রাশিয়ার নৃশংস শাসক স্টালিনের শেষ পরিণতি - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 24 July 2023

রাশিয়ার নৃশংস শাসক স্টালিনের শেষ পরিণতি

 


রাশিয়ার নৃশংস শাসক স্টালিনের শেষ পরিণতি


প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৪জুলাই: রাশিয়ার ইতিহাসে তার মত নির্মম এবং নৃশংস শাসক আর ছিল না। তিনি প্রায় দু কোটি মানুষকে খুন করেছিলেন এর থেকে বাদ যায়নি তার নিজে পরিবারের সদস্যরাও। তিনি হিটলারকে জীবন্ত ধরতে চেয়েছিলেন তবে তিনি নিজে কিন্তু কোন দিক থেকে হিটলার থেকে কম ছিলেন না। তবে এই ব্যক্তিকে নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে, কারও কাছে তিনি একজন হিংস্র স্বৈরাচারী শাসক আবার কারও কাছে তিনি একজন হিরো, এমনকি তিনি একবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীতও হয়েছিলেন। আর আপনি জানলে অবাক হবেন তার দেখানো পথে চলেই আজ রাশিয়া এত শক্তিশালী হয়েছে এই ব্যক্তির নাম জোসেফ স্টালিন। ছোটবেলায় তিনি নিজের বাবার হিংসতা শিকার হয়েছিলেন তখন তিনি ভেবেছিলেন বড় হয়ে তিনি চার্চের পাদ্রী হবেন, মানুষের মধ্যে ছড়াবেন ধর্মের কথা ও শান্তির কথা। কিন্তু হয়েছিল ঠিক তারা উল্টোটা এবার প্রশ্ন হলো কিভাবে স্টালিন একজন শান্ত স্বভাবের নিরীহ এবং গরিব থেকে একজন হিংস্র স্বৈরাচারী শাসক হয়ে উঠেছিলেন, কেন তাকে একজন মানুষ হিরো এবং আর একজন মানুষ ভিলেনের চোখে দেখতেন, আর কি হয়েছিল তার শেষ পরিণতি। তিনি ১৮৭৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর জর্জিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমান জর্জিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে সময় জর্জিয়া ছিল রাশিয়ার রাজত্বের একটি অংশ আর রাশিয়া তখন আজকের মতন ছিল না তখন রাশিয়াতে রাজতন্ত্র চলতো। তার আসল নাম জোসেফ বেসারিওনি জুগাসভিলি। স্টালিনের জন্মের আগে তার তিন ভাই বোন গর্ভে থাকাকালীন মারা যায়।


 স্টালিনের বাবা ছিলেন একজন মুচি এবং একজন মাতাল লোক ছিলেন এবং তিনি তার আয় করা বেশিরভাগ টাকাই মধ্যপান করে শেষ করে দিতেন ফলে তাদের পরিবারে আর্থিক সমস্যা ছিল। স্টালিনের বাবা তার ওপর অমানবিক অত্যাচার করতেন, ছোটখাটো ভুলের জন্য তার বাবা তাকে বেধারক মারধর করতেন এমনকি একবার এই মারের জন্য স্টালিনের কনুই ভেঙ্গে যায় আর এই কনুইয়ের সমস্যা তার সারা জীবন ছিল। তার বাবার এই অত্যাচারের জন্য স্টালিন দিন দিন কঠর হতে শুরু করেন। এক প্রকার এই অত্যাচারে খারাপ প্রভাব তার জীবনে আসতে থাকে কেবল স্টালিন নয় তার মাকেও এই অত্যাচারের শিকার হতে হতো তবে মা স্টালিনকে খুব ভালোবাসতেন। ছেলের ওপর এই অত্যাচার দেখে তিনি তার আত্মীয়র বাড়িতে চলে যান। 


১৮৮৮ সালে তিনি স্টালিনকে একটি খ্রিস্টান স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সে সময় খরচা চালানোর জন্য স্টালিন এর মা লোকের বাড়িতে কাজ করতেন। তিনি চেয়েছিলেন স্টালিন বড় হয়ে চার্চের পাদ্রী হোক কিন্তু চার্চেও তাকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল ফলে স্টালিন আরো দিন দিন কঠোর হতে লাগলো। তার মন থেকে ভয় নামক শব্দটির উধাও হয়ে যায় তবে স্টাইলিং পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিলেন তিনি দিনে প্রায় ৫০০ টি পেজ পড়ে ফেলতেন চার্চে থাকাকালীন স্টালিন লুকিয়ে লুকিয়ে কার্ল মার্কসের বই পড়তেন এবং কমিউনিস্ট চিন্তাধারা প্রতি তার ঝোঁক বাড়তে থাকে যেহেতু কমিউনিস্টরা কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না তাই তিনি নিজেকে কমিউনিস্ট প্রমাণ করতে কয়েক বছর পর চার্চে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। ১৯০১ সালে তিনি রাশিয়ার একটি রাজনৈতিক দলে যোগদান করেন সে সময় রাখি ছিল রাজতন্ত্র তবে প্রজাদের যে প্রতি রাজার যে দায়বদ্ধ ছিল রাজা সেগুলি পালন করতেন না ফলে দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বিপ্লব শুরু হয়।



স্কুল ছাড়ার পর, স্ট্যালিন শ্রমিকদের বিক্ষোভ এবং ধর্মঘটে অংশ নিয়ে গোপনে রাজনৈতিক আন্দোলনকারী হয়ে ওঠেন। তিনি মার্কসবাদী সামাজিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শাখা বলশেভিকদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন ভ্লাদিমির লেনিন। স্ট্যালিন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছিলেন।


