হাজার বছর আগে কেমন মাংস খেত বাঙালি? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday 22 July 2023

হাজার বছর আগে কেমন মাংস খেত বাঙালি?


হাজার বছর আগে কেমন মাংস খেত বাঙালি?




প্রেসকার্ড নিউজ লাইফস্টাইল ডেস্ক, ২২ জুলাই: পাঠা বা খাসির মাংস খেতে কে না ভালোবাসেন! ঝোল, কষা, কোরমা ইত্যাদি নানা রকম রেসিপি কম-বেশী সবারই জানা। কিন্তু তেজপাতা, ধনে, আর দারুচিনি দিয়ে বুড়ো খাসির চর্বি ভাজা খেয়েছেন? নাক শিটকাচ্ছেন কেন? আরে চাঁদসদাগরের ছেলের বিয়েতে এটাই ছিল অন্যতম স্টার আইটেম। সে কথাই দ্বিজবংশী দাস জানাচ্ছেন ৫০০ বছর আগে লেখা তাঁর মনসামঙ্গল কাব্যে। আদ্যিকালের বাঙালি এই খেত মশাই! আর যা খেত তা শুনে আপনার চোখ কপালে উঠবে। আপাতত চোখ স্থির রাখুন আর ছোট করে বরং জেনে নিন বাঙালির মাংস খাওয়ার গল্প। 


আজ থেকে ৫০০ বা ১০০০ বছর আগে বাঙালি কী কী মাংস খেত, কীভাবে খেত? ছোটবেলা থেকেই ইতিহাসে আদিম মানুষের পশু শিকার, কাঁচা মাংস খাওয়া, আগুন আবিষ্কারের পর ঝলসেটা কাবাব বানানো এসব গল্প আমরা অনেক শুনেছি। তাই আজ আপনারা যদি ভেগান হনও, সর্বভূক মানুষ কিন্তু শুরু থেকেই মাংসাশী, যা পেয়েছে, হজম করতে পেরেছে, মানুষ তাই খেয়েছে। হাজার হাজার বছরকার আগের কথা ছাড়ুন এই ৫০০ বছর থেকে ১০০০ বছর আগেও বাঙালির খাদ্য তালিকায় শামুক, বক, সারস, গরু, শুকর, সজারু সবই ছিল। কালে কালে বিধি নিষেধ এসেছে। ব্রাহ্মণ্য, স্মৃতিশাস্ত্র কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছে, কিছু আরোপিত হয়েছে কোরানের অনুশাসনে । তবে তার প্রভাব সমাজের নীচের তলায় কখনই খুব একটা পড়েনি।


শোনা যায় হরিণের মাংস নাকি খুব সুস্বাদু। শুরু থেকেই সমাজের অভিজাত স্তরের এবং শবর কুলিন্দ ইত্যাদির শিকারজীবি মানুষের মধ্যে হরিণের মাংসের একটা আলাদাই ক্সেজ ছিল। ঝালে-ঝোলে, রসায় প্রাচীন সাহিত্যে হরিণের মাংসের কত যে নাম, কত যে প্রসংশা আপনি গুনে শেষ করতে পারবেন না। এই যেমন বাঙালির প্রাচীনতম সাহিত্যিক নিদর্শন চর্যাপদ সেখানে হরিণ শিকারের কথা বার বার আসছে। 


কবি বলেছেন, 'আপনা মাংসে হরিণা বইরি', অর্থাৎ হরিণ তার চমৎকার মাংসের জন্য নিজেই নিজের শত্রু। তবে হরিণের পাশাপাশি ছাগলের মাংস কিন্তু সমাজের সর্বস্তরের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল। খাসি করার পদ্ধতি বা খাসির মাংসের কথা প্রাচীন বাংলায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে দেড়শ বছর আগে কবি ঈশ্বর গুপ্ত ছাগলেরই জয় গান গেয়েছেন। "রসভর রসময় রসের ছাগল। তোমার কারণে আমি হয়েছি পাগল।"


