১৫১৮-র নাচের মহামারী! অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত আট থেকে আশি - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday 20 July 2023

১৫১৮-র নাচের মহামারী! অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত আট থেকে আশি


১৫১৮-র নাচের মহামারী! অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত আট থেকে আশি 




প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২০ জুলাই: ১৫১৮ সালের নাচের মহামারী ডান্সিং প্লেগ নামেও পরিচিত। এই অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটে স্টেসবার্গ‌‌‌ নামক শহরে, যা বর্তমানে আধুনিক ফ্রান্স। ঘটনাটি ঘটে ১৫১৮ সালের জুলাই মাসে, যখন ফোট্রফিয়া নামের এক মহিলা রাস্তায় নেমে আসেন এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে নাচতে শুরু করেন। তিনি টাউনস্কোয়ারে বিরতিহীন ভাবে নাচতে থাকেন এবং অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করতে থাকেন। ক্লান্তি এবং শারীরিক অস্বস্তি থাকা সত্ত্বেও তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, তিনি থামতে পারছেন না। আশ্চর্যজনক ভাবে কিছু দিনের মধ্যে আরও মানুষ এসে তার সাথে যুক্ত হয়। যেন অদৃশ্য এক শক্তি তাদের টেনে আনছে। তাদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং খুব শীঘ্রই গোটা শহর উন্মাদের মতো নাচতে থাকা মানুষে ভরে যায়। 



পুরুষ, মহিলা এমনকি বাচ্চারাও এই রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের বয়স এবং শারীরিক অবস্থা নিয়ে তারা দিন-রাত নাচতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে নাচটি ছিল অনিয়ন্ত্রিত। এমনকি তারা বিভ্রান্তির মধ্যে আছে। তারা বিশ্রাম নিতে পারছিল না, বা তারা নাড়াচাড়া থামাতেও পারছিল না। কিছু মানুষ ক্লান্ত হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত অথবা নাচের কারণে তাদের শরীরে কোনও আঘাত পাওয়ার আগে পর্যন্ত তারা নাচতেই থাকে। নাচ না থামার কারণে কর্তৃপক্ষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা শুরুতে ভেবেছিলেন যে যারা নাচছিল তারা কোন ধরনের ছোঁয়াচে রোগ অথবা অতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। 



পরিস্থিতি ভালো করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রোফেশনাল মিউজিশিয়ান এবং নৃত্যশিল্পী নিয়ে আসে আক্রান্তদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য। তারা আশা করছিলেন যে, অভিজ্ঞ নির্দেশনা দ্বারা যারা নাচছিল তারা আরও নিয়ন্ত্রিত এবং গোছানো নিয়মে নাচবে। কিন্তু ঘটলো তার উল্টো। এই পার্ফরমারদের উপস্থিতি যারা নাচছিল তাদের নাচকে যেন আরও জ্বালানি দেয়, কমানোর পরিবর্তে।



মহামারীকে সীমিত আকারে রাখার জন্য অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিদিষ্ট স্থান তৈরি করে দেন, যাতে যারা নাচছিল তারা নির্বিঘ্নে নাচতে পারে।ম্যাডিকেল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসা হয় এই ঘটনাটি শারীরিক না মানসিক কারণ বের করার জন্য। কিছু থিওরি আছে এমন যে নাচটি ছিল এক ধরনের নিউরোলজিক্যাল রোগের ফল। যেমন - ST. Vitus Dance, যা Sydenham Chorea নামেও পরিচিত, যেটি অনৈচ্ছিক নাড়াচাড়া এবং খিঁচুনি ঘটায়। 


অনেক ধারণা করেন ঘটনাটি ঘটে মাসেস্ট এরিয়ার কারণে, যেখানে সমষ্টিগত ভ্রান্তি অথবা সাইকোলজিক্যাল সমস্যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায় একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে। তাছাড়াও স্ট্রেসবার্গ শহরে দুর্ভিক্ষ, সামাজিক অস্থিরতা এবং ধর্মীয় অনুভূতির কারণে ওই সময় তীব্র সামাজিক এবং মানসিক অবস্থা তাদের চাপ এবং দুঃশ্চিতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে, যা এমন ঘটনা ঘটায়।


কয়েক মাস পর নাচের মহামারী কমতে থাকে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। ঐতিহাসিক তথ্য মতে গ্রীষ্মকাল শেষে শীতকাল এলে নাচ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শহরকে অবাক এবং ভীতসন্ত্রস্ত করে। আজ পর্যন্ত এই মহামারীর সঠিক কারণ জানা যায়নি। ঘটনাটি এই সাক্ষ্য দেয় যে, মানুষে ব্যবহার এবং মানসিক অসুস্থতা কতটা রহস্যময়। বহু গবেষক যুগে যুগে ঘটনাটি বিভিন্ন ব্যাখ্যায় দাড় করালেও আজ পর্যন্ত এই ঘটনাটি ইতিহাসে সবথেকে স্থায়ী এবং রহস্যময় ম্যাডিকেলিও ঘটনা ভিত্তিক।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad