নিখোঁজ তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধার
নিজস্ব সংবাদদাতা পূর্ব মেদিনীপুর, ২৩ আগস্ট: নিখোঁজ তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধার, বুধবার সকালের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের চাঁপিতে। মৃত যুবকের নাম শেখ আহমেদ (৩৬)। তাঁর দেহটি গ্রামেরই একটি বাড়ির পেছনে পড়ে ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে মহিষাদল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। মৃত যুবক তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য এবং তার স্ত্রী স্থানীয় লক্ষ্যা ২ অঞ্চলে তৃণমূলের সদ্য বিদায়ী পঞ্চায়েতের সদস্যা ছিলেন। ঠিক কি কারণে ওই যুবকের মৃত্যু, তা নিয়েই দানা বেঁধেছে রহস্য।
মহিষাদল থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহটিকে ময়নাতদন্তে পাঠানোর পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে নেমে মৃত যুবকের এক সঙ্গী শেখ রবিকুলকে আটক করে আনা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই জানা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। মৃতের পরিবারে তাঁর বাবা, মা, স্ত্রী ও ৩ সন্তান বর্তমান। ঘটনার খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। কীভাবে এমন ঘটনা, তা নিয়ে তদন্তের দাবী জানিয়েছে গোটা পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকালে চাঁপি মধ্যপল্লী এলাকায় পুরানো রেশন দোকানের কাছে ওই যুবকের মোটর বাইকটি রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে বেশ খানিকটা দূরে একটি বাড়ির পেছনে তাঁকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃত যুবকের মুখ থেকে গাঁজলা বেরিয়ে আসছিল। ঘটনাটি জানাজানি হতেই এলাকার মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় জমান। খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করতে এলে ঘটনার তদন্তের দাবীতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসীরা। এরপরেই মহিষাদল থানা থেকে পুলিশের একটি দল গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং মৃত দেহটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় কুমার মণ্ডল জানান, “যে বাড়ির পেছনে মৃত দেহটি উদ্ধার হয়েছে সেখানে আমার বৃদ্ধ বাবা ও মা থাকেন। আজ সকালে মা ও বাবা বাড়ির পেছনে গিয়ে ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে আমরা ছুটে আসি”। তিনি জানান, মৃত যুবকের বাইকটি রাস্তার পাশে অস্বাভাবিক ভাবে পড়ে ছিল। বাইকে রক্তের সামান্য ছিটেও লেগে ছিল। তিনি বলেন, "কিন্তু বাইকের থেকে কীভাবে অতটা দূরে আমার বাড়ির পেছনে ওই যুবক পৌঁছাল তা নিয়েই সন্দেহ ছড়াচ্ছে। কি ভাবে এই ঘটনা তার প্রকৃত তদন্তের দাবী জানাচ্ছি।"
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থলে তদন্ত চালানোর সময় জানা যায় স্থানীয় যুবক শেখ রবিকুল গতকাল রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত আহমেদের সঙ্গে কাটিয়েছিল। কিন্তু তারপর কীভাবে এই মৃত্যু তা জানা নেই বলে রবিকুলের দাবী। এরপরেই পুলিশ রবিকুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।
মৃতের স্ত্রী মানোয়ারা বিবি জানান, “গতকাল বিকেল ৪টে নাগাদ বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বেরিয়েছিলেন আহমেদ। মহিষাদলের একটি দোকানে রাখা সোনার গহনা ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই টাকা নিয়ে যায়।" এরপর রাতে জানিয়েছিলেন দোকান থেকে গহনাগুলি বুধবার দেওয়া হবে। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ফোনে যোগাযোগ হলেও তারপর থেকে আহমেদের ফোন সুইচ অফ হয়ে যায়, বলে দাবী তাঁর স্ত্রীয়ের।
এদিন মৃতদেহ উদ্ধারের সময় আহমেদের পকেটে টাকা বা সোনার গহনা কিছুই ছিল না বলে খবর। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সম্প্রতি যুবকটি কিছুটা সঙ্গদোষেও পড়েছিলেন। তবে যেভাবে তাঁর মোটরবাইকটি রাস্তার পাশে পড়েছিল এবং আহমেদের মৃতদেহ অনেকটা দূরে একটি বাড়ির পেছনে উদ্ধার হল তা নিয়েই নানান সন্দেহ দানা বাঁধছে। মৃতের মুখে গাঁজলা দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান অতিরিক্ত নেশার কারণেও এমন হতে পারে। তবে ওই রাতে ঠিক কি ঘটেছিল এবং কীভাবেই বা যুবকের মৃত্যু হল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে মহিষাদল থানার পুলিশ জানিয়েছে।
No comments:
Post a Comment