খোলা চুল দেখলেই বিপদ! বিয়ে করতে হবে সেই নারীকেই - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday 30 July 2023

খোলা চুল দেখলেই বিপদ! বিয়ে করতে হবে সেই নারীকেই


 খোলা চুল দেখলেই বিপদ! বিয়ে করতে হবে সেই নারীকেই 



প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৯ জুলাই: কোনও পর পুরুষ যদি অবিবাহিত নারীর চুল দেখেন, তাহলে বিয়ে করতে হবে সেই নারীকে। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এমন প্রথাই চালু আছে চীনের হোয়াংলু গ্রামে। চীনের হোয়াংলু নামের এই গ্রাম পরিচিত তাদের মেয়েদের লম্বা রেশমি চুল দিয়েই। ১.৫ মিটার থেকে ২ মিটারেরও বেশী লম্বা হয় এই গ্রামের মেয়েদের চুল, যার কারণে গ্ৰিনিস বুক অফ ওয়ার্ড রেকর্ডস থেকে খেতাব মিলেছে লম্বা চুলের গ্ৰাম নামে। 


এই চুল নিয়ে তারা এতটা রক্ষণশীল যে, এই গ্রামের মেয়েরা জীবনে মাত্র একবার চুল কাটে এবং তাও শুধু মাত্র তাদের ১৭-১৮ বছরে পদার্পণের পরই। একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই চুল কাটা হয়ে থাকে। এই লম্বা চুল দেখে ফেললেই বিয়ে করতে হবে, এমন রীতির পেছনে রয়েছে গ্রামের এক প্রাচীন কাহিনী। ধারণা করা হয়, যে হাজার হাজার বছর আগে স্থানীয় ইয়াও জন গোষ্ঠীর একটি মেয়ে তার চুল দিয়ে একটি পাত্রকে এক রকম আঘাত করেছিল। আর সেই থেকে আজ অবধি ইয়াও নারীরা তাদের প্রথাকে সম্মান জানিয়ে জীবনে একবার চুল কাটেন। 


১৯৮০ দশক পর্যন্ত স্থানীয় লোকেরা তাই সবাইকে সর্তক করে দিয়েছিল, যদি একজন পুরুষ মানুষ অবিবাহিত মেয়ের চুল দেখেন, তবে তিনি সেই পরিবারের মেয়েকে তার জাতি বা সম্প্রদায় নির্বিশেষে বিয়ে করতে বাধ্য এবং ৩ বছর সেই মেয়ে ও তার পরিবারের সকল সদস্যের ভরনপোষণ তার দায়িত্ব থাকবে। 


রেডিয়াদের জীবনে চুলের মূল্য সম্পত্তির মতোই। তাই এই ব্যাপারে সব ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই চুল বাধা নিয়েও আছে বেশ কিছু নিয়ম কানুন। যদি দেখতে পারা যায় কোনও নারীর চুল তার মাথার চার পাশে বাঁধা, তখন বুঝতে হবে তিনি বিবাহিত, তবে কোনও সন্তানের মা এখনও হয় নি। একই সাথে কোনও মেয়ে যদি কাপড় জড়িয়ে রাখে, তাহলে বুঝে নিতে হবে সেই মেয়ে বর্তমানে অবিবাহিতা এবং জীবন সঙ্গী খুঁজছে। 


ঝড়ে পড়া চুলে মর্মথ্য আছে ইয়াও নারীদের কাছে। তারা প্রতিদিন ঝড়ে পড়া চুল সংগ্রহ করেন এবং তা রেখে দেন। তাই চুলের পরিচর্যাতে ইয়ং নারীরা ব্যবহার করেন না কোনও শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার। তাদের রয়েছে চাল ধোয়া জল, যার মাঝে নানা ধরণের প্রাকৃতিক উপাদান মিশ্রণ করে। মিশ্রণটি একটি পাত্রে সেদ্ধ করা হয় এবং তারপর একটি বালতিতে ঢেলে দেওয়া হয়। একটি কাঠের চিরুনির সাহায্যে নিজস্ব কিছু পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে চুলের ডগা থেকে গোড়া পর্যন্ত মিশ্রণটিকে চুলে মেশানো হয়। এই রুটিনটি তাদের চুলের প্রাকৃতিক চকচকে এবং দেখতের অন্যতম কারণ। ধারণা করা হয় তাদের এই নিয়মে চুলের যত্ন নেওয়ার কারণে হোয়াংলু গ্রামের বয়স্ক নারীরা কুচকুচে কালো চুলের অধিকারী হয়ে থাকেন। 


১৯৮০ অবধি বিয়ের এই নিয়মের খুবই জোরদার পালন হলেও বর্তমানে এই ঐতিহ্য বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে মেয়েরা পড়াশোনার ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে এবং বিভিন্ন শহরেও চলে যাচ্ছে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে আর তারও সাথে নজরে আসছে তাদের চুল কেটে ফেলার প্রবণতাও। ফটোগ্রাফার জয়েস এনজির গ্রামটি ঘুরে এসে এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করেন এবং একজন বয়স্ক মহিলাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করেন। 


এনজি তার উত্তরে এক প্রকার অবাক হয়ে যান। এনজি বলেন, সেই বৃদ্ধা নারী জানিয়েছেন, এটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে, সর্বোপরি হোয়াংলু পুরো বিশ্বের কাছে লম্বা চুলের গ্ৰাম হিসেবেই পরিচিত, যার ফলে পর্যটনের সুযোগও বেড়েছে সেখানে। গ্রামটিতে পর্যটকের জন্য নিজস্ব থিয়েটারও রয়েছে। সেখানে ইয়াও মহিলারা তাদের ঐতিহ্যবাহী লাল পোষাকে লোকনাচ ও গান পরিবেশন করেন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad