মুখোশ মানব: প্রতিপক্ষকে কাবু করার অনন্য কৌশল
প্রেসকার্ড নিউজ লাইফস্টাইল ডেস্ক, ১০ আগস্ট: পাপুয়া নিউ গিনি পৃথিবীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক পুণ্যভূমি। এই একটি দ্বীপেই ৩১২টি গোত্রের বসবাস যাদের প্রত্যেকের ঐতিহ্য সংস্কৃতি স্বতন্ত্র। সাংস্কৃতিক ঘনবসতি দরুন, এখানে গোত্রীয় হানাহানি নিত্যদিনের ঘটনা। কারণ প্রতিটি গোত্রই চায় নিজেদের প্রাধান্য বজায় রেখে বেশি সম্পদশালী হতে। হানাহানির এই অঞ্চলের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস।
প্রতিপক্ষকে রুখে দিতে এখানকার মানুষেরা তীর-ধনুক, বল্লমসহ অনেক অস্ত্র আবিষ্কার করেছে। কিন্তু, একটি গোত্রের আত্মরক্ষার অস্ত্র সবচেয়ে বেশি বুদ্ধি দীপ্ত। আসারো মাডম্যান; মুখোশ মানব! প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে এরা তৈরি করেছে কাদার মুখোশ। এই মুখোশ পড়ে এবং গায়ে কাদা মেখে যখন এরা ধীরগতিতে এগিয়ে যায়, শত্রুপক্ষ ভূত ভেবে দৌড়ে পালায়। কোনও প্রকার রক্তপাত ছাড়াই এদের অনেক যুদ্ধজয়ের ইতিহাস রয়েছে। কারণ, এ অঞ্চলের গোত্রগুলো বিশ্বাস করে জঙ্গলে খারাপ আত্মাদের আনাগোনা রয়েছে এবং প্রতিটি গোত্রই এই খারাপ আত্মাদের সর্বোচ্চ ভয়ের চোখে দেখে।
প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে এরা নিজেদের এলাকার বিভিন্ন অংশে এই সাজে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে সম্ভাব্য কোনও আক্রমণকারী থাকলেও ভয়ে দূরে পালিয়ে যায়। এভাবেই এরা শত শত বছর ধরে নিজেদের জীবন এবং সম্পদ রক্ষা করে এসেছে।
লিখিত কোনও ইতিহাস না থাকায় এই কাদামাটির মুখোশের সূত্রপাত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। কথিত আছে, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে এক আসারোর পরিধান করার মতো ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিল না। ফলে, তিনি একটি কাদামাটির মুখোশ বানিয়ে বিয়েতে যোগদান করেন। কিন্তু, তার যোগদানের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে বাড়ি জনশূন্য হয়ে যায়। ভূত ভেবে সবাই দিক-বিদিক ছুটতে থাকেন। পরে ভুল ভাঙলে এই মুখোশকেই এরা আত্মরক্ষার চূড়ান্ত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
আসারোদের রক্তপাত বিহীন এই দ্বন্দ্ব মীমাংসার প্রচেষ্টা এখনও অনেক জাতির জন্য শিক্ষনীয়। রক্তপাত নয়, দ্বন্দ্বের মীমাংসা হোক সংঘাত বিহীন, শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায়।
No comments:
Post a Comment