১৯০২-১৯১৩ সালের মধ্যে তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করা হয় এবং সাইবেরিয়ায় কারাবাস ও নির্বাসনের শিকার হতে হয়। ১৯০৬ সালে, স্ট্যালিন একাতেরিনা কাটো সানিডিজকে বিয়ে করেছিলেন। এই দম্পতির একটি পুত্র সন্তান ছিল নাম ইয়াকভ, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে বন্দি অবস্থায় মারা যান।


একাতেরিনা জ্বরে মারা যাওয়ার পর, ১৯১৮ সালে, স্টালিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী, নাদেজহদা নাদিয়া অলিলুয়েভা নামক একজন রাশিয়ান বিপ্লবীর মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের দুটি সন্তান ছিল, একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে তার একমাত্র মেয়ে, স্বেতলানা আলিলুয়েভা। কিন্তু নাদেজহদা ত্রিশের দশকের প্রথম দিকে আত্মহত্যা করেছিলেন। স্ট্যালিন বিবাহের বাইরেও বেশ কয়েকটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।


১৯১২ সালে, লেনিন সুইজারল্যান্ডে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় জোসেফ স্ট্যালিনকে বলশেভিক পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়।। তিন বছর পরে, ১৯১৭ সালের নভেম্বরে, বলশেভিকরা রাশিয়ায় ক্ষমতা দখল করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং লেনিন ছিলেন নবগঠিত সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের প্রথম নেতা। ১৯২২ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হন।



ক্ষমতা গ্রহণের পর, জোসেফ স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি কৃষক সমাজ থেকে একটি শিল্প শক্তিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার একটি সিরিজ চালু করেছিলেন। তার উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল অর্থনীতিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে এবং সোভিয়েত কৃষির জোরপূর্বক যৌথ মালিকানাকরণ, যেখানে সরকার খামারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। কিন্তু লক্ষ লক্ষ কৃষক স্ট্যালিনের এমন পরিকল্পনার আদেশ অস্বীকার করে। ফলস্বরুফ, অসংখ্য কৃষককে শাস্তি হিসেবে গুলি করে বা নির্বাসিত করা হয়। স্ট্যালিন জোরপূর্বক যৌথ মালিকানাকরণের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।


স্ট্যালিন বিরোধি শক্তি দমনে গোপন পুলিশের ক্ষমতা সম্প্রসারিত করেছিলেন। নাগরিকদের একে অপরের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে উৎসাহিত করেছিলেন এবং তিনি লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিলেন বা বাধ্যতামূলক শ্রম শিবিরের পাঠিয়েছিলেন। ১৯৩০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে, পরিকল্পিত প্রচারাভিযানের জন্য স্ট্যালিন গ্রেট পার্জ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।


১৯৩৯ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে, জোসেফ স্ট্যালিন এবং জার্মান স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলার জার্মান-সোভিয়েত ননঅগ্রেশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। স্ট্যালিন তারপর পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ার অংশ, পাশাপাশি এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার বাল্টিক রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করেন। কিন্তু ১৯৪১ সালের জুন মাসে, জার্মানি নাৎসি-সোভিয়েত চুক্তি ভেঙে দেয় এবং সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র আক্রমণ করে বসে (স্ট্যালিন এরুপ সম্ভাব্য আক্রমণের বিষয়ে আমেরিকান, ব্রিটিশ এবং তার নিজের গোয়েন্দা এজেন্টদের সতর্কতা উপেক্ষা করেছিলেন এবং সোভিয়েতরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল না।)


জার্মান সৈন্যরা সোভিয়েত রাজধানী মস্কোর কাছে আসার সাথে সাথে স্ট্যালিন সেখানেই থেকে গেলেন এবং একটি প্রতিরক্ষামূলক নীতি নির্দেশ করলেন। ১৯৪২ সালের আগস্ট থেকে ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধের লাল বাহিনী জার্মানদের পরাজিত করে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের রাশিয়া থেকে তাড়িয়ে দেয়।


যুদ্ধের অগ্রগতির সাথে সাথে, স্ট্যালিন তেহরান (১৯৪৩) এবং ইয়াল্টা (১৯৪৫) সহ বড় মিত্র সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার কঠিন ইচ্ছা এবং নিপুণ রাজনৈতিক দক্ষতা তাকে অনুগত মিত্রের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম করে।


জোসেফ স্ট্যালিন বয়সের সাথে পরিপক্ষ হননি। তিনি সন্ত্রাস, নির্মমতা, মৃত্যুদণ্ড, শ্রম শিবিরে নির্বাসন এবং যুদ্ধোত্তর সোভিয়ে ইউনিয়নে নিপীড়নের বিচার করেছিলেন, সমস্ত বিরোধমত এবং বিদেশী -বিশেষত পশ্চিমা প্রভাবের দ্বারা কিছু লোককে দমন করেছিলেন। তিনি পূর্ব ইউরোপ জুড়ে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৪৯ সালে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে সোভিয়েতদের পারমাণবিক যুগে নিয়ে যান। ১৯৫০ সালে, তিনি উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট নেতা কিম ইল সুং কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণের অনুমতি দিয়েছিলেন, যা কোরিয়ান যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল।



স্ট্যালিন ব্রেইন স্ট্রোক করার পর, ৫ মার্চ, ১৯৫৩ সালে, ৭৪ বছর বয়সে মারা যান। তার মারা যাওয়ার পর তাকে লক্ষ লক্ষ বেশি মানুষ দেখতে এসেছিলেন কথায় বলা যায় সেই ভিড়ে প্রায় ১০০ জন মানুষ এক নিমিষে চাপা পড়ে মারা যেতে পারেন। যারা এসেছিলেন তারা স্টালিনকে তাদের নিজের আইডল মনে করতেন এবং সবার চোখে জল ছিল।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad