নিভৃতবাস কাটিয়ে উঠলেন জগন্নাথ দেব! নবযৌবন উৎসবে মাতোয়ারা মাহেশ
নিজস্ব সংবাদদাতা, হুগলি, ১৯ জুন: ৬২৭ বছরের মাহেশের জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবের প্রাক্কালে এক বিশেষ উৎসব হল নবযৌবন বা নবকলেবর উৎসব। এই দিনই একমাত্র যখন জগন্নাথ দেবের হাত দেখা যায় মহেশের মন্দিরে। নবযৌবন উপলক্ষে জগন্নাথ দেবকে পড়ানো হয় রুপোর হাত। একদম রাজ বেশে সাজানো হয় মহাপ্রভুকে।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রজাপতি ব্রহ্মার আদেশে শুরু করেন বিষ্ণুর এক অনন্য রূপের আরাধনা। কিন্তু বিষ্ণুর এই রূপ কেমন হবে তা নিয়ে তিনি দুঃশ্চিন্ত হয়ে পড়েন। দেশ-বিদেশ থেকে বহু কারিগর নিয়ে আসার পরেও নিম কাঠ থেকে ভগবানের রূপ বানাতে সবাই অক্ষম হয়। তখন স্বর্গ থেকে স্বয়ং ভগবান বিশ্বকর্মা রাজার কাছে আসেন এক কারিগরের বেশে। রাজার সাথে বিশ্বকর্মার শর্ত হয়েছিল এই যে, তিনি যতদিন ওই মূর্তি গড়বেন ততদিন যেন রাজা মূর্তি গড়ার ঘরের দরজা না খোলেন। বিশ্বকর্মার শর্তে রাজা রাজি হলে কারিগর বেশি বিশ্বকর্মা শুরু করেন মূর্তি নির্মাণের কাজ। বন্ধ ঘরে কাজ করতে থাকেন বিশ্বকর্মা। কিন্তু কেমন ভাবে মূর্তি তৈরি হচ্ছে, এই রূপ দেওয়া হচ্ছে তা দেখার জন্যে উদগ্রীব হয়ে পড়েন রাজা। অবশেষে একদিন ধৈর্য না ধরে রাখতে পেরে তিনি খুলে দেন মূর্তি তৈরি ঘরের দরজা। রাজা শর্ত না মানায় বিশ্বকর্মা তার কাজ সম্পন্ন করার আগেই সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। রাজা ঘরে ঢুকে দেখেন বিষ্ণুর সেই রূপের বাকি সবকিছু তৈরি হলেও বাকি থেকে যায় হাত। তারপর থেকেই জগন্নাথ দেবের হাত ছাড়াই মূর্তি পুজো হয় সমস্ত জায়গায়।
মহাপ্রভুর নবযৌবন উৎসবের দিনে একমাত্র যেখানে মাহেশের জগন্নাথ দেবকে পড়ানো হয় রুপোর হাত। স্নানযাত্রা উৎসবের পর জগন্নাথ দেবের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। তাই মহাপ্রভুকে একদম একান্তে মন্দিরের গর্ভগৃহে ১৫ দিনের জন্য নিভৃত বাসে রাখা হয়। এই ১৫ দিন মন্দিরের সমস্ত দরজা বন্ধ থাকে। এমনকি ভক্তদের নাম-কীর্তন বন্ধ থাকে ওই সময়। ১৫ দিন বাদে মহাপ্রভু সুস্থ হয়ে উঠলে সেই দিনটিকে পালন করা হয় নবযৌবন উৎসব রূপে। এদিন মহাপ্রভু জন্য ৫৬ রকম ভোগ নিবেদন করা হয়। একইসঙ্গে এই দিনে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা তিন জনকে হাত ও অলঙ্কার পরিয়ে নতুন রূপে রাজ বেশে সাজানো হয়।
কথিত রয়েছে, জগন্নাথ দেব এই দিন জ্বর থেকে সেরে উঠে মহানন্দে থাকেন। দীর্ঘ ১৫ দিন মন্দিরের মধ্যে নিভৃত বাসায় থাকার পর আজই প্রথম মহাপ্রভুকে দর্শন জন্য মন্দিরের দরজা খোলা হয়। এই নবযৌবন উৎসবের এক বিশেষ মাহাত্ম্য হল জগন্নাথ দেবের হাত। নবযৌবন উৎসবের দিন জগন্নাথ দেবের শরীরে হাত লাগানো হয়। ভক্তদের বিশ্বাস এই দিন জগন্নাথ দেব রাজ বেশে থেকে সমস্ত ভক্তদের দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেন। এই একটি দিনই জগন্নাথ দেবের শরীরে হাত দেখতে পাওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment