কঙ্কাল তীর: অভিশপ্ত এক সমুদ্র সৈকত
প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৫ জুলাই: শত শত বছর ধরে একটা সৈকত নাবিকদের কাছে এক বিভীষিকার নাম। ঝড়ের কবলে পড়ে এই সৈকতে জাহাজের জীবন সায়াহ্ন ঘটেছে। ফলে সৈকতের নাম হয়েছে স্কেলেটন কোস্ট বা কঙ্কাল তীর। এই তীরেই উন্মত্ত আটলান্টিক মহাসাগর নামিব মরুভূমির বালির সাগরে মিলিত হয়েছে।
নামিব মরুভূমি নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে দর্শনীয় মরুভূমিগুলির একটি। এখানে সুউচ্চ বাদামী বালির টিলা আর লবণ সমতল এক এলিয়েন জগতের প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছে। লবণ সমতলে পাতা ঝরা কঙ্কাল বৃক্ষগুলো যোগ করেছে সৌন্দর্যের আরেক মাত্রা। কিন্তু নামিব মরুভূমি যতটা সুন্দর ভয়ঙ্করও ঠিক ততটাই। পৃথিবীর কম সংখ্যক প্রাণীরই এখানে টিকে থাকার সামর্থ্য রয়েছে। বৃষ্টিপাত এখানে নেই বললেই চলে। বজ্রকঠিন উত্তাপ, পানীয় জল আর খাবারের অভাব মরুভূমিটিকে সাক্ষাৎ নরকে পরিণত করেছে। ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে বেঁচে ফিরলেও এই তীরে নাবিকদের বেঁচে থাকা ছিল প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু, কেন এই তীরে এত জাহাজ ধ্বংস প্রাপ্ত হল? আটলান্টিকের উর্ধ্বমুখী বেঙ্গুয়েলা স্রোত এই তীরে প্রচুর কুয়াশার সৃষ্টি করে। আবার বছরের বেশির ভাগ সময় এই তীরে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে। ফলে, ভুলক্রমে এই তীরে একবার ঢুকে পড়লে ইঞ্জিনচালিত জাহাজের জন্যও এখান থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আর জাহাজটি ইঞ্জিনচালিত না হলে রক্ষা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
একমাত্র বাঁচার পন্থা নামিব মরুভূমির নারকীয় শত শত মাইল পথ পাড়ি দেওয়া। কিন্তু, এ পথে পা বাড়ালেও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এজন্যই, নামিব মরুভূমির বুশম্যানরা জায়গাটিকে 'ঈশ্বরের রাগের সৃষ্ঠ জায়গা' হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ, বুশম্যানরা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম পরিবেশে সফলতার সাথে টিকে আছে।
মধ্যযুগে এই সৈকতটি পর্তুগিজ নাবিকদের কাছে 'নরকের দরজা' হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পুরো ইউরোপ জুড়ে নাবিকদের কাছে এই সৈকত ছিল এক মৃত্যু ফাঁদের নাম। তবে যন্ত্রচালিত জাহাজ আর আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের ফলে এখানে দুর্ঘটনা আর হয় না বললেই চলে। কিন্তু, তীরে জাহাজের ধ্বংসাবশেষগুলো আজও বিভীষিকাময় ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
No comments:
Post a Comment