পাখি কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছায়?
প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২৩ জুলাই: যুগের পর যুগ বিজ্ঞানীরা একটি অতি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। পাখি কীভাবে হাজার মাইল দূরের গন্তব্যে পৌঁছায়? প্রশ্নটি অতি সাধারণ হলেও, সাধারণ কোনও যুক্তির দ্বারা প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ গবেষকগন বহু আগে থেকেই জানেন, পাখিসহ আরও অনেক প্রাণীই পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র কাজে লাগিয়ে দিক খুঁজে পায়। কিন্তু, ঠিক পাখির কোন অঙ্গটি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র অনুধাবনে কাজে লাগে, তা গবেষকদের জানা নেই।
দেখা, শোনা, স্পর্শ, ঘ্রাণ এবং স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয়, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় অনুভূতিগুলো অনুধাবন করতে পারি। কিন্তু আমাদের এমন কোনও অঙ্গ নেই, যার মাধ্যমে কোনও চৌম্বকের চৌম্বকক্ষেত্র অনুধাবনের সুযোগ রয়েছে। পাখি ও অন্যান্য প্রাণীদের চৌম্বকক্ষেত্র অনুধাবনের ক্ষমতাকে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়, যা এখনও পর্যন্ত আমাদের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি।
১৯৭৮ সালে একজন জার্মান বিজ্ঞানী প্রস্তাব করেন যে, পাখি সহ অন্যান্য প্রাণীর 'রেডিক্যাল পেয়ার ' ব্যবহার করে চৌম্বক ক্ষেত্র অনুধাবন করে। 'রেডিক্যাল পেয়ার' বলতে একজোড়া অণুকে বোঝায়, যার একটিতে পরিবর্তন ঘটালে অন্যটিতে তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন ঘটে। আপনি যদি অণু দুটিকে পৃথক করে মহাবিশ্বের দুই প্রান্তে নিয়ে যান, তবুও এই পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় থাকে। এটি কোয়ান্টাম পদার্থ বিদ্যার একটি বিস্ময়কর বিষয়। দৈনন্দিন জীবনে এ ধরনের কোনও ঘটনার সাথে আমাদের পরিচয় নেই।
'রেডিক্যাল পেয়ার' চৌম্বকক্ষেত্রের উপর নির্ভর করে দুটি অবস্থায় থাকতে পারে, যথাক্রমে ট্রিপলেট স্টেট এবং সিংলেট স্টেট। চৌম্বক ক্ষেত্রের তারতম্য যেকোনও একটি অবস্থার স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। সিংলেট স্টেটের সাপেক্ষে ট্রিপলেট স্টেটের স্থায়িত্বের তারতম্যই চৌম্বক ক্ষেত্র অনুধাবনের মূলমন্ত্র।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পাখির চোখে ক্রিপ্টোক্রম নামক রেডিক্যাল পেয়ার খুঁজে পেয়েছেন। গবেষকগন পরীক্ষাগারে ক্রিপ্টোক্রম তৈরি করেন এবং প্রমাণ করেন, চৌম্বক ক্ষেত্রের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে ক্রিপ্টোক্রমের ট্রিপলেট এবং সিংলেট স্টেটের তারতম্য ঘটে। আবার, পরিযায়ী পাখিদের সাথে সাধারণ পাখি যেমন মুরগির ক্রিপ্টোক্রমের পার্থক্য রয়েছে। গবেষকগন এটিও প্রমাণ করেছেন যে, পরিযায়ী পাখিদের ক্রিপ্টোক্রম সাধারণ পাখিদের তুলনায় চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রতি বেশি সংবেদনশীল।
আগের একটি গবেষণায় জানা গিয়েছিল, পাখির মস্তিষ্কের যে অংশ দৃষ্টিশক্তির কাজে লাগে, ঠিক সে অংশই চৌম্বক ক্ষেত্র সনাক্তকরণেও ব্যবহৃত হয়। ফলে, অনেক গবেষকই মনে করেন, পাখি প্রকৃত পক্ষে চৌম্বক ক্ষেত্র দেখতে পায়। কিন্তু পাখির চোখে চৌম্বক ক্ষেত্র দেখতে কেমন, তা এখনও পর্যন্ত বলা সম্ভব হয়নি।
গবেষণাটি বেশ ফলপ্রসূ হলেও, ধাঁধাটির জট এখনও রয়ে গেছে। কারণ পরীক্ষাটি করা হয়েছে গবেষণাগারের কৃত্রিম পরিবেশে। প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিযায়ী পাখি চৌম্বক ক্ষেত্র সনাক্তকরণে আসলেই ক্রিপ্টোক্রম ব্যবহার করছে কিনা, গবেষকগন তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে, বিজ্ঞানীরা যে রহস্যটির সমাধানের একবারে দ্বারপ্রান্তে, তা আস্থার সাথে বলা যায়।
No comments:
Post a Comment