হঠাৎ বুকে ব্যথা! অ্যাসিডিটি ভেবে ভুল করবেন না
প্রেসকার্ড নিউজ লাইফস্টাইল ডেস্ক, ০৯আগস্ট: আমরা প্রত্যেকেই কখনো না কখনো বুকে ব্যথা অনুভব করে থাকি। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বুকের ব্যথাকে অ্যাসিডিটির সমস্যা মনে করে আমার অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিশ্চিন্ত হই। কিন্তু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বুকের ব্যথার সহজ প্রতিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে আমাদের ধারণা না থাকায় হার্ট অ্যাটাকের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হয় অনেককেই।
আপনার বুকে যদি কখনো ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে প্রথমে এর কারণ শনাক্ত করতে হবে। হ্যাঁ, কারণ বুকে ব্যথা হওয়ার অসংখ্য কারণ রয়েছে। আর একেক ক্ষেত্রে একেক ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। যত দিন যাচ্ছে ততই আমাদের শারীরিক জটিলতাও বাড়ছে। বিশেষত হৃদরোগের ঝুঁকি বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
তাই যদি কখনো বুকে ব্যথা হয় তাহলে তা অ্যাসিডিটির সমস্যা না ভেবে একটু সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। সেলফ মেডিকেশনের চর্চা আমাদের দেশে একটু বেশি। বিশেষত কিছু শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে আমাদের গৎবাঁধা কিছু ধারণাও রয়েছে। বুকের ব্যথার ক্ষেত্রেও এমন একটি ধারণা রয়েছে। প্রথমেই বলেছি, অনেকে মনে করেন অ্যাসিডিটির সমস্যার কারণে বুকে ব্যথা হয়। মূলত অ্যাসিডিটির কারণে বুকে প্রদাহজনিত সমস্যা হতে পারে–এমন ধারণা অমূলক নয়। কিন্তু বুকে যদি চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে অবহেলা করা যাবে না।
বুকে ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু বুকে ব্যথার ফলাফল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়। কদিন আগে বিশ্ব হৃৎপিণ্ড দিবসে বলা হয়েছিল যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন আমাদের শরীরে ব্যাপক স্ট্রেস ফেলে বলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া, শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ কমে যাওয়া এবং ইত্যাদি জটিলতা দেখা দেয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
বুকে ব্যথা থেকে হার্ট অ্যাটাকে নিকট অতীতেই গায়ক কেকে মারা গিয়েছিলেন। বুকের ব্যথাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। অথচ সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে এই ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব হয়।তাই যখনই বুকের ব্যথা অস্বাভাবিক মনে হবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। যদি আপনি দেরি করেন তাহলে এর ফলাফল আপনাকেই ভুগতে হতে পারে।
বুকে ব্যথার কারণ
বুকে ব্যথার কিছু কিছু কারণ সরাসরি হৃদরোগের ঝুঁকিকে নির্দেশ করে। কি সেসব কারণ? আসুন জেনে নেই-
মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন: হার্টে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
মায়োকার্ডাইটিস: হৃদযন্ত্রের পেশিতে প্রদাহ হয়।
পেরিকার্ডাইটিস: হার্টের থলিতে প্রদাহজনিত ব্যথা তীব্র।
করোনারি আর্টারি ডিজিজ: একে এনজাইনাও বলা হয়। হৃদপিণ্ডে রক্তনালীর ব্লকেজের কারণে এমন হয়।
মাইট্রাল ভালভ প্রল্যাপস: হৃদপিণ্ডে অবস্থিত মাইট্রাল ভালভ সঠিকভাবে বন্ধ হয় না।
এও সত্য, বুকে ব্যথা হওয়া মানেই হৃদরোগ নয়। প্রথমেই বলেছি, বুকে ব্যথার একাধিক কারণ রয়েছে। আর চিকিৎসকরা দেখেছেন, বুকে ব্যথা মানেই হৃদরোগ নয়। এজন্য যখনই বুকে ব্যথা হয় তখন আপনার শরীরে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে একটি অনুমান করতে হবে। তারপর চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তা খোলাখুলি বলতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক হৃদরোগ বাদেও যেসব কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে:
অ্যাসিডিটি হলে: প্রচুর তেল ও মশলাজাতীয় খাবার কিংবা ভাজাভুজি খাওয়ার পর সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়ে থাকে। তখন বুকে প্রদাহজনিত ব্যথা বা বুকে জ্বলুনি হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যথা সচরাচর কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বুকে জ্বলুনি ও যদি ঢেঁকুর উঠে তাহলে অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ সেবন করুন।
খাদ্যনালীর সমস্যা: অনেকের খাদ্যনালীর মধ্যে কিছু সমস্যা থাকে। বিশেষত খাবার খাওয়ার সময় গিলতে অসুবিধা হয় এবং বুকে ব্যথা করে। এ ধরনের সমস্যায় নাইট্রোগ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ মুখে দিলে সুস্থ হওয়া যায়।
ভয় পেলে বা দুশ্চিন্তা: যাদের প্যানিক ডিসর্ডার রয়েছে তাদেরও বুক ধড়ফড় ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ বিষয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে যারা হতাশা কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাদের এই সমস্যায় নিয়মিত ভুগতে হয়। এর বিরূপ প্রভাব মনেও পড়ে।
বুকের অন্যান্য সমস্যা: বুকে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। আপনার ফুসফুসে সংক্রমণ হলে বুকে ব্যথা হয়। বিশেষত বর্ষায় যখন ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বাড়তে শুরু করে তখন অনেকেরই বুকে ব্যথা হয়। এছাড়া বুকের মাংসপেশির বা পাঁজরের হাড়ের কোনো সমস্যা, বুকে আঘাত পাওয়া, কোনো ব্যথার ওষুধ খেলে বুকে ব্যথা হতে পারে।
বুকে ব্যথার লক্ষণ:
বুকে ব্যথার কারণগুলো তো বলা হলো। হৃদরোগ ছাড়া যেসব কারণে বুকে ব্যথা হয় সেগুলো যদি আপনার থাকে তাহলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারেন। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন বুকের ব্যথা থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। সেজন্য বুকে ব্যথার কিছু লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য ঠান্ডা মাথায় খেয়াল করতে হবে এবং দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এবার তাহলে বুকে ব্যথার লক্ষণগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক:
বুকে আচমকা টান বা ভয়াবহ চাপ অনুভব করছেন। ব্যথা আপনাকে প্রায় কাবু করে ফেলে।
বুকে ব্যথার ধরনটা আপনাকে বুঝতে হবে। বুকে জ্বলুনি হচ্ছে, নাকি প্রচণ্ড ব্যথা করছে, চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে নাকি হাঁসফাঁস করছেন নিঃশ্বাস নিতে। বুকে জ্বলুনি বাদে প্রচণ্ড ব্যথা, চিনচিনে ব্যথা এবং নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলেই হাসপাতালের পথে রওয়ানা দিন।
ব্রেস্টবোন এলাকায় এক ধরনের চাপা অনুভূতি না চিনচিনে ব্যথা হয়। কিন্তু হাত বুলালে মনে হয় ব্যথাটা ঠিক ওখানে নয়।
বুকের ব্যথা প্রথমে হাত, তারপর চোয়াল এবং অবশেষে পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।
বুকে ব্যথার পাশাপাশি মাথা ঘোরায়। ভীষণ দুর্বল লাগে তখন নিজেকে।
হার্টরেট বা রক্তচাপ কমতে শুরু করে। অনেক সময় আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন না। আশপাশের কাউকে ডেকে পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।
এসময় কাশি বা জোরে শ্বাস নেয়ার সময় ব্যথাটা পিঠে চাপ দেয়।
মুখে টক স্বাদ চলে আসে।
প্রচণ্ড ক্লান্তি কাজ করে। মনে হয়না আর হাঁটার ক্ষমতা আছে আপনার।
এই কয়েকটি লক্ষণ দেখলেই বুঝবেন আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রয়েছে। যদি এসব লক্ষণের কোনো একটি দেখতে পান দ্রুত হাসপাতালে চলে যান। অবহেলা করবেন না।
No comments:
Post a Comment