্টের রক্ষাকবচ পাননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে অভিষেককে কটাক্ষ করেন তিনি। সুজন চক্রবর্তী বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি লাটের বাট নাকি, লাটসাহেব! তদন্তের মুখোমুখি হতে পারবেন না, তাহলে বাজারে লম্বা ভাষণ দেন কেন? লম্বা-চওড়া কথা বলা বন্ধ করুন।" তিনি বলেন, "সমস্ত দুর্নীতির মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে যুক্ত এটা বারে বারে স্পষ্ট করে দিয়েছেন এক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই কুন্তল ঘোষ।" তোপ দেগে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আটকেছে। তারপর সুপ্রিম কোর্টে আটকে যাওয়ার পরেও কলকাতা হাইকোর্টের বেঞ্চ চেঞ্জ করার পর এখনও পর্যন্ত অর্ডারটা বাতিল করেনি। উনি লুট নয়, তদন্ত থেকে রেহাই পতে চান। লাটের বাট সব। এরপর দরকার হলে কোমরে দড়ি দিয়ে নিয়ে যেতে হবে খেয়াল রাখে যেন।"
পুর নিয়োগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পুনর্বহাল সম্পর্কেও রাজ্য সরকারকে খোঁচা দেন সুজন। তিনি বলেন, "কথায় আছে না হাকিম নড়িল কিন্তু হুকুম রইল না। রাজ্য সরকারের বোঝা উচিত যে অপদার্থতার সীমা তারা অতিক্রম করছে।" তিনি বলেন, "পুর নিয়োগে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। এছাড়াও টেট, এসএসসি, কলেজ সার্ভিস কমিশন বন সহায়ক নিয়োগ পাব্লিক সার্ভিস কমিশন সব কিছুতেই দুর্নীতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে অভিযোগ করেছিলেন বন সহায়ক নিয়োগে দুর্নীতি বলে। গোটা রাজ্যে দুর্নীতির রমরমা।"
পুর নিয়োগে দুর্নীতি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওরা আপত্তি করতে শুরু করল ঠিকই, কিন্তু হাকিম নতুন অমৃতা সিনহার বেঞ্চ একই বললেন; ভয়াবহ এই দুর্নীতি এবং এর তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতেই বহাল থাকবে বরং রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে এই দুর্নীতিতে কারা যুক্ত সেটা খুঁজে বার করা জরুরী। রাজ্য সরকার যেন সিবিআইকে যথাযথ সাহায্য করে।" তিনি বলেন, "রাজ্য সরকার তালগোল পাকাতে চাইছে, ধামাচাপা দিতে চাইছে। শুধু লুটের ভাগীদার হতে চায় শাসক দল। তাদের কথায় সরকার নাচছে।"
মুখ্যমন্ত্রী সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে পুলিশের নিয়োগের কথা বলেছেন। সেই ইস্যুতে সুজন বলেন, "গত ১১ বছরে পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগ হয়নি। যতটুকু হয়েছে তা বিভিন্ন রকম বেনিয়মি পদ্ধতি দিয়ে করেছে। এখন বলছেন একটা সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে পুলিশ। তাহলে তো ওটা পুলিশ হবে না ওটা হবে তৃণমূলী ক্যাডার। সাত দিনের ট্রেনিং নিয়ে তৃণমূলের হয়ে কি করে ভোট লুট করা যায় তার একটা বন্দোবস্ত।"
"ওই অভিষেক ঘুরে বেড়াচ্ছে ভোট লুটের কাজ মহড়া দেওয়ার জন্য তার সাথী হতে পারে। যেটা করার জন্য উনি সিভিক পুলিশকে নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন এখন সিভিক পুলিশকে দিয়ে সে কাজ করতে পারেননি। সিভিক পুলিশরা সবাই সে কাজ করতে চায় না। আর আইনের দিক থেকেও তার কোনও সুযোগ নেই। সেই কারণে সিভিক নামটা বাদ দিয়ে পুলিশ নাম রেখে সাত দিনের আরেকটা সিভিক কনস্টেবলের মতন করতে চান। উনি সবেতেই যদি সিভিক চান মুখ্যমন্ত্রীর পদটাকেও সিভিক করে দিন না। ভাইপোকে বসিয়ে দিন সাত দিনের ট্রেনিং দিয়ে", সংযোজন বাম নেতার।
No comments:
Post a Comment