জানেন কি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য কীভাবে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday 23 July 2023

জানেন কি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য কীভাবে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ?


 জানেন কি ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য কীভাবে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ?




প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৩ জুলাই: প্লাস্টিক দিয়ে বানানো জিনিস আমরা প্রতিদিনই ব্যবহার করি। কারণ এটা খুবই সস্তা এবং ব্যবহার যোগ্য। এর কারণে আমাদের কাজের পদ্ধতি অনেক সহজ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা কি জানি এটা ব্যবহারের পর কোথায় যায়? ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুসারে গত ৫০ বছরে প্লাস্টিকের ব্যবহারের হার যতটা বেড়েছে সেটা জানলে আপনি বিশ্বাস করতে চাইবেন না। 


১৯৬৪ সালে পৃথিবীতে মোট প্লাস্টিক প্রোডাকশন ছিল ১ কোটি সাড়ে ৭ লক্ষ টন, যেটা ২০১৪ সালে এই প্লাস্টিক প্রোডাক্ট ৩৪ কোটি টন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল, আমাদের ফেলে দেওয়া এই প্লাস্টিকের শুধু ৯% রিসাইকেল করা হয়। আর মাত্র ৫০% ইলেকট্রিসি আর বিভিন্ন কলকারখানার হিট জেনারেশনের জন্য ব্যবহার করা হয় আর ৭৫‌.৫% প্লাস্টিক ফেলে দেওয়া হয়। সবচেয়ে আশ্চর্য জনক কথা হচ্ছে প্লাস্টিক পুরোপুরি ভাবে বিকম্পোশ হতে আনুমানিক ৫০০ বছর সময় লেগে যায়। 


৯০-এর দশকে নর্দ্যান প্যাসেফিক সাগরের একটি জায়গায় গার্বেজ দিয়ে একটি দ্বীপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল । যাকে The Great Pacific Garbage Patch বলা হয়ে থাকে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা গেল যে এই গার্বেজ প্যাচের এমাউন্ট আনুমানিক ১০ কোটি টন ছিল, আর আনুমানিক দেড় মিলিয়ন স্কয়ার কিলোমিটারের এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে, যেটা মাদাগাস্কার আইল্যান্ড থেকে ৩ গুন বড় আর গ্রীনল্যান্ড থেকে মাত্র হাফ স্কয়ার কিলোমিটার ছোট ছিল। 


প্রতি বছর ৮০ লক্ষ টন আবর্জনা সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়, যেটা পৃথিবীর টোটাল ফেলে দেওয়া আবর্জনার মাত্র ৩% আর এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোতেও ময়লা ফেলার দিক থেকে সবার ওপরে। বিশেষ করে চায়না। কারণ চায়নায় অনেক বেশী পরিমাণে কলকারখানা থাকার কারণে ময়লা আবর্জনাও বেশি হয়। 


আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি যে, পৃথিবীতে জন সংখ্যার বৃদ্ধির কারণে পৃথিবী বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু সমুদ্রে প্লাস্টিকের মাত্রা বাড়ার বিষয়টি আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিন্তু এটাই কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় হুমকির বিষয়। কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসারে সমুদ্রে থাকা মাছ আর আবর্জনার পরিমাণ একই। সমুদ্রে থাকা ছোট ছোট মাছ যখন এই ফেলে যাওয়া ময়লা খেয়ে নেয় আর ওর থেকে বড় মাছ যখন ওকে খেয়ে নেয়, তখন ফুডচেনের মাধ্যমে ওই প্লাস্টিক মানব দেহে প্রবেশ করে। আর এভাবে সামুদ্রিক জীব থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত এভাবেই এই প্লাস্টিক ছড়িয়ে থাকে। 


