সেলাই মেশিন আবিষ্কারের আশ্চর্য ইতিহাস - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 24 July 2023

সেলাই মেশিন আবিষ্কারের আশ্চর্য ইতিহাস

 


সেলাই মেশিন আবিষ্কারের আশ্চর্য ইতিহাস




প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২৪ জুলাই: বর্তমানে আমরা যে জামা কাপড় পরি তাতে দর্জি এবং সেলাই মেশিনে ভূমিকা সব থেকে বেশি। প্রাচীনকালে যখন সেলাই মেশিন ছিল না তখন একটি কাপড় সেলাই করতে অনেক বেশি সময় লাগত। ফলে সেলাই মেশিনে আবিষ্কার আমাদের আধুনিক সভ্যতার একটি বড় উপহার। কিন্তু আপনি কি জানেন এই সেলাই মেশিন কি কে কবে এবং কিভাবে আবিষ্কার করেছিলেন?


এখন থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার বছর আগে মানুষ প্রথমে হাতে সেলাই শুরু করা শুরু করে। প্রাণীর হাড় এবং শিং থেকে প্রথম সুই তৈরি হয়। প্রথমদিকে প্রাণীর পেশির তন্তুকে সুতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ধীরে ধীরে সেই সুইগুলো উন্নতমানের হয় এবং আমরা বর্তমানে স্টিলের সুই দেখতে পাই। যা দিয়ে খুব সূক্ষ্ম সেলাই করা যায়। এমন কি ১৮০০ সালের দিকে অনেক কিছু এমন নির্মাণ হয়েছে যা আমরা ভাবতেই পারি না। 


১৭৫৫ সালে চার্লস উইসেন্থালের পেটেন্টকে প্রথম সেলাই মেশিন আবিষ্কার করেন। এই সেলাই মেশিনে দুটি সুই ছিল যা কাপড় বা চামড়া সেলাই করতে পারতো। তবে ১৮০০ সালে যখন ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন হয় তখন ইউরোপ জুড়ে বড় বড় কাপড়ের কল নির্মাণ হয় কিন্তু সে সময় হাতে সেলাই করা খুব ধীর গতিতে হতো ফলে কারখানার প্রোডাকশন কমে যেত এ কারণে কারখানার এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করতে চাইছিলেন যেখানে তাড়াতাড়ি সেলাই করা যাবে। 


কিন্তু ১৭৯০ সালে এক ইংরেজ আবিষ্কারক থমাস সেইন্ট একটি উন্নত মানের সেলাই মেশিন আবিষ্কার করেন তার এই মেশিন কাঠের তৈরি ছিল তবে তিনি তার এই মেশিন কে বেশি প্রচার করতে পারেননি মুচি যেমন করে জুতো সেলাই করত ঠিক সেভাবেই থমাসের এই মেশিনে সেলাই করা হতো। তবে তবে এই সেলাই করতে যে মেশিনে আবিষ্কার হওয়ার তার গতি কম ছিল এবং হাতে করা সেলাই যেমন আকর্ষণীয় লাগে, এই মেশিনে সেলাই তেমন আকর্ষণীয় ছিল না।


থমাস সেইন্টের নকশার প্রায় ৪০ বছর পরে প্রথম কোনও কার্যকরী সেলাই মেশিন পৃথিবীতে আসে। বার্থেলেমি থিমোনিয়ার নামের এক ফরাসি দর্জি এই মেশিনটি তৈরি করেন। তিনি নকশার পেটেন্ট করানোর পরে তার এই যন্ত্রকে ক্রেন্দ্র করে একটি পোশাক সেলাই কারখানাই খুলে বসেন। এমনকি তিনি তার কারখানায় ফরাসি সেনাবাহিনীর জন্য ইউনিফর্ম তৈরির ফরমায়েশও পেয়ে যান। কিন্তু তার পেশার অন্যান্য লোকজন এক বিপত্তি তৈরি করে। কাজ হারানোর ভয়ে তারা থিমোনিয়ারের কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়। কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান বার্থেলেমি থিমোনিয়ার। কিন্তু তার সেলাই কারখানাটি আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।


এরপর ১৮৪৫ সালের শ্রীমনে সে আগে আবিষ্কার করার মেশিন থেকে আরও উন্নত মানের মেশিন বা আবিষ্কার করেন কালকে তিনি পেটেন্ট করিয়ে নেন এই নতুন মেশিন ছিল লোহার তৈরি ফলে এই মেশিন বেশি মজবুত ছিল কিন্তু সে মনে এই মেশিনে একটু সমস্যা ছিল এতে হওয়া সেলাই এ একটি বাঁধন তৈরি হতো যা খুব মজবুত ছিল না তাই তিনি এই মেশিন পেটেন্ট করতে চান নি পরে যখন তিনি ভাবেন এই মেশিনটি বাজারে খুব বেশি প্রচার হতে করে তখন এটি পেটেন্ট করাতে যান কিন্তু তার আগে এক ইংল্যান্ডে বিজ্ঞানী এলিয়াস হউ তার মেশিন পেটেন্ট করিয়ে নিয়েছিলেন।


পরবর্তীতে আরেক মার্কিন নাগরিক এলিয়াস হউ ফিশারের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন এনে একটি সেলাই যন্ত্র তৈরি করেন। তার নকশার পেটেন্ট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, যন্ত্রনির্ভর সেলাই এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সেলাইয়ে ব্যবহৃত সুতা মূলত দুটো থ্রেড থেকে আসে। সেলাইয়ে ব্যবহৃত সুচের মাথায় একটি ছিদ্রে একটি থ্রেডের সুতা এবং কাপড়ের নিচে থেকে অন্য থ্রেডের সুতা আসে।



আইজাক মেরিট সিঙ্গারকে আধুনিক সেলাই মেশিনের পথিকৃৎ বলা হয়। তিনি ‘সিঙ্গার কোম্পানি’ নামে যে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন তা আজ ইলেকট্রনিক্স জগতে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। সিঙ্গার কোম্পানির সবচেয়ে প্রথম এবং পুরনো পণ্য হচ্ছে সিঙ্গার সেলাই মেশিন। আজকের দর্জি দোকানে যেসব সনাতন সেলাই মেশিন দেখা যায়, সেগুলো মূলত আইজাক সিঙ্গারের নকশায় অনুপ্রাণিত। সুন্দর, সুসজ্জিত এবং ঐতিহ্যবাহী এই সেলাই মেশিনে পায়ের প্যাডেল এবং উপর-নিচ সুচের ব্যবহার রয়েছে। আইজাক সিঙ্গার মূলত তার নকশায় হউ, হান্ট এবং থিমোনিয়ারের নকশার সুন্দর এক সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। অনুমতিবিহীন নকশা ব্যবহারের জন্য পরবর্তীতে তাকে হউ আদালতে হাজির করেন।


পেটেন্ট মামলায় এলিয়াস হউ জিতে যান। সিঙ্গার যদিও নিজের পক্ষে এই যুক্তি দেখান যে, তিনি ওয়াল্টার হান্টের নকশা অনুসরণ করেছেন। কিন্তু আদালত হান্টের নকশার কোনো পেটেন্ট না থাকার কারণে এই যুক্তি খারিজ করে দেন। জরিমানা হিসেবে এলিয়াস হউ সিঙ্গার কোম্পানির লভ্যাংশের একটি অংশ পাবেন বলে আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করে।


হেরে যাওয়ার পরেও সিঙ্গার এবং তার প্রতিষ্ঠিত I.M. Singer & Co কোম্পানির ইতিহাস শুধুই লাভের। হউ এবং সিঙ্গার দুজনেই মাল্টি-মিলিয়নিয়ার হিসেবে মারা যান। আজ সিঙ্গার কোম্পানি কিন্তু শুধু সেলাই মেশিন নয় বরং আরও নানা ইলেকট্রনিক পণ্য সম্ভারের জন্য সবার কাছে এক সুপরিচিত নাম।


হাতে সেলাইয়ের পরিবর্তে সেলাইয়ে মেশিন তৈরিতে বহু উৎসাহী মানুষ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাদের নানা প্রচেষ্টা নানা সময়ে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু থেমে থাকেনি সেলাই যন্ত্র তৈরির এই প্রচেষ্টা। এসব উৎসাহী এবং পরিশ্রমী মানুষদের কল্যাণেই আজ আমরা আধুনিক এক বস্ত্রশিল্প উপভোগ করছি। প্রাচীন সময়ের প্রাণীর চামড়া দিয়ে লজ্জা নিবারণ আর এখনকার বস্ত্র শিল্প এবং আধুনিক সেলাই প্রযুক্তির মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad