আগামী ১০ বছরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে যেসব প্রাণী
প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১০ আগস্ট: সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে আমরা আমাদের এই পৃথিবীকে কি থেকে কি বানিয়ে দিয়েছি। নির্লজ্জের মত জঙ্গলের গাছ কাটার থেকে শুরু করে, সমুদ্রের জলে ময়লা ফেলা পর্যন্ত সবকিছুতেই আমাদের মানে, মানুষের ভূমিকাই সবার আগে। যেই পৃথিবীকে আমরা আমাদের বাসস্থান বলি, সেই পৃথিবীকেই আমরা দূষিত করতে শুরু করে দিয়েছি, যার ফলে মানুষ থেকে শুরু করে জীবজন্তু পর্যন্ত সবাই খুব ক্ষতিগ্ৰস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছু জীবজন্তু আজ প্রায় বিলুপ্তের পথে। এমনও হতে পারে তারা আজ পৃথিবীতে তাদের শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছে। এমন কয়েকটি জীবজন্তুদের নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন, যাদের আগামী দশ বছর পর আর দেখা নাও যেতে পারে। যেমন-
সাইগা অ্যাল্টেলোপ: বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার খুব কাছে থাকা এই হরিণগুলো মঙ্গোলিয়া ও এর আশেপাশের এলাকায় দেখা যায়। এরা এদের অদ্ভুত নাকের জন্য পরিচিত। এই প্রজাতির হরিণগুলোকে পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির স্থানে রাখা হয়েছে, যেগুলো খুব জোর গতিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সাইগা এমন একটি হরিণ, যেগুলো একটা সময় লাখ লাখ দলে ইউরেশিয়ার জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিকারের কারণে আজ এরা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার অনেক কাছাকাছি। সাইগা- এর নাকের জন্য বেশি পরিচিত। এদের নাক কিছুটা লম্বা ও বোঁচা হয়ে থাকে যেটা অন্য সব হরিণ থেকে এদের আলাদা করে রেখেছে। চীনে কবিরাজি চিকিৎসায় এদের শিং ব্যবহার করা হয়। আর এই কারণেই এদের শিকার হয়ে থাকে। ১৮ শতাব্দীর শেষের দিকে রোমানিয়া আর বেলজিয়ামের এই প্রাণীগুলোকে প্রচুর পরিমাণে শিকার করা হয়েছিল। আর গত ১৫ বছরে এদের সংখ্যা মাত্র ৫৫ টি রেকর্ড করা হয়েছে। যেটা এই প্রাণীগুলোকে বিলুপ্তপ্রায় শ্রেণীতে রেখেছে।
ফিলিপিন ঈগল: একে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও বড় ঈগল বলা হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই প্রাণীগুলি এখন খুবই দুর্লভ। এ গ্রেট ফিলিপিন ঈগলদের জন্য জঙ্গলই তাদের একমাত্র ঘর। এদের জন্য জঙ্গল এমন একটি জায়গা, যেখানে এরা এদের বাচ্চার জন্ম দেয়, খাবার দেয় এবং এখানেই এদের বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অতিমাত্রায় জঙ্গল থেকে গাছ কেটে ফেলার কারণে, এদের সংখ্যা এখন হাতে গোনা। আইন কানুন ব্যবস্থা থাকার পরেও এই দুর্লভ পাখি শিকারিদের হাতে শিকার হয়েই যায়। পুরো পৃথিবীতে এখন এদের হাতে গোনা মাত্রই ৪০০ জোড়া বেঁচে আছে।
ফায়ার ফ্লাইস: ফায়ার ফ্লাইস মানে জোনাকি। একটা জিনিস খেয়াল করেছেন কি, ৯০ এর দশক পর্যন্ত রাতের বেলায় ঝোপঝাড়ে অনেক জোনাকি পোকা দেখা যেত, এমনকি শহরেও। আর এখন শহর তো দূরের কথা, গ্রামেও কোনও জোনাকি পোকা দেখা যায় না। সময়ের সাথে সাথে এই পোকাগুলো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ আর অধিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এই প্রাণীগুলো আস্তে আস্তে বিলুপ্তের পথে। অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এই জোনাকি থেকে শুরু করে অন্যান্য আরও পরিবেশ বান্ধব পোকাগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্তের পথে। এমনও হতে পারে আগামী ৮ থেকে ১০ বছর পরে এই জোনাকি পোকাগুলো আমাদের কাছে রূপকথার গল্পই হয়ে থাকবে।
প্রবসিস মাঙ্কি: এই বানরগুলোকে লম্বা নাক আর শুঁড়ওয়ালা বানরও বলা হয়ে থাকে। এই বানরগুলো মধ্যম আকারের হয়ে থাকে, যেগুলো রেইন ফরেস্টে দেখা যায়। এই বানরগুলোর আকার ৫৩ সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে ৮৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এর ওজন ৭ কেজি থেকে শুরু করে ২২ কেজির মধ্যে থাকে। এরা গাছের উপর ২৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতিতে দৌড়াতে পারে। এদের লম্বা নাক খুবই অদ্ভুত প্রকৃতির হয়ে থাকে আর মোটা পেট অন্য সব বানরদের থেকে আলাদা স্থানে রেখেছে। আজ পৃথিবীতে এদের মাত্র দুটি প্রজাতিই বেঁচে আছে, যেগুলো বর্ণিয়ার রেইন ফরেস্টে দেখা যায়। আজ এদের থাকার জায়গার অভাব। মানুষের শিকারের ফলে আজ পৃথিবীতে মাত্র ৭০০০ প্রবসিস মাঙ্কি বেঁচে আছে।
পায়েড টামারিন: ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গলে পাওয়া যাওয়া, এটি একটি দুর্লভ প্রজাতির বানর। এটি পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে এই প্রাণীগুলো বেঁচে আছে। দ্রুত গতিতে শহরীকরণের ফলে এই প্রাণীগুলো আজ বিলুপ্তের পথে। এই বানরগুলো আনুমানিক ২০ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে আর এদের আয়ু ২০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই বানরগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন আর জঙ্গল ধ্বংসের কারণে আজ বিলুপ্তির অনেক নিকটে।
এই পৃথিবীতে মানুষের সাথে সাথে লক্ষ-কোটি প্রজাতির জীবজন্তু বাস করে। কিন্তু কথা শুধু মানুষের সম্পর্কে হয়ে থাকে। এসব জন্তুগুলোকে হয়ত বা সব আমরা বাঁচাতে পারব না কিন্তু, চেষ্টা কিন্তু অবশ্যই করতে পারি।
No comments:
Post a Comment