বাড়বকুণ্ড: জলের মধ্যেই জ্বলছে আগুন!
প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২৪ জুলাই: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির একটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজলা। এই উপজেলার একটি অতিহ্যবাহী ইউনিয়ন হল বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন। এই বাড়বকুনণ্ড নামকরণের পিছনে রয়েছে বিশেষ কারণ। এখানে হাজার বছর ধরে রহস্যজনক ভাবে জলের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। সীতাকুণ্ড সদর থেকে তিন মাইল দক্ষিণে এবং সেখান থেকে এক মাইল পূর্বে পাহাড়ের উপর রয়েছে একটি দ্বিতল মন্দির, যার নাম বাড়বকুণ্ড মন্দির। মন্দিরে নিম্ন ্তলে রয়েছে একটি কুপ বা কুণ্ড, যা বাড়বকুণ্ড নামে পরিচিত। এই কুণ্ড থাকার কারণে মূলত এলাকাটি বাড়বকুণ্ড নামেই পরিচিতি লাভ করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, বাড়বকুণ্ডে স্নান ও তর্পণ করলে গঙ্গা স্নানের ফল হয়।
২০০৮ সালে মন্দিরটির পুননির্মাণ করা হয়। শত বছর পুরোনো এই মন্দির। মন্দিরে প্রবেশ করলেই ফুটন্ত জলের যে আওয়াজ হয় তা শোনা যায়। সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামলেই অগ্নিকুন্ড। অগ্নিকুন্ডের যে জল সেটা একদমই ঠাণ্ডা। অগ্নিকুন্ডের আগুনের জন্য জলে বুদবুদের আকার ধারণ করে আর সেই জল খুব পরিষ্কার। সেখানে আগুনের তাপ এতটাই যে কাছে যাওয়া যায় না। ওখানে দুটো শিব লিঙ্গও আছে।
কয়েকশো বছরের পুরোনো কালভৈরবীর মন্দিরের পাশেই এই অগ্নিকুণ্ডের অবস্থান। অনেকের মতে অগ্নিকুণ্ডটি ১০০০ বছরের পুরোনো। কিন্তু এটির মধ্যে আগুন জ্বলার রহস্য খুঁজতে গিয়ে মিলেছে নানা রকমের উত্তর। কারও কারও মতে এটি একটি অভিশপ্ত কুপ আবার কারও মতে এটি প্রাকৃতিক কারণ। প্রচলিত রয়েছে, প্রাচীনকালে দেব-দেবীদের উদ্দেশ্যে নরবলি দেওয়া হত এই জায়গায়। এভাবে চলতে চলতে একদিন আগুন ধরে যায়। অনেক চেষ্টার পরও নেভানো যায়নি সেই আগুন, যা যুগ যুগ পেরিয়ে এখনও জ্বলছে।
পৌরাণিক মতে, শিব ও পার্বতী ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। পার্বতীর বাবা একদিন শিবকে অপমান করলে তা সহ্য করতে না পেরে দেহ ত্যাগ করেন পার্বতী। সেই খবর পেয়ে রাগে পার্বতীকে নিয়ে তান্ডব নৃত্য শুরু করেন শিব। এই কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল পৃথিবী আর শিবকে শান্ত করতে ও পৃথিবীর ধ্বংস ঠেকাতে বিষ্ণু তাঁর চক্র দিয়ে পার্বতীর শরীরকে ৫১ ভাগ করেন, যার একটি ভাগ পড়েছে বাড়বকুণ্ডের এই জায়গায়।
তবে, বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। বিজ্ঞানের মতে, ব্রিটিশ আমলে এই পাহাড়ে মিলেছিল মিথেন গ্যাসের সন্ধান। কোনও এক কারনে সে সময় সিসা দিয়ে গ্যাস কুপের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই জলে জ্বলে আগুন, যা এখনও জ্বলছে। অগ্নিকুণ্ড থেকে বেরিয়ে এখানে অনেকগুলো মন্দির আছে এবং প্রত্যেকটি মন্দিরে শিব লিঙ্গ রয়েছে যেগুলো শত বছরেরও পুরোনো। আর এখানে আছে একটি বিষ্ণু মন্দিরও। এই মন্দিরগুলোতে নিত্যদিনের পুজো দেওয়া হয়।
এখানে কিছু ঝর্নাও রয়েছে। এখানে পাহাড়গুলো যে আছে সেগুলো চন্দ্রনাথ মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত মানে সব পাহাড়ই একই সারিতে আছে।
No comments:
Post a Comment