আজব রীতি! মৃতের সঙ্গে বিয়ে জীবিতর
প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২০ জুন: বিয়ে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিয়ে ঘিরে নানান আচার রীতি পালন হয়ে থাকে। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এই রীতিও আবার ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু জানেন কি মৃতের সঙ্গে বিয়ের রীতিও রয়েছে? পিলে চমকে দেওয়ার মত এই রীতি পালন হয়ে আসছে ৩ হাজার বছর ধরে। আবার ২ জন মৃতের সঙ্গে বিয়ের রীতিও প্রচলিত সেখানে। এমন অদ্ভুত রীতি রয়েছে চীনে।
চীনের শানসি প্রদেশে হয় এই বিয়ে, যাকে বলে ঘোস্ট ম্যারেজ বা ভূতের বিয়ে। কোনও পুরুষ বা মহিলা যদি অবিবাহিত অবস্থায় মারা যান, তবে তাঁদের মৃতদেহের সঙ্গে একজন জীবিত মহিলা বা পুরুষের বিয়ে দেওয়া হয়।মৃত ব্যক্তির জন্য বিবাহযোগ্য কাউকে না পেলে অন্য এক মৃতের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবারের সদস্যরা।
এখানেই শেষ নয়, এমন বিয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে যৌতুক প্রথা। বরের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন কনের পরিবার। তবে বয়স, শ্রেণী বা বংশমর্যাদার ওপর যৌতুকের বিষয়টি নির্ভরশীল।
আর এই ভূত বিয়ের দিন দুই পরিবার জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উৎসব হিসেবে পালিত হয় এই বিয়ে। সারাদিন অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়া শেষে মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে পুরুষের কবরে দেওয়া হয় মৃত মহিলার শরীরের হাড়। তবে, কবর দুজনকে আলাদাই দেওয়া হয়।
এই ভূত বিয়ের সময় এসব পরিবার সাধারণত একজন ধর্মজাযকের সঙ্গে পরামর্শ করে। মৃত অবিবাহিতা মহিলাকে যখন ভূত বিয়ে দেওয়া হয়, তখন বর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ঘটে আজব কাণ্ড। লাল রংয়ের বড় একটি খামের মধ্যে অর্থ ঢুকিয়ে রেখে দেওয়া হয় রাস্তার মাঝখানে। কোনও পুরুষ যদি খামটি উঠিয়ে নেন, তাকে জোর করে মৃত মহিলার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি ওই বরের পরিবার থেকেও আদায় করা হয় অর্থ।
এই আজব বিয়েতে মৃতকে যেমন সাজানো হয়, তেমন জীবিতকেও হয়। মৃত মহিলাকে পড়ানো হয় সাদা রংয়ের গাউন। সেই সঙ্গে ভারী গয়না দিয়ে সাজানো হয়। অন্যদিকে বর-মশাইকেও সাজানো হয় পরিপাটি করে। এক কথায় এই বিয়ে ঘিরে জাঁকজমকতার অন্ত থাকে না। এমন বিয়ের মূল ভাবনা হল, 'মৃত্যুর পরেও কেউ একা নয়।'
অনেক চীনা উপজাতিরা বিশ্বাস করেন, মৃতদের ইচ্ছে পূরণ করা না হলে পরিবারের বাকিদের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে। এজন্য মৃত ব্যক্তিকে শান্তি দেওয়ার জন্য ভূত বিয়ের আয়োজন করা হয়। চীনের বেশ কিছু এলাকায়; যেমন- উত্তর ও মধ্য চীন শানসি ও হেনান প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে পালন করা হয় এমন রীতি।
হাজার হাজার বছর ধরে এমন এক কুসংস্কারে ডুবে আছে চীনারা। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হল, এই ভূত বিয়ের জন্য অনেকে পাত্র-পাত্রী না পেয়ে অবশেষে কবরস্থান থেকে মৃতদেহ চুরি করে থাকেন। বিভিন্ন স্থানে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালের শানসি প্রদেশের একটি গ্রাম থেকে ১৪ জন মহিলার দেহ চুরি হয়। অনেকেই দেহ চুরি করে অর্থের লোভে বিক্রি করে দেন ওইসব পরিবারের কাছে, যাদের ভূত বিয়ের প্রয়োজন।
No comments:
Post a Comment