বাঙালির মাংস খাওয়ার টুকরো টুকরো ছবি ছড়িয়ে আছে নানা কাব্যে। যেমন - মধ্যযুগে চণ্ডী মঙ্গল কাব্যে দেখা যায় ব্যাধ কালকেতুর পেশা ছিল শিকার করে সেই মাংস হাটে বিক্রি করা। তাকে আমরা গো সাপ ধরে আনতেও দেখি। তার মানে বাঙালি তখনও গোসাপও খেত। কচ্ছপ, খরগোস, সজারু ইত্যাদিও ছিল তার খাদ্য তালিকায়। তাহলে এগুলো থেকে আমরা সরে এলাম কেন? তাই ভাবছেন তো? ওই যে, এখানে ব্রাহ্মণ্য, স্মৃতিশাস্ত্র শাসিত একটা সমাজের একটা ভূমিকা রয়েছে। 


ব্রাহ্মণ্য তন্ত্রের মধ্যে থেকে প্রতিবাদ স্বরূপ বেরিয়ে এসেছিল বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম। তাদের অন্যতম মূল কথা ছিল অহিংসা। জৈন তীর্থংকর মহাবীর বাংলা থেকে ঘুরে গিয়ে বাঙালির অখাদ্য-কুখাদ্য খাওয়া নিয়ে যে নিন্দা-মন্দ করেছিলেন, তা তো বাঙালির এই যা পাই, তাই খাই স্বভাবের জন্যই।বেচারা মহাবীর জীর বাংলায় ঠিক মত খাওয়ারও জোটে নি। অর্ধাহার অনাহারে দিন কাটাতে হয়েছে। 


যাইহোক কালক্রমে ব্রাহ্মণ্যবাদের মধ্যেও এই অহিংসা সূত্রেই মাংস খাওয়ার একটি অ্যান্টিপ্রবণতা তৈরি হয়, তৈরি হয় বিভিন্ন অনুশাসন। তবে আর্যাবর্তে সেসব কঠোর অনুশাসন বাংলায় খুব একটা ধোপে টেকেনি। এই যেমন ভবদেব ভট্ট আজ থেকে ৯০০ বছর আগে ইনি ছিলেন আমাদের বাংলা থেকে প্রথম স্মৃতিশাস্ত্রকার মানে সোজা কথায় ধর্ম শাস্ত্রের ব্যাখ্যাকার ও রচয়িতা। তিনিও কিন্তু মাংসাহারকে বাদ দিতে পারেননি। কারণ মাংস প্রিয় বাঙালিকে যদি মাংস খাওয়ার কথা ছাড়তে বলা হয়, বাঙালি হয়তো সেই শাস্ত্রকেই ঝেড়ে ফেলতো। তাই তিনি কিছু বার, তিথি ইত্যাদিতে মাংস খাওয়ার বিধি নিষেধের কথা বলা বললেন। কাঁকড়া, শুকর, বক, হাঁস, গরু, উট ইত্যাদির কিছু প্রাণীর মাংস খাওয়ার ব্যাপারেও ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা চাপল। 


ব্রাহ্মণ্য প্রথা অনুসারে উচ্চ বর্ণ সমাজ যখন ধীরে ধীরে সেগুলো মেনে নিল সমাজের বাকি স্তরেও তার প্রভাব পড়ল। কারণ আমাদের স্বভাবই এই যে, আমরা যাদের নিজেদের থেকে শ্রেয় মনে করি তাদের অনুসরণ বা অনুকরণ করার চেষ্টা করি। কালের নিয়মে মানুষের রুচি যেমন বদলালো, ধীরে ধীরে বদল এল বাঙালির রান্নাতেও। বাঙালির রান্না আদতে যে খুব সাদামাটা তা কিন্তু একেবারেই নয়। বাঙালির বিভিন্ন প্রাচীন সাহিত্যে খাবারের যে বহর এবং রান্নার যে ঘটা দেখা যায় তা দেখেই বোঝা যায় আজ ভোজনবিলাসী বাঙালির খাওয়ার নিয়ে ফ্যান্টাসি কত দূর ছিল। 


আদ্যি কালের পুরুষ কবিরা শুধু মাত্র পদের নাম উল্লেখ করেই কিন্তু খান্ত হননি। তারা রেসিপি শুদ্ধ উল্লেখ করেছেন। সে ভালোই করেছেন তা এই আলোচনায় নারকেল দিয়ে পাঠার মাংসের ঝাল, কলার মূল দিয়ে পাঠার মাংসের রেসিপির কথা উল্লেখ তো অন্তত করতে পারছি। কি ট্রাই করবেন নাকি আজ থেকে ৫০০ বা ১০০০ বছর আগের এই রকম কোনও রেসিপি? কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানান আপনার-আপনাদের মতামত।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad