পঞ্চায়েতে প্রার্থী শূন্য আসন রায়নায়, নেপথ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব?
নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব বর্ধমান, ২৩ জুন: রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বেজেছে। মনোনয়ন পর্ব শেষে প্রচার অভিযানে নেমে পড়ছে শাসক-বিরোধী সব দলগুলোই। কিন্তু বিরল ঘটনা পূর্ব বর্ধমানে। গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে কোনও দলেরই কোনও প্রার্থীই নেই, অর্থাৎ প্রার্থী শূন্য আসন। ফলে ওই আসনে 'উপনির্বাচন' করাতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
জেলার রায়না-২ ব্লকের গোতান গ্রাম পঞ্চায়েতের যশাপুর গ্রাম। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর আসনটিতে তৃণমূলের তরফে সালমা খাতুন মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসনটি পেতে চলেছিল তৃণমূল। মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন। ওইদিন ওই আসনের একমাত্র প্রার্থী সালমা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলত ওই আসনে আর কোনও প্রার্থীই থাকলেন না। প্রার্থী শূন্য হয়ে গিয়েছে জেলার এই আসনটি। অনেক পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদও মনে করতে পারেছেন না অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না!
রায়না-২ ব্লকেই গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে সিপিএম প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে এবার। পাঁইটা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আসনটি সিপিএমের দখলে চলে গিয়েছে ভোটগ্রহণের আগেই। এবার প্রার্থী শূন্য পঞ্চায়েত আসনও দেখল এই ব্লক। কেন ঘটল এমন ঘটনা?
রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই বিরল ঘটনা ঘটেছে এখানে। এই ব্লকে ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে, যার মোট আসন ১৪০টি। তার মধ্যে একটি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে সিপিএম। ১৩৯টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এছাড়া রায়নার বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি শম্পা ধাড়ার অনুগামীরা বহু আসনে নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেন।
পরবর্তী ক্ষেত্রে দল সিদ্ধান্ত নেয় ৫০ শতাংশ আসনে নির্দলদের প্রতীক দেওয়া হবে। এই নিয়ে ব্লক তৃণমূল সভাপতি অসীম পাল, ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি জুলফিকার আলি সহ বহু তৃণমূল নেতাকর্মীরা কার্যত বিদ্রোহ করেন। বিক্ষোভ দেখান। এমনকি নির্দলদের প্রতীক দিলে বাকি আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাহারের হুমকিও দিয়েছিলেন। তার ফলেই গোতান পঞ্চায়েতের যশাপুর গ্রামের আসনের তৃণমূল প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। ফলে ওই আসনটি প্রার্থী শূন্য হয়ে গিয়েছে।
মনোনয়ন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে সালমা খাতুনের দাবী, দলের নির্দেশেই তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অসীমা পাল জানান, এই ব্লকে মনোনয়ন ঘিরে যা ঘটছে, তা সকলেই জানেন। দলের নির্দেশ তিনি সকলকেই জানিয়েছেন। এর পরেও কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ থাকতে পারে। সবাই তাঁর কথা শোনেননি। এর ফলে কোথাও বিরোধী প্রার্থীদের সুবিধা হয়েছে। আসনটি প্রার্থী শূন্য হওয়ায় সেখানে পরবর্তীতে উপনির্বাচন হবে। বিডিও অনীশা যশ জানিয়েছেন, 'কোনও প্রার্থী না থাকায় কমিশনের নিয়ম মতো সেখানে উপনির্বাচন হবে। তবে সেটা পঞ্চায়েত নির্বাচন মেটার পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ এলে তবেই।'
No comments:
Post a Comment