জলে বাড়তে থাকা এই পলিউশন ঠেকানোর দুটি রাস্তা রয়েছে; ১-জলে থাকা সব আবর্জনা উঠিয়ে জলকে রিসাইকেল করা। আর ২- আমরা আর পলিউশনই করব না। মানে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করব আর প্লাস্টিকের জায়গায় বায়োডিগেডাব্যাল প্লাস্টিক ব্যবহার করব, যেটা কাগজ আর অন্যান্য কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি এবং এটা পরিবেশ বন্ধব। এটা সহজেই রিসাইকেল করা যায় এবং সহজে ডিকম্পোজ হয়ে যায়। 


অনেক পরিবেশবিদদের মতে ননডিগেরেবব্যাল প্লাস্টিকের সঠিক ব্যবহারে পলিউশন ঠেকানো সম্ভব। আর এই পদ্ধতি একটু লম্বা কিন্তু অসম্ভব নয়। আর এই ব্যবহার জাপান আর অন্যান্য কিছু দেশ ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। জাপানের কান্সা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট আর মেটেলিজিক্যাল প্লান্ট প্লাস্টিক ফেলে দেওয়া ময়লার একটি আর্টিফিসিয়াল আইল্যান্ড। আপনারা টোকিও বেকার এর নাম নিশ্চয়ই শুনেশুনেছেন। টোকিও-র এই ড্রিম আইল্যান্ডও এই আবর্জনা দিয়ে বানানো হয়েছে। 


জাপানের মত সিঙ্গাপুরেও এই সেম প্রজেক্ট চালু করা হয়েছে। আর এই আবর্জনার দ্বীপে অনেক গাছও লাগানো হয়েছে, যার কারণে এখানকার জলবায়ু অনেকটা পরিবেশ বদ্ধ। এখন অনেক ইঞ্জিনিয়ার আর ডিজাইনাররাও এই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের ব্যবহার বিল্ডিং আর কনস্ট্রাকশনে করছে। এমন আরও অনেক প্রজেক্ট চালু হয়েছে, যেখানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সমুদ্রের ফেলে দেওয়া আবর্জনা বের করে আনা হচ্ছে এবং সামুদ্রিক প্রানীদের কোনওৎরকম ক্ষতি না করেই। 


অনেক দেশের সুপার মার্কেটগুলোতেও প্লাস্টিক ব্যবহার ব্যান্ড করা হয়েছে এবং সেখানে কাগজ আর কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। রিসেন্টলি একটা পোকার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যেটা প্লাস্টিকে থাকা পলিথিনকে ডিকম্পোজ করতে পারে। এই পোকাটি আসলে ভ্যাসমো লার্ভা। এই লার্ভার এই গুন আচমকাই আবিষ্কার হয়েছিল।ফেড্রিক নামক একজন ব্যায়োলজিস্ট যখন এই লার্ভার ওপর রিসার্চ করছিলেন, তখন উনি এটাকে প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখেছিলেন আর পরে যখন উনি ওই ব্যাগ দেখলেন তখন ওটাতে অনেকগুলি ছিদ্র দেখতে পেলেন, যেটা ওই লার্ভা করেছিল। 


পরে আর একটি গবেষণার পর জানা যায় এই ভ্যাসমো লার্ভাকে ক্যাটাকুলার প্লাস্টিকে থাকা ৯২ গ্রাম পলিথিনকে মাত্র আধা ঘন্টায় ডিকম্পোজ করতে পারে। আশা করছি আমরা ভবিষ্যতে এই লার্ভার মতো নতুন নতুন আবিষ্কার করে পৃথিবীতে বাড়তে থাকা প্লাস্টিকের সঠিক ব্যবহার করতে পারব। গ্লোবাল ওয়ার্মিং আর ওভার পপুলেশনের ভয়ে মানুষ অনেক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করেছে। কিন্তু এই বাড়তে থাকা ভয়ংকর প্লাস্টিকের ভয়ংকর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেকেই অসচেতন। এই প্লাস্টিকে বয়কট করা আর যতয়পারি কম ব্যবহার করা এটা কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের হাতেই রয়েছে। 


আপনাদের কি মনে হয়- এই প্লাস্টিক সামগ্রীকে আমাদের ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে, নাকি এর ব্যবহার কম করে দিতে হবে। মতামত জানান কমেন্ট বক্সে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad